কীভাবে, কতটুকু ব্যবহার করা উচিত, তা নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত বলে মনে করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
কীভাবে, কতটুকু ব্যবহার করা উচিত, তা নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত বলে মনে করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেভাবে এআই ব্যবহার করছেন

গত ৫ অক্টোবর ছিল শিক্ষক দিবস। মজা করেই সেদিন ‘প্রিয় শিক্ষক’ হিসেবে কেউ কেউ শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন চ্যাটজিপিটিকে। বোঝা গেল, একাডেমিক পড়ালেখায়ও এখন হরদম এআই প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে।

গবেষণাও কিন্তু তা-ই বলে। গ্লোবাল এআই স্টুডেন্ট সার্ভের বরাত দিয়ে ক্যাম্পাসটেকনোলজি ডটকম বলছে, বর্তমানে ৮৬ শতাংশ শিক্ষার্থীই একাডেমিক পড়াশোনায় এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। বিশ্বের ১৬টি দেশের প্রায় ৩ হাজার ৯০০ শিক্ষার্থীর ওপর করা এ জরিপে উঠে এসেছে—প্রচলিত এআই প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় চ্যাটজিপিটি। গত আগস্টে প্রকাশিত এই গবেষণা থেকে জানা যায়, ব্যবহারের দিক দিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে গ্রামারলি ও মাইক্রোসফট কোপাইলট।

এআই ‘মামা’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফায়জুল হাসান জানালেন, একাডেমিক পড়ালেখায় এআইয়ের সাহায্য নেন তিনিও। তাঁর বক্তব্য, ‘এআই ব্যবহার করে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করা যায়, জটিল বিষয় সহজ করে নেওয়া যায়। পড়াশোনার পরিকল্পনা সাজানো সহজ হয়।’ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বইগুলো পড়ানো হয়, সেগুলোর প্রায় সবই বিদেশি লেখকদের লেখা। পটভূমিও থাকে বিদেশি। এআই আমাকে পাঠ্যক্রমের বিষয়গুলো বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বুঝতে সাহায্য করে। অ্যাসাইনমেন্ট কিংবা প্রেজেন্টেশনগুলোতে কী কী তথ্য রাখা যায়, সে ব্যাপারে ধারণা পেতে আমি এই প্রযুক্তির সাহায্য নিই। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্যও এআই আমার কাছে বেস্ট হোম টিউটর।’

শিক্ষার্থীরা বলছেন, চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা মাইক্রোসফট কোপাইলটের মতো প্ল্যাটফর্মের কাছে ‘মামাবাড়ির আবদার’ করা যায় নিশ্চিন্তে। অনুবাদ থেকে শুরু করে বড় কোনো নিবন্ধের সারাংশটুকু তুলে আনা, যেকোনো কাজ সহজেই করে দিতে পারে এআই প্রযুক্তি। জুতসই ‘প্রম্পট’ বা নির্দেশনা দিতে জানলেই হলো। ফায়জুল বলছিলেন, ‘পরীক্ষা প্রস্তুতির সময়ও এআই বেশ কার্যকর। প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়, নিজের দুর্বলতা চিহ্নিত করা যায়।’

শিক্ষকেরা যা ভাবছেন

শেখা বা শেখানোর ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহার রুখে দেওয়ার পথ আর নেই, তা এখন স্পষ্ট। কিন্তু কীভাবে, কতটুকু ব্যবহার করা উচিত, তা নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত বলে মনে করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রভাষক আফনান ইউসুফ বলেন, ‘নিজের উন্নয়নের জন্য কেউ যদি এআই ব্যবহার করে, তাহলে উৎসাহই দেব। লেখাটা একটু ঠিকঠাক করে নেওয়া, ভুল শুধরে নেওয়া, এসব কাজে ব্যবহার করাই যায়। কিন্তু এমন যদি হয়, আমি অতিরিক্ত এআই–নির্ভর হয়ে পড়ছি, আমার সৃজনশীলতার চর্চা হচ্ছে না, তাহলে সতর্ক হওয়া জরুরি।’

ভিনদেশে বৃত্তি বা উচ্চশিক্ষার আবেদন করতে হলে অনেক সময় নিবন্ধ জমা দিতে হয়। কেউ যদি চ্যাটজিপিটি বা এ ধরনের কোনো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লিখিয়ে নেন, তাহলে তা ধরা পড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে শুরুতেই তাঁর আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে নিজস্বতা ধরে রাখা জরুরি। তাই নিজের সৃজনশীলতার চর্চাটাও চালু রাখতে হবে বলে পরামর্শ দেন অনেকে।

কথা হলো ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলের শিক্ষক স্বাক্ষর শতাব্দর সঙ্গে। শিক্ষকেরাও নানা কাজে এআই ব্যবহার করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মূলত তিন ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করি—শেখানো, শেখা আর মূল্যায়ন। লেকচার তৈরিতে, লেকচারের সঙ্গে গ্রাফিকস যোগ করার ক্ষেত্রে কিংবা লেকচার গুছিয়ে নিতে এআই কাজে লাগাই। প্রশ্ন তৈরির সময়ও এআইয়ের সাহায্য নিই।’

এআইয়ের ক্ষতিকর দিক প্রসঙ্গে স্বাক্ষর শতাব্দর মত, ‘অ্যাসাইনমেন্টের উদ্দেশ্য থাকে তথ্য খুঁজে বের করে লেখার দক্ষতা কতটুকু আছে, তা যাচাই করা। কেউ যদি শুধু তথ্য খুঁজতে এআই ব্যবহার করে, তাহলে ক্ষতি নেই। কিন্তু লেখাটা সাজিয়ে-গুছিয়ে বিশ্লেষণ করার চর্চাটা নিজেকেই করতে হবে। বিশ্লেষণ অংশে এআই ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীদের উচ্চতর দক্ষতা, যেমন ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং বা সৃজনশীলতা সঠিকভাবে যাচাই করার উপায় থাকে না। এতে ক্ষতিটা মূলত শিক্ষার্থীরই হয়।’