আজ বাবা দিবস। এ উপলক্ষে পাঠকের কাছ থেকে লেখা আহ্বান করেছিলাম আমরা। বাবাকে নিয়ে লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিতম কুমার সরকার
প্রতিদিন ছয় কিলোমিটার সাইকেলে চালিয়ে আমার বাবা অফিস করতে যান। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০তম গ্রেডের অফিস সহায়কের চাকরি। প্রায় সারাটা দিন তাঁকে দাঁড়িয়েই কাজ করতে হয়। তাঁর ঘামের টাকায় চলে আমাদের সংসার।
বাবার কষ্ট ছোটবেলা থেকেই বুঝতাম। এ জন্য চেষ্টা করতাম যেন আমার পেছনে তাঁর কষ্টার্জিত টাকা কম খরচ করা লাগে। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের উপার্জন খরচ করতে বরাবরই আমার খুব খারাপ লাগত। সব সময় ভাবতাম, দামি ফোন কেনার প্রয়োজন নেই, আইসিটি প্রাইভেট না পড়ে নিজে চেষ্টা করলেই পারব, একটা কম দামের সাইকেল কিনলে রিকশা ভাড়ার হাজার হাজার টাকা বেঁচে যাবে ইত্যাদি।
জীবনের এই ছোট্ট পরিধিতে সবচেয়ে বড় সমর্থক আমার বাবা নিখিলচন্দ্র সরকার। এসএসসি পরীক্ষার পর বিভাগ পরিবর্তন করে বিজ্ঞান থেকে মানবিকে যাওয়ার সিদ্ধান্তে সবাই তীব্র বিরোধিতা করেছিল; কিন্তু একটা অদ্ভুত সুন্দর মানুষের সমর্থন পেয়েছি সব সময়, তিনি বাবা। বিভাগ পরিবর্তনের পর আমার সঙ্গে সঙ্গে বাবাকেও তীব্র প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। নানা কথা শুনতে হয়েছে। দিন শেষে স্রষ্টা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফল দিয়েছেন। বাবার মুখে এখন আনন্দের হাসি আর সমালোচকদের মুখ বন্ধ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল প্রকাশের পর প্রায় তিন মাস অবসর। এক মাস গ্রামে ছিলাম। বাকি দুই মাসের দেড় মাস টিউশনি করেছি। জীবনের প্রথম উপার্জন করতে এসে বুঝতে পেরেছিলাম, টাকা আয় করা সহজ কাজ না। তবে এতে কিছু আনন্দও আছে। শহরের চার প্রান্তে আটটা টিউশনির জন্য যখন ইজিবাইক থেকে নেমে এক দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতাম, বাবার কথা খুব মনে পড়ত। এক-দেড় কিলোমিটার হেঁটেই বিরক্তি চলে আসত। অথচ বাবা দীর্ঘ ২৮ বছর প্রতিদিন ছয় কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে অফিস করেছেন।
দেড় মাসের অবসরে আমার আয় হয়েছিল ৫৪ হাজার টাকা। পুরো টাকাটাই বাবার হাতে তুলে দিয়েছি। বাবার হাতে টাকা দেওয়ার সময় মনে পড়ছিল, এ রকম কত ৫৪ হাজার টাকা বাবা আমার পেছনে ব্যয় করেছেন। এখনো করছেন।
স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি, ভালো থাকুক পৃথিবীর সব বাবা। পৃথিবীর সব সন্তান বাবাদের মুখ আলোকিত করুক, তাঁদের সীমাহীন কষ্টের সামান্য হলেও মূল্য দিতে শিখুক।