অনাগত সন্তানকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখেন হবু মা। কোনো মা গর্ভের শিশুর সঙ্গে কথা বলেন; কেউ শোনান শিশুতোষ গান বা গল্প। অনেকে আবার হবু বাবাকেও শিশুর সঙ্গে কথা বলতে উৎসাহ দেন। এগুলো কি নিছক মজা করার জন্য? না গর্ভের শিশু বাইরের কথা, গান, ছড়া শুনতে পায়?
গর্ভধারণের চার-পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেই ভ্রূণের কোষগুলো কান গঠনের জন্য সুসজ্জিত হতে শুরু করে। তবে গবেষণা বলছে, গর্ভের শিশু প্রথম শব্দ শুনতে পায় গর্ভধারণের আঠারোতম সপ্তাহের আশপাশে। শব্দের প্রতি শিশু আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে চব্বিশতম সপ্তাহ থেকে। এমনকি পঁচিশ-ছাব্বিশতম সপ্তাহ থেকে শব্দে শিশুর প্রতিক্রিয়াশীলতাও শুরু হয়ে যায়।
শিশু জরায়ুর ভেতর পানিতে ভেসে থাকে। এই পানির নাম অ্যামনিওটিক ফ্লুইড। আর জরায়ুকে ঘিরে রয়েছে মায়ের পেশি এবং অন্যান্য কোষগুচ্ছ, আর এসব স্তরের বাইরে রয়েছে মায়ের ত্বক। তার মানে, বাতাসে ভেসে আসা শব্দ এতগুলো স্তর পার হয়ে তবেই পৌঁছায় শিশুর কাছে। বাইরে থেকে আসা সেই শব্দের মাত্রা কতটা তীব্র হয়, তা–ও পরিমাপ করেছেন বিজ্ঞানীরা। জানা গেছে, গর্ভের বাইরের শব্দ প্রায় অর্ধেক তীব্রতায় ধরা দেয় শিশুর কানে।
বাইরে থেকে আসা শব্দ যেমন শিশু শুনতে পায়, তেমনি শুনতে পায় মায়ের শরীরের নানা ক্রিয়ার শব্দও। এসব শব্দ কিন্তু মা তেমনভাবে টেরও পান না। মায়ের হৃৎপিণ্ডের শব্দ, শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ, পাকস্থলীর শব্দ, এমনকি মায়ের শরীর আর শিশুর শরীরের সংযোগকারী নাড়ির মধ্য দিয়ে রক্তপ্রবাহের শব্দও শুনতে পায় শিশু।
মায়ের কণ্ঠ শিশু আলাদাভাবেই চিনতে শুরু করে। গর্ভের শেষ তিন মাস সময়ের মধ্যে সে নিজের মায়ের কণ্ঠটি ঠিকঠাক চিনে ফেলে। মায়ের কণ্ঠ শুনলে গর্ভের শিশুর হৃৎপিণ্ডের গতিও বেড়ে যায়। এর থেকে ধারণা করা হয় যে মায়ের কণ্ঠ শুনলে শিশু বেশ সজাগ হয়ে ওঠে।
মা যদি হঠাৎ অল্প সময়ের জন্য উচ্চমাত্রার শব্দের মধ্যে থাকেন, তাতে গর্ভের শিশুর শ্রবণশক্তির কোনো ক্ষতি হয় না। তবে একজন গর্ভবতী নারী দীর্ঘদিন উচ্চমাত্রার শব্দের মধ্যে থাকলে শিশুর শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
কোনো কোনো মা আবার শিশুর বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে গর্ভকালীন তাকে ধ্রুপদি সংগীত শোনানোর পক্ষপাতী। তবে এ ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
সূত্র: হেলথলাইন