ইন ডাইন রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় পারিবারিক পরিবেশ
ইন ডাইন রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় পারিবারিক পরিবেশ

নতুন ধারার এ রেস্তোরাঁগুলো জনপ্রিয়তা পাচ্ছে যে কারণে

কাজের সূত্রে পরিবারের কর্তা-গিন্নি দুজনই বাড়ির বাইরে সারা দিন, ছোটদেরও পড়ালেখার চাপে দম ফেলার ফুরসতটুকুও যেন নেই—সব মিলিয়ে খাবার টেবিল ছাড়া একসঙ্গে সবার দেখাই হয়ে ওঠে না। কখনো কখনো সেই সুযোগটাও হয়তো মেলে না।

এ ধরনের ইন ডাইন রেস্তোরাঁর ইন্টেরিয়রও হয় একটু আলাদা
ছবি: সুমন ইউসুফ

তাই সপ্তাহের কোনো একটি দিন বা পরিবারের কারও বিশেষ দিনে রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়া আর কিছু সময় কাটানো এখন একধরনের সামাজিক ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যায়, এই ট্রেন্ডকে পুঁজি করে দেশের ছোট–বড় সব শহরেই গড়ে উঠেছে বহু ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ। আর রাজধানীতে তো বলতে গেলে অলিগলি থেকে শুরু করে শপিং মল বা সুউচ্চ যেকোনো অট্টালিকাতেই পাওয়া যাবে কোনো না কোনো ক্যাফে বা রেস্তোরাঁ। বাদ যায়নি ফুটপাত-রাজপথও, সেখানেও গড়ে উঠেছে বিভিন্ন আকার ও ধরনের ফুডকোর্ট। বাইরে খাওয়ার এই সংস্কৃতিতে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে নতুন এক ধারা—ইন ডাইন রেস্তোরাঁ। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে এ ধারার বেশ কিছু রেস্তোরাঁ।

অন্যান্য রেস্তোরাঁ থেকে ইন ডাইন রেস্তোরাঁর মূল পার্থক্য—আবহ। ইন ডাইন রেস্তোরাঁয় বাসার পরিবেশে পারিবারিক আবহে আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। আর এখানে যেতে হলে আগে থেকে বুকিং দিতে হবে। কারণ, এ ধরনের রেস্তোরাঁয় আগে থেকে রান্না করে রাখা হয় না।

খাবার পরিবেশটিকে সাজানো হয় এমনভাবে, মনে হয় পাশের বাড়ির দাওয়াতে গিয়েছি

ফোনে বুকিং দেওয়ার পর আপনি যে কয়জন সদস্য নিয়ে আসবেন, সেই পরিমাণ খাবার রান্না করা হবে। অর্থাৎ গ্রাহক এখানে পাতে পাবেন একদমই তাজা খাবার। এমনই একটি ইন ডাইন রেস্তোরাঁ ‘এন’স কিচেন’–এর স্বত্বাধিকারী ফাতেমা আবেদিন। তিনি বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, আমরা কোনো ধরনের খাবার নষ্ট করতে রাজি না। শুরুতে আমরা শুধু হোম ডেলিভারি দিয়েছি। কিন্তু এখন আমাদের একটি সুসজ্জিত ডাইন রয়েছে। যেখানে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী নিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে ঘরোয়া স্বাদের খাবার উপভোগ করতে পারবে। সে জন্য অবশ্যই আগে ফোন করে গ্রাহককে তাঁর চাহিদার কথা জানাতে হবে।

গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে খাবার প্রস্তুত করা হয়

আমাদের রান্নাঘরে একদম দেশি স্বাদের ভর্তা–ভাজি থেকে শুরু করে রোস্ট, পোলাও বা কাচ্চি বিরিয়ানিও পাওয়া যাবে। আবার যাঁরা বিদেশি খাবার খেতে চান, তাঁদের জন্য আমরা “আউট অব বক্স” নামে আলাদা মেনু চার্ট রেখেছি। অন্য যেকোনো সাধারণ রেস্তোরাঁর চেয়ে আমাদের পার্থক্য হচ্ছে, গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে আমরা খাবার প্রস্তুত করি। তাই আমাদের কোনো খাবার অবশিষ্ট থাকে না। এ জন্য এখানে কোনো বাসি খাবার থাকে না। সাধারণ রেস্তোরাঁগুলো তাদের একদিনের বাসি খাবার পরের দিন গ্রাহককে অনায়াসে দিয়ে দেয়। আবার বাসি খাবার নানাভাবে প্রক্রিয়া করে চালিয়ে দেয়।’

থাকে চায়েরও আয়োজন

খাবারের পাশাপাশি এ ধরনের ইন ডাইন রেস্তোরাঁর ইন্টেরিয়রও হয় একটু আলাদা। ঘরের পরিবেশকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় বেশি। এ বিষয়ে আরেকটি ইন ডাইন রেস্তোরাঁ ‘সঞ্চয়িতা’র স্বত্বাধিকারী ফায়জা আহমেদ বলেন, ‘সঞ্চয়িতার ইন্টেরিয়র ডিজাইন আমি এমনভাবে করেছি, যাতে অতিথিরা জায়গাটিকে আপন ভাবতে পারে। তিনি বা তাঁদের যেন মনে হয় পাশের বাড়ির দাওয়াতে এসেছেন।’

এ ধরনের আপ্যায়নে অতিথিরাও আনন্দ পান খেয়ে

সাবেকি ধারার কাঠের টেবিল–চেয়ার অতিথিদের কিছুটা নস্টালজিকও করে তুলবে। প্রবেশপথেই রেখেছি আগরবাতি, যার সুবাসের সঙ্গে মিলিয়ে মোমবাতি ও ল্যাম্পশেডের মাধ্যমে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সঞ্চয়িতার খাবারের মেনুও কিন্তু আলাদা। কোনো প্রাণিজ প্রোটিন এখানে থাকে না। মূলত প্ল্যান্ট বেজড খাবারই আমরা অতিথিদের জন্য রান্না করে থাকি। মেনুর বাইরে আতিথেয়তার জন্য মসলা চা ও পান–সুপারির ব্যবস্থা রেখেছি।

অন্যান্য রেস্তোরাঁ থেকে ইন ডাইন রেস্তোরাঁর মূল পার্থক্য—আবহ

ঢাকার অভিজাত এলাকার পাশাপাশি পুরান ঢাকায়ও গড়ে উঠেছে এ রকম কিছু ইন ডাইন রেস্তোরাঁ। যেমন বেচারাম দেউড়িতে পুরোনো একটি জমিদারবাড়িকে ইন ডাইন রেস্তোরাঁয় রূপান্তরিত করা হয়েছে, যেখানে জমিদারবাড়ির আবহে চলে খাওয়াদাওয়া। লাঞ্চ অ্যাট ইমরান’স হেরিটেজ হোমও সাজানো হয়েছে পুরোনো জমিদারবাড়ির আবহে। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি সীমিত আকারে অন্যান্য খাবারও এখানে পাওয়া যায়। অতিথিরা এখানে খাবারের স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি জমিদারবাড়ির পরিবেশও উপভোগ করতে পারবেন।