বিয়ে না হওয়াটা যেন বিরাট অপরাধ
বিয়ে না হওয়াটা যেন বিরাট অপরাধ

আমার কেন বিয়ে হচ্ছে না

ধরুন, তাঁর নাম রূপকথা। বয়স ৩২। অবিবাহিত। ঈর্ষণীয় একটা চাকরি করেন। ঈদুল আজহার দিন বিকেলে বাবাকে নিয়ে আত্মীয়দের বাড়িতে মাংস বিতরণ করতে বের হয়েছেন মেয়ে। কিন্তু তাঁদের উৎসবের আনন্দটাই মাটি করে দিল আত্মীয়স্বজনের উটকো কিছু প্রশ্ন, ‘বয়স তো পেরিয়ে যাচ্ছে, কবে বিয়ে করবে?’ ‘কেন বিয়ে করছ না?’ ‘কেন নিজেকে বঞ্চিত রাখবে?’ প্রশ্নের যেন শেষ নেই। রূপকথার বিয়ে না হওয়ায় তাঁদের যেন রাতে ঘুম হচ্ছে না। বহুদিনের পরিচিত হোক কিংবা স্বল্পপরিচিত, যাঁরই ইচ্ছা হচ্ছে, বিয়ের মতো বিষয় নিয়ে হুটহাট প্রশ্ন করে চলেছেন। বিয়ের ইতিবাচক দিক কিংবা বিয়ে না করার অসুবিধা সম্পর্কে আলাপও জুড়ে দিচ্ছেন কেউ কেউ। একসময় নিজেকেই প্রশ্ন করতে শুরু করেন রূপকথা, আমার কেন বিয়ে হচ্ছে না?

বিয়ে না হওয়াটা যেন বিরাট অপরাধ। বিশেষ করে অবিবাহিত নারীর প্রতি সমাজের আচরণ অনেকটাই নেতিবাচক। অনেক ক্ষেত্রে নারীর পেশাকে এর জন্য দায়ী করা হয়। একজন মানুষের অনেক কারণেই বিয়ে না হতে পারে। ব্যক্তিগত এসব বিষয় নিয়ে আলাপ না করাই সৌজন্যতা, তা আপনি তাঁর বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী, সহকর্মী, বয়োজ্যেষ্ঠ, অগ্রজ, অনুজ যে-ই হয়ে থাকুন না কেন। মনে রাখবেন, বিয়ের মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে কথা বলে কাউকে বিব্রত করাটা অভদ্রতা।

থাকুন ইতিবাচক

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোবায়ের মিয়া জানান, বিয়ে না হওয়ার কারণে সমাজে যে নেতিবাচক আচরণের শিকার হতে হয়, তার কারণে একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে। অনেকেই ওই ব্যক্তির দোষত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করেন। এতে তিনি হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারেন, একপর্যায়ে হতাশও হয়ে পড়তে পারেন।

স্বাভাবিকভাবেই বিয়ে নিয়ে মনের গভীর কোণে কেউ কোনো স্বপ্ন বুনে থাকলে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হলে এমনিতেই তাঁকে হতাশা গ্রাস করতে পারে। এর ওপর জোটে মানুষের বাঁকা কথা। তবে সব সময়ই মনে রাখতে হবে, জীবন কেবল এই একটি বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই পৃথিবীতে নিজের জন্মকে সার্থক করে তোলার জন্য প্রত্যেকেরই করার অনেক কিছু আছে। তার সঙ্গে বিয়ে করা বা না করার কোনো সম্পর্কই নেই। সমাজের জন্য অসাধারণ কিছু করার সুযোগ হয়তো রয়েছে আপনার। তাই জীবনের ইতিবাচকতাকে গ্রহণ করার পরামর্শই দিলেন জোবায়ের মিয়া—

বিয়ে না হওয়া নিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগবেন না

প্রাণ ভরে জীবনকে উপভোগ করুন। নিজের ভালো লাগার কাজ করুন। অন্যের উপকারে নিজেকে নিয়োজিত করুন।

