এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) সমাবর্তন হয় সাধারণত মে মাসে। চার বছর প্রতীক্ষার পর আসে এই উদ্যাপনের দিন। আয়োজন অবশ্য আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের চার বছর স্মরণ করতে সমাবর্তনের আগে ১০০ দিন ধরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কিছু করি আমরা। প্রতিবছর স্নাতক শিক্ষার্থীদের একেকটি ব্যাচের একেক নাম দেওয়া হয়। আমাদের ব্যাচের নাম রাখা হয়েছে ভ্যালেরিয়ান্স। করোনা মহামারির সময় আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, তাই সুগন্ধি ফুল ভ্যালেরিয়ান্সের নামেই আমাদের ডাকা হচ্ছে।
চট্টগ্রামে অবস্থিত আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা দেশের শিক্ষার্থীরা পড়েন। তাই আয়োজনটা হয় ভীষণ রঙিন। শত দিনের আয়োজনের একটি অংশ—‘এনি ক্যারেক্টার ডে’। এ দিবসে আমরা গল্প-সিনেমা-বইয়ের নানা চরিত্রের পোশাক পরি। তাদের মতো আচরণ করি। এবার যেমন আমি হলিউড সিরিজ ওয়েডনেসডের প্রধান চরিত্র ওয়েডনেসডে অ্যাডামসের পোশাক পরেছিলাম। তার মতো সাদা–কালো পোশাক পরে, দুটি বেণি করে নিয়েছিলাম। আবার আমার বন্ধু নাদিয়া রিকা সেজেছিল বলিউড সিনেমা পিকুর দীপিকা পাড়ুকোনের মতো।
আরেকটি দিন ছিল টুইন ডে, যেখানে বন্ধুরা যমজদের মতো একই পোশাক পরে আসে। শত দিনের আয়োজনের একদিন আমরা ভিন্ন সংস্কৃতি জানতে ও বুঝতে চেষ্টা করি, অন্য দেশ ও সংস্কৃতির পোশাক পরি। এবার অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পরেছিল আফগান বা বার্মিজ পোশাক। শ্রীলঙ্কা বা নেপালের বাসিন্দাদের মতোও পোশাকও পরেছিল কেউ কেউ। আমার বন্ধু, ইন্দোনেশিয়ার রিদা হুদা পরেছিল আফগানিস্তানের নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। পূর্ব তিমুরের ইসাবেল পেরেরা তার বন্ধু ভারতের সীতা কুমারীর সঙ্গে জামা অদলবদল করে নিয়েছিল।
শত দিনের প্রতিটি দিন দুই-তিনজন স্নাতক শিক্ষার্থীর ছবি ক্যাম্পাসে লাগানো হয়। সেই ছবির বাক্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বন্ধুরা শুভেচ্ছা জানিয়ে নানা কথা লিখে রাখেন। আমার ছবিতেও যেমন অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছে। লিখেছে আমাকে নিয়ে তাঁরা কেন গর্বিত, কীভাবে আমি তাদের অনুপ্রাণিত করি। কম্বোডিয়ার বন্ধু রসি হাই লিখেছে, আমার সঙ্গে সে দারুণ সময় কাটিয়েছে। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক না কেন, আমাকে সে অনুভব করবে।
আরেক দিন ছিল ক্লাসের ব্যাগ ছাড়া যেকোনো কিছু নিয়ে যাওয়ার দিবস। কেউ বালতি নিয়ে গেছে, কেউবা ঝুড়ি নিয়ে গেছে ক্যাম্পাসে। কেউ ওড়না দিয়ে ঝোলা বানিয়ে নেয়, আমি গিটারের কভারকে ব্যাগের মতো করে নিয়েছিলাম।
এক শ দিনের উদ্যাপনের এই সময়ে বিশেষ একটি সপ্তাহকে ‘স্পিরিট সপ্তাহ’ হিসেবে পালন করা হয়। ওয়েডিং থিম নামের আয়োজনে আমরা সবাই নতুন দম্পতির মতো পোশাক পরি। আমি গ্রামের বিয়ের ‘জামাই বাবু’ সেজেছিলাম। কাজল দিয়ে নকল দাড়ি-গোঁফও এঁকে নিয়েছিলাম।
কেউ পরেছে লেহেঙ্গা, কেউ লাল শাড়ি, কেউবা নববধূর সাদা–কালো গাউন। আমার বন্ধু ভারতের পল্লবী দাস। সে পরেছিল খ্রিষ্টীয় বিয়ের পোশাক। একে অপরের সংস্কৃতিকে বোঝা, সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই এত সব আয়োজন। আর কয়েক দিন পরই আমরা ছড়িয়ে পড়ব বিশ্বের নানা দেশে, নানা পেশা আর পরিচয় নিয়ে। নতুন জীবনে পা রাখার আগের মুহূর্তগুলো রাঙিয়ে তুলছি এখন।