‘একপর্যায়ে স্ত্রী আমাকে বঁটি দিয়ে আঘাতের চেষ্টা করে’

‘পাঠকের প্রশ্ন’ বিভাগে আইনি সমস্যা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। আজকের প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা

মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমি একজন নিম্নপদস্থ সরকারি কর্মচারী। দুই মাস আগে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে আমার গায়ে হাত তোলে আমার স্ত্রী। বঁটি দিয়ে আমাকে আঘাত করারও চেষ্টা করে, কিন্তু আশপাশের লোকজনের বাধার মুখে পারেনি। পরে আমি তার বাবাকে অভিযোগ করি। তিনি তাঁর ছেলেকে পাঠিয়ে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যান। আমার অভিযোগের ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ না করে উল্টো তিনি আমার নামে লোকের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি আপস করতে চাইলেও তারা রাজি না। তারা মামলা করতে চায়। এ অবস্থায় চাকরির নিরাপত্তাসহ মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা থেকে কীভাবে ত্রাণ পাব, দয়া করে পরামর্শ দেবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: আপনার চিঠির জন্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার আছে। কোনো ব্যক্তির দ্বারা শারীরিকভাবে নির্যাতিত হলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরিপূর্ণ অধিকার আপনার আছে। যেকোনো নাগরিকের বিচার চাওয়া এবং বিচার পাওয়া একটি সাংবিধানিক অধিকার। যেহেতু আপনার স্ত্রী আপনাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছেন, কাজেই আপনার উচিত ছিল তাৎক্ষণিক নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা।

এ ছাড়া তাঁর কারণে পারিবারিক বা সামাজিক শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হলে, কোনো কলহবিবাদ তৈরির শঙ্কা কিংবা বিরক্তিকর কোনো কাজের আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। দণ্ডবিধির ধারা ৩২৩-এ স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাতের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এখানে বলা আছে, কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত প্রদান করে, তার শাস্তি হবে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। আপনি চাইলে আপনার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এসব আইনের অধীনে প্রতিকার চাইতে পারবেন।

যেহেতু আপনার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আপনার নামে মিথ্যা মামলা করার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন, আপনার উচিত হবে নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)–এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়েছে। এই ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন।

দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি এবং মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে। তবে মিথ্যা মামলা করলে আদালতে মিথ্যা প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে হয়রানির শিকার হতে হবে।

আপনি আপনার করা সাধারণ ডায়েরির একটি কপি আপনার কর্মস্থলে দিয়ে রাখতে পারেন এবং সব বিষয় সম্পর্কে আগে থেকে অবহিত করে রাখতে পারেন।

পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর

পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ডাক ঠিকানা প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA