পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন: আমার বয়স ৩০ বছর। ছোটবেলায় আমাকে দত্তক নেওয়া হয়। সব কাগজপত্রে আমার মা–বাবার নামের জায়গায় পালক মা–বাবার পরিচয় দেওয়া আছে। এর মধ্যে আমার পালক বাবা হঠাৎ মারা গেছেন। তারপর জানতে পারি, পারিবারিক ওয়ারিশনামায় আমার নাম নেই। আসলেই কি ওয়ারিশনামায় আমার নাম থাকতে পারে না? যেহেতু ওয়ারিশনামায় নাম নেই, আমি কি পালক মা–বাবার কোনো সম্পত্তিই পাব না? যদি না দেয় আর আইনি কোনো পদক্ষেপ যদি আমি নিই, তাহলে রায় কার পক্ষে যাবে? মা–বাবার জায়গায় যেহেতু তাঁদের নাম আছে, সেহেতু আমারও তো ভাগ আছে।
আবার যাঁদের কাছ থেকে আমাকে আনা হয়েছিল, তাঁদের (আমার জন্মদাতা মা-বাবা) ওয়ারিশনামাতেও তো আমার নাম নেই। তাঁদের সম্পত্তির ভাগও কি আমি পাব না? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: বাংলাদেশের আইনে শিশু দত্তক নেওয়ার বিষয়ে কোনো বিধান নেই। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আইনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি একটি শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে পারেন। কোনো শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে হলে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে। ১৮৭৫ সালের মাইনরিটি অ্যাক্টের ৩ ধারা অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর কাস্টডি ১৮৯০ সালের অভিভাবকত্ব ও পোষ্য (গার্ডিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট) আইনের ৭ ধারায় নেওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালের ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্সের অধীন এখতিয়ারভুক্ত পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে।
আপনি জানিয়েছেন, আপনাকে যাঁরা দত্তক নিয়েছেন, তাঁদের ওয়ারিশনামায় আপনার নাম নেই। আপনি তাঁদের পালক সন্তান। আর পালক সন্তানকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করলে আইনত তাঁর কিছুই করার থাকে না। কারণ, মুসলিম আইনে দত্তক সন্তান কোনো সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। মুসলিম আইন অনুযায়ী উইলকে বলে অসিয়ত। কোনো সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান তাঁর অনাত্মীয়কে, অর্থাৎ যিনি তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী নন, সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অসিয়ত করতে পারেন। কাজেই আপনার বর্তমান মা (যে আপনাকে পালক নিয়েছেন) চাইলে আপনাকে তাঁর সম্পত্তির একটি অংশ অসিয়ত করতে পারেন।
তবে আপনার জন্মদাতা মা–বাবার সম্পত্তি থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন না। আপনি আইনগতভাবে আপনার জন্মদাতা মা–বাবার সম্পত্তি থেকে আপনার অংশ দাবি করতে পারবেন, যেহেতু আপনি তাঁদের বৈধ উত্তরাধিকার।
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা
প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA