ছাত্রাবস্থায়ই সরকারি ফার্স্ট ক্লাস চাকরি পেয়ে গেছি

২৪ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে পঞ্চদশ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষার ফল। সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আশিক-উজ-জামান। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন ছিদরাতুল মুনতাহা

মো. আশিক-উজ-জামান
ছবি: সংগৃহীত

পরীক্ষায় প্রথম হয়ে গেলেন। কেমন লাগছে?

সারা বাংলাদেশে প্রথম হওয়ার অনুভূতি আসলেই অন্যরকম। আমি অনেক খুশি। তবে প্রথম হয়েছি, সন্তুষ্টির কারণ শুধু এটা নয়; মা-বাবাকে খুশি করতে পেরেছি, শিক্ষকেরা আমাকে নিয়ে গর্ব করছেন—এটাই বড় আনন্দ।

আপনার স্কুল-কলেজ কোথায় ছিল?

আমার জন্ম পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বালাভীর গ্রামে। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছি রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে। তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হই। এখন স্নাতকোত্তর করছি।

স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার আগেই এত প্রতিযোগিতামূলক একটা পরীক্ষায় ভালো ফল পেয়ে গেলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?

আপনি যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের রীতিটা দেখেন, দেখবেন প্রতি বছরই এখান থেকে বিজেএস পরীক্ষায় অনেকেই ভালো ফল পাচ্ছেন। গত তিন বছরে আমাদের এখান থেকেই প্রথম হচ্ছেন। এর আগের বছর যিনি প্রথম হয়েছেন, তিনি আমার এক ব্যাচ সিনিয়র। তিনিও কিন্তু মাস্টার্স করার সময়ই বিজেএস পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, পড়াশোনা শেষ করার পর বাসা থেকে চাকরি পাওয়ার একটা চাপ থাকে, যেটা আমাকে পেতে হলো না, যেহেতু ছাত্রাবস্থায়ই একটা সরকারি ফার্স্ট ক্লাস চাকরি আমি পেয়ে গেছি। এটাও একটা স্বস্তির জায়গা।

ছোটবেলায় কি বিচারক হওয়ার ইচ্ছাই ছিল?

ইচ্ছা ছিল পাইলট হব। সবার ছোটবেলায় যেমনটা থাকে। ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সবারই একটা ইচ্ছা থাকে, সামরিক বাহিনীতে যাবে। আমারও ছিল। কিন্তু সেখানে আমার হয়নি। কারণ, যে উচ্চতা লাগে, সেটা আমার ছিল না। চোখেও সমস্যা ছিল। পরে প্রকৌশল আর আইন, এই দুটো লক্ষ্য সামনে রেখে পড়ালেখা করেছি।

প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন কবে থেকে?

স্নাতকের প্রথম বর্ষ থেকেই শুরু করে দিয়েছিলাম। আপনি যদি জুডিশিয়ারির সিলেবাস দেখেন এবং আইন বিভাগের পাঠ্যক্রম দেখেন, তাহলে দেখবেন যে জুডিশিয়ারির সিলেবাসে যা আছে, পাঠ্যক্রমে তার চেয়ে অনেক বেশি আছে। স্নাতকের প্রতি বছরই দেখা যায়, দু-তিনটা জুডিশিয়ারি কোর্স থাকে। সঙ্গে বাড়তি বিষয়ও থাকে। শিক্ষার্থীরা যেন অন্যান্য পেশায়ও যেতে পারেন, সেভাবেই পাঠ্যক্রমটা সাজানো। প্রথম বর্ষ থেকে আমি একাডেমিক পড়াশোনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম, যেন একাডেমিক রেজাল্টটা ভালো হয়। পাঠ্যক্রমে কিছু বিষয় যেহেতু জুডিশিয়ারিতেও আছে, সেহেতু আমি জানতাম যে এগুলো পরে বেশি কাজে লাগবে। তাই সেসব পড়তে গিয়ে আমার পরীক্ষার প্রস্তুতিও হয়ে গেছে। স্নাতক শেষের পর আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি মনে করি স্নাতকের পড়াটা ভালোভাবে পড়লেই জুডিশিয়ারির প্রস্তুতি হয়ে যায়। তবে যে ৪০ শতাংশ নম্বর সাধারণ বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, গণিত) থাকে, সেগুলো তো আর বিভাগে পড়ানো হয় না। সেগুলো নিজে থেকে পড়তে হয়।

তাহলে তো স্নাতকেও আপনার ফল ভালো থাকার কথা।

হ্যাঁ, আমি অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস থার্ড হয়েছি।

আপনার এই সাফল্যে শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব কী বলছে?

আমাদের বিভাগের ধারাটা ধরে রাখতে পেরেছি, তাই শিক্ষকেরা খুব খুশি। আমিও তাঁদের প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞ, তাঁরাই আমাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। বন্ধুদেরও প্রত্যাশা ছিল, জুডিশিয়ারি পরীক্ষায় আমি ভালো করব। এ জন্য তাঁরা আমাকে সব সময় উৎসাহ দিতেন।

ভবিষ্যতে যাঁরা জুডিশিয়ারি পরীক্ষা দেবেন, তাঁদের কোনো পরামর্শ দিতে চান?

যেমনটা আগে বলছিলাম, প্রথম বর্ষ থেকেই একাডেমিক পড়াশোনাটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। একাডেমিক পড়ায় গুরুত্ব দিলেই জুডিশিয়ারির পড়াশোনা অনেকটাই হয়ে যায়। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। পড়াশোনায় পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। দুদিন অনেক পড়লেন, তারপর চার-পাঁচ দিন পড়ালেখা করলেন না, এমন হলে হবে না। পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিশ্ব সম্পর্কে জানতে হবে।

ধন্যবাদ আপনাকে

আপনাকেও ধন্যবাদ।