ছেলেবেলা থেকেই শাওন মাহমুদের গবেষণাপত্র পড়ার অভ্যাস। ডায়েরিতে টুকে রাখতেন দেশ–বিদেশের নিত্যনতুন আবিষ্কার। শিক্ষকদের করতেন নানা প্রশ্ন। মেঘগুলো আকাশে কীভাবে ভেসে থাকে, তারাগুলো কি আসলেই তারা না অন্য কিছু? এসব প্রশ্নের বিজ্ঞানভিত্তিক উত্তর খুঁজতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেই একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলেন। নাম দেন ‘বিজ্ঞানপ্রিয় পরিবার’। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ডিজিটাল বিজ্ঞানশিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য এ বছর ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন শাওন মাহমুদ।
‘শিখি ও শেখাই’ নামে একটি অনলাইন ক্যাম্পেইন চালু করেন শাওন। ‘কোনো প্রশ্নই অবান্তর নয়, সব প্রশ্নেরই উত্তর রয়েছে’—এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করাই ছিল প্রচারণাটির লক্ষ্য।
বিজ্ঞানপ্রিয়র যাত্রা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শেষ বর্ষে পড়ছেন শাওন মাহমুদ। ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’ গড়ে তোলার উদ্দেশ্য কী, জানতে চাইলে শাওন বলেন, ‘আমাদের সমাজে শিশুর কৌতূহলের কুঁড়ি ফোটার আগেই তা উপড়ে ফেলা হয়। ফলে এ দেশে গবেষক তৈরি হয় না। এই কৌতূহল শক্ত করে ধরে রাখার জন্য বিজ্ঞানপ্রিয় একটা টুল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই ফেসবুকে ‘বিজ্ঞানপ্রিয় পরিবার’ নামের গ্রুপটা তৈরি করেন শাওন। যাঁরা শিখতে ও শেখাতে ভালোবাসেন, তাঁদের নিয়ে ছোট একটা দলও তৈরি করেন। মনে যেকোনো প্রশ্নের উদয় হলেই গ্রুপে জানাতে বন্ধুদের বলে রাখেন। অল্প সময়েই মধ্যেই গ্রুপটি বড় হতে থাকে। বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা। অবান্তর প্রশ্নের অভিযোগে কেউ কেউ সমালোচনাও করতে থাকেন। প্রতিবাদস্বরূপ ‘শিখি ও শেখাই’ নামে একটি অনলাইন ক্যাম্পেইন চালু করেন শাওন। ‘কোনো প্রশ্নই অবান্তর নয়, সব প্রশ্নেরই উত্তর রয়েছে’—এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করাই ছিল প্রচারণাটির লক্ষ্য। সেই ক্যাম্পেইনে এক বছরে দৈনন্দিন বিজ্ঞানের প্রায় আড়াই লাখ প্রশ্ন আসে। মজার ব্যাপার, যাঁরা প্রশ্ন করতেন, তাঁরাই গবেষণাপত্র ঘেঁটে অন্যের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতেন। পেতেন পুরস্কার!
তিন বছরে এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ বিজ্ঞানপ্রেমী।
খুদে গবেষক তৈরির উদ্যোগ
শিশু-কিশোরদের সৃজনশীলতা ও গবেষণায় আগ্রহ বাড়াতে নেবুলা নামের একটি ই-ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন শাওন মাহমুদ। এটিতে নতুন নতুন আবিষ্কার ও বিজ্ঞান বিষয়ে নানা প্রতিবেদন ও নিবন্ধ থাকে, লেখে স্কুলশিক্ষার্থীরা। প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয় নেবুলা। এ পর্যন্ত দুটি সংখ্যা বের হয়েছে। ডাউনলোড করা হয়েছে প্রায় আড়াই লাখবার।
২০২২ সালে স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘প্রজেক্ট প্রাচি’ নামের একটি প্রকল্প শুরু করেন শাওন। উদ্দেশ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ হাজার পরিবারের অন্তত একজন সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসাদানে দক্ষ করে গড়ে তোলা। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহায়তায় ইতিমধ্যে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বিজ্ঞানপ্রিয়।