বুয়েটে প্রথম শাফিন: বন্ধুদের ধন্যবাদ দিতেই এই লেখা

‘স্বপ্ন নিয়ে’র অনুরোধে লিখেছেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সাবেক ছাত্র ও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম শাফিন আহমেদ

শাফিন আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

আমার ছেলেবেলা, বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। খুব সাধারণ জীবন বলা যায়। জীবনের প্রথম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায়। ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে বুঝতে পারি, পুরো ব্যাচটাই দেশের অন্যতম মেধাবীদের ব্যাচ।

ছোটবেলা থেকেই গণিতের প্রতি আকর্ষণ ছিল। খুব উৎসাহ নিয়েই তাই গণিত অলিম্পিয়াডগুলোয় অংশ নিতাম। এর সূত্র ধরেই ২০১৮ সালে প্রথম জাতীয় গণিত উৎসবে অংশগ্রহণ করি।

গণিত উৎসবের আকর্ষণটা আসলে বলে বোঝানো কঠিন। যে কখনো এই উৎসবে যায়নি, এ আয়োজনকে অলিম্পিয়াড না বলে উৎসব কেন বলে, সেটা তাকে বোঝাতে পারব বলে মনে হয় না। মনে আছে স্থানীয় উৎসবের সময় গাণিতিক সমস্যাগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, এগুলোর সমাধান তো আমার হাতের নাগালেই আছে। আবার একটু গভীরে ঢুকেই বুঝতে পারছিলাম, যতটা সহজ ভেবেছি, ততটা নয়। সেবার স্থানীয় উৎসবে প্রথম রানারআপ হলেও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পাইনি।

এই অর্জনকে আমি জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ই বলব। না পাওয়ার দুঃখ নিয়েই সে বছর থেকে উঠে পড়ে গণিতচর্চা শুরু করি। এ সময়ে রাজউক ম্যাথ সার্কেলের অংশ হই। কাছের বন্ধুরা সবাই সার্কেলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় জায়গাটা অন্যতম পছন্দের ছিল। ভালো কোনো সমস্যা পেলে সব সময় একে অপরকে সেটা দেখাতাম, পারব না জেনেও কঠিন সব গাণিতিক সমস্যার পেছনে সময় দিতাম। এভাবে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে অলিম্পিয়াডের প্রস্তুতি নেওয়া হতো। মেন্টর ও সিনিয়ররা অনেক বেশি উৎসাহ দিতেন। পরে গণিত উৎসবে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতীয় গণিত ক্যাম্পে যাওয়ার সুযোগ পাই। ক্যাম্পের ব্যাপারে আমি একটা কথাই বলব। এখানে একবার পৌঁছাতে পারলে পরের বছর আবার যাওয়ার যে তীব্র স্পৃহা কাজ করে, সেটাই বড় অনুপ্রেরণা।

গণিতের পাশাপাশি ভিডিও গেমসের প্রতিও আগ্রহ ছিল। খেলার পাশাপাশি গেম ডেভেলপমেন্ট নিয়েও জানার চেষ্টা করতাম। এভাবেই শুরু করি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। পছন্দের দুই বিষয় একসঙ্গে চর্চার সুযোগ পাই প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায়। সেখানেও অসাধারণ একদল মানুষের সঙ্গে যুক্ত হই। সবাই সবাইকে সাহায্য করত, সবাই মিলে এগোনোর চেষ্টা করত। এটা খুব ভালো লাগত।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলে পড়ার ইচ্ছেটা আদতে তখনই আমার মনে জায়গা করে নিয়েছিল। বুয়েট আমার বড় ভাইয়ের ক্যাম্পাস। সেই সুবাদে ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগে আগেও বুয়েটে গিয়েছি। ক্যাম্পাসটা ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতাও নিশ্চয়ই আমার জন্য বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

এত কিছু বলার উদ্দেশ্য, আমার সেই বন্ধুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, যারা ম্যাথ সার্কেল থেকে শুরু করে ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত সঙ্গে থেকেছে। সমস্যা সমাধান অবশ্যই আনন্দের, একটা কঠিন সমস্যা সমাধান করার খুশিটা একান্তই নিজের। তবে আমার কাছে আরও ভালো লাগত সেই আনন্দটা ভাগাভাগি করে নিতে। ভর্তি পরীক্ষায় বসে সেই বন্ধুরাই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও আমরা সব সময় একে অপরকে সহযোগিতা করেছি। এমন আন্তরিক পরিবেশে থাকতে পারা অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে করি।

ছোটদের উদ্দেশ্যে বলব, নিজের আগ্রহকে অনুসরণ করো। সারা দিন পড়া লাগবে না, তবে পড়ার অভ্যাস যেন থাকে। পড়ার মধ্যে হোক বা না হোক, নতুন কিছু শিখতে দ্বিধাবোধ কোরো না। প্রবলেম সলভিং (সমস্যা সমাধান) ভালোবাসো, নিজে শিখো, অপরকে শেখাও। অসুস্থ প্রতিযোগিতা, হিংসার সাইকেলটার ব্রেক চেপে ধরো। ভালো একটা দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলে ভর্তির সময় মানসিক চাপ সামলানো সহজ হবে। মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রেখো, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ো। তোমাদের সবার জন্য রইল শুভকামনা।