একাই ৬ গোল দিয়েছেন নার্গিস

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোছা. নার্গিস খাতুন
ছবি: সংগৃহীত

‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ম্যাচে অনেক গোল করেছি। কিন্তু এবারের অনুভূতি অন্য রকম। কারণ, প্রতিপক্ষের জালে ছয়টি গোল হয়েছে, সবগুলোই আমার।’ এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোছা. নার্গিস খাতুন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো আন্তবিভাগ নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টে গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের বিপক্ষে একাই ৬ গোল করেন নার্গিস। শুধু তা–ই নয়, গত ২৭ নভেম্বর টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে তাঁর দেওয়া একমাত্র গোলেই স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ।

খেলাধুলার প্রতি নার্গিসের ভালোবাসা ছিল ছোটবেলা থেকে। তবে ফুটবল খেলার শুরু ২০১১ সালে, বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে। ফুটবল মাঠে পা রাখার যাত্রাটা সহজ ছিল না। তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। খেলার ক্ষেত্রে পরিবারের সবার সমর্থন পেলেও মা একেবারেই রাজি ছিলেন না। সে সময় এগিয়ে আসেন নার্গিসের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক আব্দুল হামিদ। নার্গিসের মাকে বুঝিয়ে রাজি করান তিনি। এরপর থেকে সবার সমর্থনে খেলা চালিয়ে গেছেন নার্গিস। বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে জাতীয় পর্যায়ে তিনবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল তাঁর স্কুল। এভাবেই স্কুলপর্যায়ে খেলতে খেলতে রাজশাহীতে ফুটবল ক্যাম্পে আসেন তিনি। নির্বাচিত ১০ জনকে নেওয়া হয় ঢাকায়। সুযোগ পেয়ে যান নার্গিসও। টানা কয়েক দিন প্রশিক্ষণের পর সেখান থেকেই অনূর্ধ্ব-১৪ নারী ফুটবল দলে নির্বাচিত হন।

২০১৪ সাল থেকে পেশাদার ফুটবল খেলেন নার্গিস। ক্যাম্পিংয়ের সময় কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে হতো। সপ্তাহে একদিন মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনুমতি মিলত। নিয়মকানুনের মধ্যে থেকে নার্গিস তাই তাঁর সবটুকু মনোযোগ ফুটবলে ঢেলে দিতে চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল ছাড়াও অনূর্ধ্ব–১৪, অনূর্ধ্ব–১৬, অনূর্ধ্ব–১৭ ও অনূর্ধ্ব–১৯ জাতীয় নারী দলের হয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। এ ছাড়া বসুন্ধরা কিংস নারী দলের হয়ে খেলেছেন।

২৭ নভেম্বরের ম্যাচে প্রতিপক্ষকে প্রথমে এক গোল দেওয়ার পরই বাকি পুরো সময় রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলেছে নার্গিসের দল। নার্গিস বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টে বেশির ভাগই নতুন খেলোয়াড়। তাই সবাই আমার ওপর ভরসা করে ছিল। হারলেও আমার কারণে হারবে, জিতলেও আমার কারণেই জিতবে। তাই আমার ওপর চাপ ছিল বেশি।’

ফুটবল ও পড়াশোনা একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়াটা নার্গিসের জন্য একটু কঠিনই। বর্তমানে জাতীয় দলে না থাকলেও ক্লাবের খেলার কারণে অনেক সময় নিয়মিত ক্লাস করতে পারেন না। তবে বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষকদের সহযোগিতার কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা সহজ হয়েছে বলে জানালেন। কোনো বিষয় বুঝতে না পারলে বন্ধুদের কাছ থেকে বুঝে নিতে পারেন, তাঁদের কাছ থেকে নোট সংগ্রহ করেন।

বর্তমানে পড়াশোনার দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন নার্গিস। স্নাতক শেষ হওয়ার পর পেশাদার লিগের পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়েও তাঁর খেলার ইচ্ছা আছে।