বয়স ৩৫। এরই মধ্যে দুটি অস্কার জিতেছেন এমা স্টোন। অভিনয়, গান কীভাবে এই মার্কিন অভিনেত্রীকে প্রভাবিত করেছে? তাঁর বয়ানেই পড়ুন।
বেড়ে ওঠার সময় দেখেছি, মা বাড়িতে লা মিজারেবল শুনত। লা মিজারেবলের গল্পটাও তার কাছেই শোনা। আট বছর বয়সে মঞ্চে নাটকটা দেখার সুযোগ হলো। আর এটাই আমার মধ্যে এনে দিল বড় ধরনের পরিবর্তন। ভীষণ ভালো লেগেছিল। এর পর থেকে আমার কাছে অনুভূতি প্রকাশের একটা বড় মাধ্যম হয়ে ওঠে গান।
ছোটবেলায় আমিও মিউজিক্যালে পারফর্ম করেছি। কিন্তু নাচ ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় শিল্পমাধ্যম। ১০ বছর নাচ শিখেছি। মূলত ট্যাপ ড্যান্স। তবে দক্ষ নৃত্যশিল্পী বলতে যা বোঝায়, তা হতে পারিনি কখনোই। অতএব নিজেকে প্রকাশ করার ভিন্ন একটা মাধ্যম আমি খুঁজে নিয়েছিলাম—অভিনয়।
অভিনয়ের মধ্য দিয়েই জীবনের সঙ্গে আমার আরও ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। নিজের শক্তিটা ভেতরে চেপে রাখার বদলে আমি প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছি। অভিনয় আমার কাছে থেরাপির মতো। বিশেষ করে ছেলেবেলায় যখন প্রায়ই ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হতো, তখন অভিনয়ের চর্চাই হয়ে উঠেছিল আমার জানালা। যা কিছু চ্যালেঞ্জিং মনে হতো, যা কিছু ভয় পেতাম, মঞ্চে উঠলেই কেন যেন সব সহজ হয়ে যেত।
যখন অভিনয় করতাম, অভিনয়টাই তখন থাকত সব মনোযোগের কেন্দ্রে। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার একটা উপায় বলতে পারেন। লা লা ল্যান্ড-এ যেমন বলরুমে নাচাটা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। কারণ, বাঁ পাশের স্নায়ুতে সমস্যার কারণে প্রতিবারই চোখে তীব্র ব্যথা হতো। কিন্তু নিজেকে সঁপে দিতে দ্বিধা করিনি একবারও।
আমি বলব না অভিনয় উদ্বেগ নিরাময় করে। কিন্তু আপনি যখন আপনার অতিরিক্ত শক্তিটুকু ভেতরে টেনে রাখবেন, তখনই অতিরিক্ত চিন্তা আপনাকে গ্রাস করবে। একরকম আতঙ্ক ভর করবে।
বছর কয়েক আগে যখন ক্যাবারেতে গাইতাম, মঞ্চে দাঁড়ালেই মনে হতো, আমি এক অন্য মানুষ। মজার ব্যাপার হলো, স্পটলাইটের নিচে দাঁড়াতে আমি চাইনি। কিন্তু স্টুডিও ফিফটি ফোরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে গাওয়া শুরু করলেই মনে হতো, আমি আমার বেডরুমে, একা!
যখন বাইরের মানুষ বলা শুরু করে ‘তুমি ভালো করছ,’এটা কিন্তু একধরনের মানসিক চাপ। কিন্তু আমি নিজের ভুলগুলোর দায়িত্ব নিতে শিখে গেছি। আমি নিজেকে বলি না, ‘তুমি যা করছ, ভালো করছ।’ বরং ব্যাপারটা উল্টো। আমি বলি, ‘তুমি যদি ভুলভাল করেও ফেলো, তাতে দোষের কিছু নেই।’ সে জন্য নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কোনো কারণ নেই।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিখেছি, উদ্বেগ আসে ভয় থেকে। মানুষের সবচেয়ে বড় ভয় কী? মৃত্যুর ভয়। এই ভয়কেই আমি ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। লোকে বলে উদ্বেগ হলো রুদ্ধশ্বাস রোমাঞ্চ। অর্থাৎ উদ্বেগের মধ্যেও যদি আপনি দম নিতে পারেন, তাহলে এটাকে রোমাঞ্চে পরিণত করতে পারবেন।
আমরা আমাদের শক্তিকে সত্যিই ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে পারি। যেমন অভিনয়, গল্প বলা অথবা সৃজনশীলতা। যদি বর্তমানের অভিজ্ঞতায় বাঁচতে শিখে যান, তাহলেই অনেক কিছু করতে পারবেন। আর এটা কিন্তু পুরোপুরি নিজের ওপর নির্ভর করে! আপনার হয়ে আর কেউ করে দেবে না। বেড়ে ওঠার পথে এই উপলব্ধি আমার খুব কাজে এসেছে। এর আগে জীবনের একটা পর্যায় পর্যন্ত ভাবতাম, আবেগপ্রবণ মানুষ হওয়া একধরনের অভিশাপ।
ভুল থেকেই আমরা শিখি, এটা আমি সব সময় অনুভব করি। মানুষ হয়েছি, ভুল তো করবই। আপনি যদি একজন আবেগপ্রবণ মানুষ হন, এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। যেসব মানুষকে আপনি ভালো রাখতে চান, নিশ্চয়ই আপনি তাঁদের দুঃখ দিতে চান না। তারপরও কখনো কখনো আপনি ভুল করে ফেলবেন, তাঁরাও দুঃখ পাবেন। এই ভুল আমরা সবাই করি।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। আমার কথা একটু ঔদ্ধত্যপূর্ণ মনে হতে পারে, কিন্তু আমি মনে করি জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে, ‘আহা! এই জীবন ছেড়ে যেতে হবে’ ভেবে আফসোস করার কিছু নেই। আমি অবশ্যই বাঁচতে চাই। আমি অবশ্যই আমার জীবনটা ভালোবাসি। কিন্তু সব সুযোগ, সব মুহূর্ত তো আমার হবে না। জীবনে কিছু একটা ঘটবে, এই আশায় আমি বসে থাকতে চাই না। বরং আমি ঝাঁপিয়ে পড়ে বেঁচে থাকার রোমাঞ্চ উপভোগ করতে চাই।