আজকাল অনেকেই পোষা বিড়ালের জন্য প্যাকেটজাত খাবার কিনে নেন। প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ানো হলে বিড়ালের জন্য আলাদাভাবে খাবার তৈরির ঝক্কি থেকে বাঁচা যায় এটা ঠিক। এটাও ঠিক যে, দিনের লম্বা একটা সময় বাসায় কেউ না থাকলেও বিড়ালের জন্য শুকনা খাবার রেখে যাওয়া যায় সহজে। তবে অনেক সুবিধার ভিড়ে কোথাও আপনার আদরের পোষা প্রাণীটির স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে না তো?
বিড়ালের উপযোগী প্যাকেটজাত খাবার মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো শুকনা খাবার, অন্যটি নরম বা ভেজা খাবার। কোন ধরনের খাবার দেওয়া উচিত বিড়ালকে? না কি ঘরের খাবারই ভালো বিড়ালের জন্য? এমন নানান প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম। বিস্তারিত জানালেন রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে অবস্থিত বিশ্বাস ভেটেরিনারি ক্লিনিকের প্রাণীচিকিৎসক ডা. সুশ্যাম বিশ্বাস।
ভেজা খাবার না শুকনা খাবার?
প্যাকেটজাত ভেজা খাবারে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে, যা বিড়ালের জন্য ভালো। কারণ, বিড়ালের নিজ থেকে পানি খাওয়ার প্রবণতা কম থাকে। খাবার থেকে পানি গ্রহণ করতে পারলে তা বিড়ালের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই নরম খাবারের দাম অনেকটাই বেশি। নরম খাবারের পাশাপাশি তাই বিড়ালকে শুকনা খাবারও দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এই খাবারের দাম তুলনামূলক কম হয়। কিন্তু মুশকিল হলো, শুকনা খাবারে পানির পরিমাণ খুবই কম। আর নিয়মিত শুকনা খাবার খেলে বিড়াল সহজেই পানিশূন্য হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। ফলে বিড়ালের কিডনি এবং মূত্রথলির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। তাছাড়া শুকনা খাবার খেয়ে বিড়াল মুটিয়েও যেতে পারে, যা তাকে আরও বহু রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই শুকনা খাবার দিলেও তা দিতে হবে পরিমাণমতো, নির্দেশনা মেনে।
ঘরের খাবারই শ্রেয়
বিড়ালের জন্য ঘরের খাবারই ভালো। মুরগীর মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ করে দিতে পারেন বিড়ালকে। সেদ্ধ মাংসের পানিটাও তার জন্য উপকারী। মাংসের বিকল্প হিসেবে মাঝে মাঝে মাছও দিতে পারেন। তবে অবশ্যই ভালোভাবে সেদ্ধ করে নিতে হবে। মাছ বা মাংস সেদ্ধ করার সময় চাইলে খুব সামান্য পরিমাণ লবণ দেওয়া যেতে পারে। মূলত আমিষজাতীয় খাবার থেকেই বিড়াল তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে যায়। ভাত বা শর্করাজাতীয় খাবার বিড়ালের তেমন প্রয়োজন নেই। আবার অনেকে মনে করেন, সব বিড়ালই দুধ ভালোবাসে। আদতে তা সত্য নয়।
নিতান্তই বাধ্য হয়ে প্যাকেটজাত খাবার কিনলে
অনেক সময় পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে প্যাকেটজাত খাবার দিতে হয় বিড়ালকে। সেক্ষেত্রে এক বেলা শুকনা খাবার দিলে দুই বেলা দেবেন নরম খাবার। অর্থাৎ, শুকনা খাবারের দ্বিগুণ অনুপাতে নরম খাবার দিতে হবে বিড়ালকে। ভালো মানের শুকনা খাবারের দাম একটু বেশি হলেও সেটিই বেছে নিন। শুকনা খাবার দিলে বিড়াল পর্যাপ্ত পানি খাচ্ছে কি না সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখুন।
অনেক সময় পানিতে ধূলার সূক্ষ্ম স্তর পড়ার কারণে বিড়াল পানি খেতে চায় না। শীতল আবহাওয়ায় দীর্ঘসময় ধরে পাত্রে রেখে দেওয়া পানি ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার কারণেও বিড়াল পানি খেতে পারে না। তাই বিড়ালের পাত্রের পানি সারাদিনে অন্তত তিন-চার বার বদলে দেওয়া প্রয়োজন।
প্যাকেটজাত খাবার কত সময় অবধি খাওয়ানো যাবে, তা জানাও জরুরি। নরম খাবারের প্যাকেট খোলার পর তা কিন্তু খুব বেশি সময় বাতাসের সংস্পর্শে ভালো থাকে না। কয়েক ঘণ্টার ভেতরে খাওয়া শেষ না হলে তা রেফ্রিজারেটরে উঠিয়ে রাখতে হয়। সেখানেও এই খাবার ভালো থাকে মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা পর্যন্ত। মনে রাখবেন, এসব খাবার রেফ্রিজারেটর থেকে বের করে কক্ষ তাপমাত্রায় এনে এরপর বিড়ালকে দিতে হবে। কিন্তু এগুলো গরম করতে চুলা বা ওভেনে দিতে নেই। গরম আবহাওয়ায় প্যাকেটের মুখ খোলার আগেই নরম খাবার রেফ্রিজারেটরে রাখার প্রয়োজন পড়ে। আর শুকনা খাবার মুখ খোলার পর সংরক্ষণ করতে হয় বায়ুরোধী পাত্রে।
শুকনা খাবার ছাড়াতে হলে
কোনো কোনো বিড়াল একবার শুকনা খাবারের স্বাদ পেয়ে গেলে আর ঘরের খাবার খেতে চায় না। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে ঘরের খাবারে তার রুচি ফেরাতে মুরগীর মাংস আর শুকনা খাবারের মিশ্রণ কাজে লাগাতে পারেন। মাংস সেদ্ধ করে হাত দিয়ে চটকে নিন। এর ওপর ছিটিয়ে দিন শুকনা খাবারের মিহি গুঁড়া। এভাবে খেতে দিন বিড়ালকে। প্রথম দিকে শুকনা খাবারের পরিমাণ বেশি রাখবেন। কিছুদিন পর থেকে ধীরে ধীরে মাংসের অনুপাত বাড়াতে থাকবেন। এভাবে একসময় শুকনা খাবার ছাড়ানো সম্ভব হবে।