পরিস্থিতি যেমনই হোক, সামনে এগিয়ে যেতে হলে সেটা সামলে নিতে হবে। মডেল: আইরিন সুলতানা
পরিস্থিতি যেমনই হোক, সামনে এগিয়ে যেতে হলে সেটা সামলে নিতে হবে। মডেল: আইরিন সুলতানা

আবেগ সামলে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার ১০ উপায়

শিরোনাম দেখে মনে হতে পারে, এ বুঝি আবেগ-অনুভূতি হারিয়ে যন্ত্রমানবে পরিণত হওয়ার বয়ান। আদতে বিষয়টা একেবারেই অন্য রকম। আবেগ-অনুভূতি নিয়েই তো জীবন। তবে আবেগের বশে ভুল করে পস্তানোর চেয়ে, অতি আবেগ একটু দায়িত্বশীলভাবে সামলে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে যেমন আপনি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মসচেতন মানুষ হয়ে উঠবেন, তেমনি অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়িয়েও যেতে পারবেন।

জীবনে চড়াই-উতরাই তো থাকবেই। সবকিছু কখনোই পুরো নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। পরিস্থিতি যেমনই হোক, সামনে এগিয়ে যেতে হলে সেটা সামলে নিতে হবে। রেগে গিয়ে চিৎকার, ভাঙচুর কিংবা কাউকে শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত করার মতো বিষয়গুলো কখনো ভালো ফল বয়ে আনে না। ব্যক্তিজীবন, কর্মক্ষেত্র আর সামাজিক পরিসরে আপনার আত্মশক্তিকে শাণিত করতে তাই খেয়াল রাখুন এসব বিষয়।

১. নিজের অনুভূতিকে শনাক্ত করুন

হঠাৎ কোনো কারণে হয়তো আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। নিজের আবেগকে বুঝতে চেষ্টা করুন। এটা কি রাগ, না ক্ষোভ, নাকি কোনো দুঃখবোধ? শুনতে সহজ মনে হলেও আবেগের মুহূর্তে এটা করাটা সহজ না-ও হতে পারে। তবে এটিই হলো আবেগ নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ।

২. প্রয়োজনকে জানুন

এবার একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আপনার অনুভূতির পেছনের কারণ খুঁজে বের করুন। প্রত্যাশিত সম্মানটুকু না পাওয়ার কারণে কিংবা অন্যায়ের শিকার হয়ে আপনার হয়তো রাগ হচ্ছে। কারণ খুঁজে পেলে সেটির সমাধানে আপনার করণীয় নির্ধারণ করতে পারবেন। রাগের সময়ের কথাই ধরা যাক। যাঁর আচরণে আপনার রাগ হচ্ছে, ঠান্ডা মাথায় তাঁর সঙ্গে কথা বললে সমস্যাটির সমাধান হবে, নাকি অন্য কারও সাহায্য নিতে হবে, সেটি আপনি ঠিক করতে পারবেন।

৩. নিজের দেহের দিকে খেয়াল রাখুন

আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে আমাদের দেহেও। দুশ্চিন্তায় থাকলে পেটে অস্বস্তি হতে পারে। ভয়ে থাকলে শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়ে আসতে পারে। এমনিভাবে অনুভূতির সঙ্গে নিজের দেহের পরিবর্তনগুলোর দিকে লক্ষ রাখুন। তাহলে নিজেকে স্বস্তিতে রাখার জন্য আপনার কী করতে হবে, তা বের করতে সুবিধা হবে।

হঠাৎ রেগে অনেকে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন।

৪. আবেগ সামলাতে ভিন্ন কিছু করুন

ঘরের মধ্যে রাগে দাঁত কিড়মিড় করছেন? বাইরে থেকে বরং একটু হেঁটে আসতে পারেন অথবা ঘরেও লম্বা শ্বাস নিতে পারেন। একা ঘরে বালিশে মুখ গুঁজে খানিক চিৎকারও করে নিতে পারেন। দুশ্চিন্তায় থাকলে একটা বই নিয়ে পড়ুন। কিংবা খুব ভালো একজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন, যিনি আপনাকে বোঝেন। এসব কাজ আপনাকে হালকা করবে।

৫. নেতিবাচকতা থেকে দূরে

আপনি যখন আবেগ সামলাতে ভিন্ন কিছু করতে পারবেন, তখন খেয়াল করবেন নেতিবাচক ভাবনা থেকে সরে আসতে পারছেন। এভাবেই প্রশান্তি ও ইতিবাচক ভাবনার জন্য আপনার মনে জায়গা তৈরি হবে। এবার নতুন করে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভাবুন পুরো বিষয়টা নিয়ে।

৬. ভেবে দেখুন, আপনি কতটা বদলাতে পারবেন

পৃথিবীর সবকিছু আপনি আপনার মনের মতো করে বদলে দিতে পারবেন না। কতটুকু বদলানো সম্ভব, আর কতটুকু অসম্ভব—তা ভেবে দেখুন। কেউ যদি আপনার সঙ্গে অসম্মানসূচক আচরণ করেন, আপনি কিন্তু চাইলেই জোর করে তাঁর কাছ থেকে সম্মান ‘আদায়’ করতে পারবেন না। এটা মেনে নিন। তাঁর সঙ্গে চোটপাট করলেও কিন্তু তিনি আপনাকে মন থেকে সম্মান করবেন না।

৭. ভিন্নভাবে ভাবুন

একই পরিস্থিতি আপনার জন্য একরকম, আরেক ব্যক্তির জন্য ভিন্ন। কোনো পরিস্থিতিতে আপনার খারাপ অনুভূতি হলে সেটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তির অনুভূতিকেও বুঝতে চেষ্টা করতে পারেন। এমন ভাবনার ফলে আপনি একটা সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।

যাঁরা ইতিবাচক চিন্তা করেন, তাঁদের কয়েকটি রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা হ্রাস পায়

৮. ভালো লাগা বিষয়ের চর্চা করুন

রোজকার জীবনে নানান কাজকর্মের মধ্যে কখনো কখনো এমন কিছু করুন, যাতে আপনি মুগ্ধ হন। এই যেমন বেড়িয়ে আসতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে হারিয়ে যাওয়ার মতো জায়গা থেকে। শিল্প প্রদর্শনীতে যেতে পারেন। বই পড়তে পারেন। দারুণ কোনো অডিও ক্লিপ শুনতে পারেন। এভাবে আপনার আগ্রহ এবং মননশীলতা জেগে উঠবে, যার দরুন আপনি আবেগের দিক থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠবেন।

৯. নিজের সঙ্গে ‘যোগাযোগ’ রাখুন

নিজের দিকে খেয়াল রাখুন। আপনার কখন কেমন অনুভূতি হচ্ছে, আপনি কিসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, সবই খেয়াল করুন। দিনে-রাতে বহুবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুঁ মারার চেয়ে নিজের দিকে খেয়াল রাখাটা অনেক বেশি জরুরি।

১০. অনিশ্চয়তাকে মেনে নিন

অনিশ্চয়তা জীবনের এক সৌন্দর্য। একে গ্রহণ করুন। মানসিক চাপ সামলাতে পারবেন সহজে। নতুন যেকোনো ঘটনার সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগান।

সূত্র: রিডারস ডাইজেস্ট