রোজ যাঁরা ঘরের কাজে শ্রম দেন, এই ঈদে তাঁদের জন্য কী করবেন

রান্নাবান্না, পরিবেশন, অতিথি আপ্যায়ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সব দিকেই খেয়াল রাখেন মায়েরা-বউয়েরা। বিনা পারিশ্রমিকে তাঁরা উদয়াস্ত সংসারের জন্য খাটবেন, এ যেন ধরেই নেওয়া হয়।
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

আপনি হয়তো বাড়ির বাইরে কাজ করেন। কিংবা পড়ালেখা করেন। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে আপনি পেয়ে যান ‘রেডিমেড’ খাবার-দাবার। ঘরদোর পরিপাটি রাখতেও হয়তো আপনার তেমন কোনো ভূমিকা নেই। রসনা ও অন্দরটা বাড়ির ‘কেউ একজন’ সামলে রাখেন। গড়পড়তা বাঙালি পরিবারে এই ‘কেউ একজন’ যে ঠিক কে হতে পারেন, তা বোধ হয় বলে না দিলেও চলছে। পরিবারের মা কিংবা বউ পরিচয়ে যিনি রয়েছেন আপনার বাড়িতে, এই মানুষ তিনিই। তাঁর এই রোজকার কাজকে ‘কাজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই নারাজ, এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। এমনকি ওই মানুষকেই যদি জিজ্ঞেসা করা হয়, তিনি কী করেন, তাতেও বোধ হয় তিনি উত্তর দেবেন, ‘আমি কিছু করি না।’
মায়েরা-বউয়েরা অনেকে ঘরে ও ঘরের বাইরে দুই জায়গায়ই কাজ করেন। তাঁদের তাই ব্যক্তিজীবনে আলাদা একটা পরিচয় থাকে। পরিবারের গণ্ডির বাইরেও থাকে আলাদা একটা জগৎ। কিন্তু ‘আমি কিছু করি না’ দলের সদস্যদের অধিকাংশের জগৎজুড়ে থাকে কেবল পরিবারই। বিনা পারিশ্রমিকে তাঁরা উদয়াস্ত সংসারের জন্য খাটবেন, এ যেন ধরেই নেওয়া হয়। বাইরে কাজ করেন, কিংবা করেন না—এমন অনেক নারীরই বাড়ির কাজে ‘সাহায্যকারী’ থাকেন, কিন্তু ‘কাজ’টা শেষ পর্যন্ত সেই মায়েরই কিংবা বউয়েরই। অর্থাৎ দায়িত্বটা ‘সামলাতে’ হয় তাঁকেই। ঈদের সময় ‘সাহায্যকারী’ ছুটিতেও থাকতে পারেন। রান্নাবান্না, পরিবেশন, অতিথি আপ্যায়ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সব দিকেই খেয়াল রাখেন মায়েরা-বউয়েরা।

ঈদের আনন্দে মেতে ওঠেন পরিবারের সবাই। সত্যিই কি ‘সবাই’? মা-বউদের কাঁধেই বর্তায় যেকোনো উৎসব আয়োজনের ভার। তাঁরা সবটাই করেন। ভালোবেসেই করেন। কিন্তু তাঁদের জন্য বাকিরা কী করেন? কতটা ভাবা হয় তাঁদের নিয়ে? বছরজুড়ে পুরো পরিবারের জন্য বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে যাওয়া এসব মানুষের জন্য ঈদের ছুটিতে বাকিদের কি কিছু করার আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম।

কাজে সাহায্য করুন

এই সমাজে এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের সত্যিকার ধারণাও নেই একটা বাড়িতে আসলে কত কাজ থাকে! তবে একটু গভীরভাবে ভেবে দেখলে যে কেউই বহু ‘ছোট’ কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ ‘আবিষ্কার’ করতে পারবেন। এমন ‘ছোট’ কিছু কাজই নাহয় করে দিন ঈদের ছুটিতে। সবজি বা ফল কাটা, সালাদ বা পানীয় তৈরি, খাবার পরিবেশনে সাহায্য করা, থালাবাসন পরিষ্কার করা, ঘর পরিষ্কার করা, বিছানা গোছানো, পর্দা টাঙানো—নানা রকম ‘ছোট’ কাজ আছে বাড়িতে। এসবের পাশাপাশি পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বা শিশুদের দেখভাল করার কাজেও সাহায্য করতে পারেন। ‘বড়’ কাজ করতে চাইলে দু-একটি পদ রান্নাও করতে পারেন, বিশেষ করে এমন কোনো পদ, যা মা-বউয়ের পছন্দ।

কাটাকাটির দায়িত্বটা নিতে পারেন

কাজ বাড়াবেন না

আপনার অনভ্যস্ত হাতে সাহায্য করতে গিয়ে তাঁর কাজ আরও বাড়িয়ে দেবেন না যেন। সব ফেলে-ছড়িয়ে একাকার করবেন না। সাবধানতা অবলম্বন করবেন। কাটাকুটি করতে গিয়ে নিজের আঙুল কেটে বসবেন না। গরম জিনিসে হাত পুড়িয়ে ফেলবেন না। কাজের মাঝে বিরক্ত হয়ে চলেও যাবেন না!

খুশিতে যোগ করুন বাড়তি মাত্রা

বাড়ির সবার জন্যই হয়তো কিছু না কিছু কিনেছেন আপনি। তারপরও আলাদাভাবে ছোটখাটো কোনো উপহার দিতে পারেন এসব মানুষকে। নিজে কিছু বানিয়েও দিতে পারেন। কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান। ধন্যবাদ দিন তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য। কৃতজ্ঞতা জানান। তাঁর শরীর ঠিক আছে কি না, জিজ্ঞেস করুন। তিনি কোনো অসুবিধায় থাকলে সেটির সমাধান করতেও চেষ্টা করুন। আর ঈদের ছুটির পরও আপনার এই ইতিবাচক আচরণ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিন নিজেকেই। ঈদটা অন্য দশটা ঈদের চেয়ে আলাদা হয়ে উঠবেই উঠবে।