নিজের সুস্থতার বিষয়ে সচেতন থাকুন। নিজের যত্ন নিন।

মনে রাখবেন, অবিবাহিত থাকাটা ‘দোষ’ নয়। সামাজিক আয়োজন বা পারিবারিক মিলনমেলায় কটু কথা শুনতে হলেও এমন আয়োজন এড়িয়ে যাবেন না।

বিয়ে প্রসঙ্গে কেউ নেতিবাচক কথা বললে চুপ থাকবেন না। বিরক্তিও প্রকাশ করবেন না। বাদানুবাদে জড়াবেন না। হালকা কথায় প্রসঙ্গটি শেষ করে দিতে চেষ্টা করুন। বলতে পারেন, ‘সুখবর এলে তো আপনারা জানবেনই।’ নাছোড়বান্দা কেউ কথা চালিয়ে যেতে চাইলে বলে দিন, এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন। ওই মুহূর্তে হয়তো আপনি কোনো কাজে আছেন কিংবা কোনো অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন। সেটির দিকেই স্থির রাখুন নিজের মনকে।

পরিচিতজনেরা যা করবেন না

অবিবাহিত ব্যক্তির অভিভাবক বিব্রত হন, এমন কথা শোনাবেন না।

কারও বিয়ে নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন করবেন না। বিয়ে প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করবেন না। বিয়ের ভালো দিক কিংবা মন্দ দিক নিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই।

কারও বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিল, এমনটা জেনে থাকলেও সেই প্রসঙ্গ তুলবেন না।

কারও প্রেমের বিষয়ে শুনে থাকলে সেই প্রসঙ্গেও কোনো কথা বলবেন না। যাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বলে জেনেছিলেন, তিনি কেমন আছেন, সেটিও জানতে চাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে থাকেন কিংবা অন্য কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে থাকেন বা আপনি জেনে থাকেন, সেসব কথাও ওঠাবেন না।

অবিবাহিত ব্যক্তির অভিভাবক বিব্রত হন, এমন কথা শোনাবেন না।

পরিচিতজনেরা যা করতে পারেন

আপনার সামনে কেউ যদি অবিবাহিত ব্যক্তিকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেন, আপনি তাঁদের আলাপের প্রসঙ্গটাই পালটে দিতে পারেন ঝটপট। আর আপনার পরিচিত অবিবাহিত মানুষটি যদি তাঁর একলা জীবন নিয়ে নৈরাশ্যে ভোগেন, তাঁর জন্য আলাদাভাবে ইতিবাচক কিছু করতে পারেন, তাঁর অনুমতি নিয়ে তাঁর জন্য একজন জীবনসঙ্গী খোঁজার চেষ্টা করতে পারেন।

বাজার-সদাই, রান্নাবান্না কিংবা অন্যান্য দৈনন্দিন কাজে তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন হলে সেদিক থেকেও সাহায্য করতে পারেন।

মাঝেমধ্যে তাঁকে আপনার বাড়ির আড্ডায় আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

কল্যাণকর সামাজিক কাজে তাঁকে যুক্ত করে নিন। রোজ একসঙ্গে শরীরচর্চাও করতে পারেন।

কেউ হতাশ হয়ে পড়লে তাঁকে বুঝিয়ে বলুন, বিয়ে নিয়ে হতাশার কিছু নেই। এটি জীবনেরই একটি অংশ। বিয়ের ওপর কখনোই পুরো জীবনটা নির্ভর করে না।

তবে অবিবাহিত মানুষটি যদি একলা জীবন উপভোগ করেন, একলা থাকতেই পছন্দ করেন, তাহলে তাঁর জন্য যেচে বাড়তি কিছু করতে না যাওয়াই ভালো। আপনি যদি অন্যের জীবনের প্রতি সম্মান না রাখতে পারেন, তাহলে আপনার নিজের সম্মানটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, ভেবে দেখবেন একবার অবশ্যই।