‘সেই বৃষ্টি আজও তোমায় তেমনি ভালোবাসে, এক পশলা তুমি ভিজলেই আমার জ্বর আসে’ অথবা ‘শহরজুড়ে বৃষ্টি নামুক তুমি খুঁজে নিও ঠাঁই, প্রতিটি বৃষ্টিকণায় লেখা থাকুক শুধু তোমাকেই চাই’।
ফোনের গ্যালারি খুঁজে সুন্দর একটা ছবি বের করে (ইংরেজিতে যাকে বলে ‘এসথেটিক’) আজ আপনি ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারটা বদলে দিতেই পারেন। আর ওপরের কথাগুলোর কোনো একটাকে ব্যবহার করতে পারেন ক্যাপশন হিসেবে। কেননা, বৃষ্টি আসুক, না আসুক আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। বাঙালির বর্ষা বরণের দিন।
বাঙালির অন্যতম প্রিয় ঋতু বর্ষা। রোমান্টিকতা, আয়েশ বা প্রয়োজন—কোনো বিচারেই বৃষ্টির বিকল্প নেই। তবে স্কুলে যদি পরীক্ষা থাকে আর অফিসে যদি যেতেই হয়, তবে বিপত্তি! বৃষ্টি তখনই উপভোগ্য হয়ে ওঠে, যদি আপনি ঘরে থাকেন। বাইরে মেঘ রং বদলে ছোটাছুটি করে ডাকাডাকি শুরু করলেই ডাল-চাল আর ঘরে থাকা কয়েক পদের সবজি মিশিয়ে খিচুড়ি চাপিয়ে দেওয়া তো আমাদের অলিখিত রীতিতে পরিণত হয়েছে। আর এর সঙ্গে ভাজা মাছ, মাংস, বেগুনভাজি বা নিদেনপক্ষে ডিমভাজি, আচার, শুকনা মরিচের ভর্তা বা ঝাল-ঝাল শুঁটকিভর্তা হলে তো কথাই নেই!
উদরপূর্তি শেষে কাঁথামুড়ি দিয়ে একটা ভাত-ঘুম হলে সোনায় সোহাগা। ঘুম থেকে উঠে এক মগ চা হাতে বসতে পারেন বারান্দায়। দু–এক ফোঁটা বেয়াড়া বৃষ্টি যদি গায়ে এসে পড়ে, তাকে ঠেকাবেন না! ওপাশে কাচের গা বেয়ে দরদরিয়ে নামছে বৃষ্টি, শহর ভিজছে, আপনি ভিজতে পারছেন না। এমন সময় ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে সামনে এল ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও। কেউ একজন বৃষ্টিতে ভিজছে, সঙ্গে বাজছে বৃষ্টির গান। সেই বৃষ্টি আপনাকেও কি একটু ছুঁয়ে দিল না?
বৃষ্টি শেষ। এই সময়টা কিন্তু ছবি তোলার জন্য দারুণ। একে তো প্রকৃতি স্নান সেরে স্নিগ্ধ হয়ে থাকে। অন্যদিকে আকাশের রং দুর্দান্ত কম্পোজিশনের জন্য তৈরি হয়ে যায়। প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে একটা নীল বা আসমানিরঙা পোশাক হাতে তুলে নিতেই পারেন। আবার প্রকৃতির মাঝে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে বর্ষার ফুল কদমের সঙ্গে মিলিয়ে হলুদ, কমলা, গোলাপি বা ম্যাজেন্টারঙা পোশাকেও বেশ মানিয়ে যাবে। বর্ষা দিনে সুযোগ বুঝে সকালে বা বিকেলে বাড়ির ছাদেই সেরে ফেলতে পারেন একটা ঝটপট ফটোশুট!
জানলার কার্নিশে যখন সন্ধ্যা আর বৃষ্টি একসঙ্গে নেমেছে, এমন সময় চানাচুর-মুড়ি মাখা, চিড়া ভাজা, ডালপুরি, ঝাল পিঠা বা মচমচে তেলেভাজায় জমে ওঠে আড্ডা। কিছুই যদি বানাতে ইচ্ছা না হয়, তবে তা-ই সই। মুঠোফোনেই ডেকে আনতে পারেন গরম–গরম কোনো খাবার!
বর্ষা যে কেবল রোমান্টিকতা আর আয়েশি সময় কাটানোর অনুষঙ্গ হয়ে আসে, তাই-ই নয়; বরং উচাটন মন স্মৃতির অলিগলি হাতড়ে হয়ে ওঠে নস্টালজিক। পুরোনো সুখ এমন দিনে আড়ি পেতে ওম দেয়। এ রকম এক বর্ষায় আপনি সাহস করে প্রিয়জনকে বলে ফেলতে পারেন মনের কথা! কেননা, এমন দিনেই প্রেমিকের চাওয়া থাকে, বৃষ্টি, তুমি এমনভাবেও নেমো না, যাতে আমার প্রেমিকা আমার কাছে পৌঁছাতে না পারে। আর একবার প্রেমিকা চলে আসার পর তার প্রার্থনা থাকে, বৃষ্টি, তুমি এমনভাবে নামো, যাতে আমার প্রেমিকা আর ফিরে যেতে না পারে...