ডায়েট, ব্যায়াম ও ওজন কমানো–বাড়ানো নিয়ে পাঠকদের নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ
প্রশ্ন: আমি একজন নারী। বয়স ৩২ বছর, উচ্চতা ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। ওজন ৭৭ কেজি। অনেক চেষ্টা করেও ওজন কমাতে পারছি না। অথচ আমি যে খুব বেশি খাই, তা–ও না। আমার আরেক বোন আছে, সে প্রতি বেলা দুই-তিন প্লেট ভাত খায়। নিয়মিত গরু–খাসির মাংস খায়। কিন্তু তার ওজন স্বাভাবিক। এত হিসাব করে খাওয়ার পরও কেন আমার ওজন বাড়ছে?
রূপন্তী, মাগুরা সদর
উত্তর: রুপন্তী, চমৎকার প্রশ্নটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মতো অনেকেরই ধারণা, শুধু খাবার খাওয়ার কারণে শরীরের ওজন বাড়ে। কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। তাই আগে জানতে হবে, কোন কোন কারণে শরীরের ওজন বাড়ে।
১. শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাওয়া।
২. ক্যালরি বেশি, এমন খাবার পরিমাণে কম খেলেও ওজন বাড়ে।
৩. খাবারের ধরনে আনুপাতিক অসমতা। যেমন কেউ হয়তো ভাতের (শর্করা) সঙ্গে আলু, আম, গুড় বা মিষ্টি ইত্যাদি একই রকম খাবার (অন্য একটা শর্করা) খেতে থাকল।
৪. রান্নায় অতিরিক্ত তেল, চর্বি ও মসলার ব্যবহার। এগুলো মানুষের ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়।
৫. নিয়মিত ডুবো তেল বা চর্বিতে ভাজা খাবার খেতে থাকলে।
৬. খুব বেশি ফাস্ট ফুড, দাওয়াত, রেস্তোরাঁর খাবার খেতে থাকলে।
৭. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দিনের অধিকাংশ সময় বসে বসে কাজ করলে বা শুয়েবসে থাকলে। ব্যায়াম না করলে (অর্থাৎ খাবারের পুরো ক্যালরি শরীরে জমে থাকতে দিলে)।
৮. কিছু কিছু শারীরিক অবস্থা, হরমোনের হেরফের, কিছু রোগের কারণেও ওজন বাড়ে।
৯. মেয়েদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ, ব্রেস্ট ফিডিং, পিসিও, হাইপোথাইরয়েডিজম, অনিয়মিত মাসিক ইত্যাদি সমস্যা থাকলে।
১০. মানসিক অবসাদে থাকলে।
১১. এমনকি শারীরিক গঠন, হজমক্ষমতা ও মেটাবলিজমের ওপর নির্ভর করেও ওজনের তারতম্য হতে পারে। তাই একই পরিবারে, একই রান্না খাবার খাওয়া সত্ত্বেও কারও ওজন বেশি, কারও কম হতে পারে।
অতএব শরীরের ওজন শুধু কোনো একটা কারণে বা একদিনে, হঠাৎ করে বাড়ে না। ওপরের কারণগুলোর জন্য একটু একটু করে বাড়তে থাকে, একসময় যা ওজনাধিক্যে পরিণত হয়। উচ্চতা অনুযায়ী আপনার যেমন এখন ১৬ কেজি ওজন বেশি আছে। এই বাড়তি ওজন কমাতে হলে প্রথমে ওজন বাড়ার কারণগুলো শনাক্ত করতে হবে। তারপর সেগুলো পরিবর্তন করে, ধীরে ধীরে কমাতে হবে। ওজন যেমন এক দিনে বা হঠাৎ করে বাড়েনি, জাদুবলে হঠাৎ করে কমেও যাবে না। তাই ধৈর্য রেখে জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম বাড়ানোর মতো বিষয়গুলোয় মনোযোগ দিতে হবে। তবে তার জন্য অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন
‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA
ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)