চট্টগ্রামের গুমাই বিলে টিয়া পাখির ঝাঁক
চট্টগ্রামের গুমাই বিলে টিয়া পাখির ঝাঁক

গুমাই বিলে কিসের টানে এসেছে হাজার হাজার টিয়া পাখি

শস্যভান্ডার হিসেবে চট্টগ্রামের গুমাই বিলের পরিচিতি আছে। কথিত আছে, এই বিলে উৎপাদিত ফসল দেশের মানুষের তিন দিনের অন্ন জোগান দিতে পারবে। এবারের আমন মৌসুমেও পাকা ধানে ভরে আছে বিলের জমি। সেই ধানের টানে পাহাড় থেকে নেমে এসেছে হাজার হাজার টিয়া পাখি। দেখে এসেছেন প্রণব বল

বর্ষায় গুমাই বিলের যে থই থই রূপ, হেমন্তে তার লেশমাত্র নেই। চারদিকে এখন পাকা ধানের সোনালি আভা। মিষ্টি রোদে ম–ম গন্ধ। এ যেন নবান্নরই গন্ধ। শুধু মানুষ না, টিয়া পাখির দলকেও যেন আমন্ত্রণ জানিয়ে ডেকে এনেছে এই নবান্ন। বিলের আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে তারা। কখনো উড়োজাহাজের মতো বাঁ দিক ডান দিকে বাঁক নিচ্ছে। কখনো নিম্নগামী মেঘের ওপরে, আবার কখনো নিচ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে তাদের ওড়াউড়ি দেখে মনে হয়, নীল আকাশেই যেন সাগরের ঢেউ লেগেছে। উড়তে উড়তে অকস্মাৎ ডুব দেয় নুয়ে পড়া পাকা ধানের খেতে। ধানের শিষ ঠোঁটে নিয়ে মুহূর্তে উড়ে গিয়ে বসে কোনো গাছের ডালে। পেটপূজা শেষে আবার ওড়াউড়ি।

বিলের আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে টিয়া পাখির দল

বিলের চার হাজার একর জমিতেই বলতে গেলে ধান চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হবে বলে কৃষকদের আশা। তবে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে এই টিয়ার দল। দেড় শ শতক জমি চাষ করেছেন এবার কৃষক আবুল বাশার। বলছিলেন, ‘এক ঝাঁকে প্রায় ১৫-২০ হাজার টিয়া একসঙ্গে থাকে। যে জমিতে বসে, সেখানে সব শেষ করে দেয়।’

পেটপূজা শেষে আবার ওড়াউড়ি

বিলের পাশের গাছের কাছাকাছি যেতেই কানে আসে কিচিরমিচির শব্দ। বিলের পাশের বড় বড় গাছে অস্থায়ী বাসা বেঁধেছে তারা। কয়েক বছর ধরেই গুমাই বিলে আসছে টিয়ার দল। টিয়া পাখিরা সাধারণত নিরুপদ্রব এলাকা পছন্দ করে। একবার বাধা পেলে সাধারণত আর ওমুখো হয় না। রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল পাখিদের কাছে নিরুপদ্রব মনে হয়েছে।

বিলের কাছাকাছি যেতেই কানে আসে কিচিরমিচির শব্দ

সাধারণত ঘন গাছপালা, যেমন বড় বড় শিরীষ, নানা জাতের ফুল, আম, কড়ই ইত্যাদি গাছে তারা থাকতে পছন্দ করে। গুমাই বিলের পাশে এ ধরনের গাছের অভাব নেই।

বিলের পাশের গাছে আশ্রয় নিয়েছে টিয়া পাখির দল

পাখিগুলোর ঠোঁট লাল। আর লেজসহ পিঠ ও পাখা পুরোটা সবুজ। গাছে বসলে আর দেখা যায় না, কেবল লাল ঠোঁট ছাড়া। তখন দেখতে মনে হয় ফুল। একবার যে স্থানে গিয়ে টিয়া শান্তিতে সময় কাটাতে পারে, সেখানে বারবার যেতে বেশি পছন্দ করে। বানিয়ে তোলে অভয়াশ্রম। ধান কাটা শেষে এই অস্থায়ী আবাস ছেড়ে আবার ফিরে যাবে তারা।