বেসরকারি সংস্থায় চাকরির সুবাদে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুরে বেরিয়েছেন। যেখানেই গেছেন, কিছু না কিছু সংগ্রহ করে এনেছেন। ৩০ বছর ধরে সংগৃহীত সেসব উপকরণের মধ্যে যেমন আছে মাটির প্রাচীন শঙ্খ, বৌদ্ধমূর্তি, কারুকার্যখচিত ছুরির খাপ, তেমনি আছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ব্যবহৃত গয়না, ডাকটিকিট, লটারির টিকিট, সংবাদপত্রসহ প্রত্নতাত্ত্বিক নানা নিদর্শন। যশোরে নিজ বাড়িতে এসব সংগ্রহ নিয়েই গড়ে তুলেছেন এক সংগ্রহশালা। জি কে এম লুৎফর রহিম কাছের মানুষদের কাছে লুল্টু নামে পরিচিত। তাঁর উদ্যোগের নামও ‘লুল্টুর সংগ্রহশালা’। ঘুরে দেখে এসে কয়েকটি সংগ্রহের খবর জানাচ্ছেন মাসুদ আলম
লুৎফর রহিমের সংগ্রহে আছে ৩৩০টি দেশ ও অঞ্চলের আড়াই হাজারের বেশি ধাতব মুদ্রা। এর মধ্যে ২০০৩ সালে তিনি নরসিংদী জেলার একটি বাড়ি থেকে তিনটি ধাতব মুদ্রা সংগ্রহ করেন। ধাতব মুদ্রা তিনটি মৌর্য যুগের (খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২-১৮৫ সাল)। মুদ্রা তিনটির দুটি আয়তাকার। একটির এক কোণ কিছুটা বাঁকানো। মুদ্রার গায়ে খোদাই করা। এই মুদ্রাকে পাঞ্চমার্কড মুদ্রা বলে।
শেরশাহ ভারতবর্ষের সম্রাট (১৫৪০-১৫৪৫) ও শুর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর শাসনামলে জমিদারদের মধ্যে একধরনের বিশেষ ডাকব্যবস্থার প্রচলন ছিল। কোনো জমিদার বিপদে পড়লে কিংবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্য জমিদারদের জানাতে তাঁরা ডাকবাক্সের মতো দেখতে কৌটা ব্যবহার করতেন। কৌটার দুটি অংশ রয়েছে। নিচের অংশ কিছুটা লম্বা। মাথায় ঢাকনা। সম্পূর্ণ কৌটাটি সাত ইঞ্চি লম্বা। ঢাকনার পরিমাপ দুই ইঞ্চি। গোলাকৃতির কৌটার গায়ে একটি শিকল আছে, ভেতর চিঠি রেখে মুখ ঢাকনা দিয়ে আটকে দেওয়া হতো। এরপর কৌটার শিকল ঘোড়ার গলার লাগামের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হতো। ডাককৌটাটি নিয়ে ঘোড়া ছুটত গন্তব্যস্থলে।
শুধু ক্ষুদ্র ডাকবাক্সটি নয়, তার সঙ্গে আছে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বাংলাদেশের সব ধরনের ডাকটিকিট, ডাকহরকরাদের ব্যবহৃত বল্লম, হারিকেন। আবার পোস্ট অফিসের সামনে বসে থাকা টাইপরাইটারের টাইপও মেশিন দেখা গেল তাঁর সংগ্রহে।
৫০০ বছর আগের তরবারি ও ঢাল
যশোরের চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুরের ইয়াহিয়া বিশ্বাসের পূর্বপুরুষেরা পারস্য (বর্তমান ইরান) থেকে এসেছিলেন। ২০১৩ সালে ইয়াহিয়া বিশ্বাস তাঁর পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া একটি লোহার তরবারি এবং একটি পিতলের ঢাল লুৎফর রহিমকে দান করেন। তরবারি ও ঢালটি প্রায় ৫০০ বছর আগের। তরবারিটি প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা।
হাতির হাড়ের কুমির
লুৎফর রহিমের সংগ্রহে একটি হাতির হাড়ের কুমির রয়েছে। ২০১০ সালে নীলফামারী জেলার এক ব্যক্তি মাটি খোঁড়ার সময় হাতির হাড়ের কুমিরটি পান। ওই বছর লুৎফর রহিম তাঁর কাছ থেকে হাড়ের কুমিরটি সংগ্রহ করেন।
১৮৬৮ সালের দলিল
দলিলটি ১৮৬৮ সালের। ২০২০ সালে যশোর শহরের একটি পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে তিনি সংগ্রহ করেন।