গত ২১ ফেব্রুয়ারি চীনভিত্তিক জনসংখ্যাবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইউওয়া পপুলেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। এতে জানা গেছে, সন্তান লালনপালনে সবচেয়ে বেশি খরচ চীনে। দেশটির মা-বাবারা তাঁদের আয়ের একটা বড় অংশ ব্যয় করেন সন্তান লালনপালনের পেছনে, যা জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ঢের বেশি।
গবেষণায় জানা গেছে, সন্তানের বয়স ১৭ বছর হওয়ার আগেই একজন চীনা অভিভাবককে গড়ে ৭৪ হাজার ৮০০ ডলার বা প্রায় ৮২ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। এখানেই শেষ নয়। তারপর যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্তানকে ব্যাচেলর ডিগ্রি শেষ করিয়ে আনতে তাঁদের খরচ করতে হয় আরও সাড়ে ৯৪ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় এক কোটি টাকার বেশি)।
সন্তান লালনপালনে খরচ করা এই পরিমাণ অর্থ চীনের মাথাপিছু জিডিপির ৬ দশমিক ৩ গুণ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মাথাপিছু জিডিপির ৭ দশমিক ৭৯ গুণ। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই এই ব্যয় চীনের অর্থনীতিতে ফেলেছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব। অন্যদিকে ইউরোপের দেশগুলোয় সন্তান লালনপালনে ব্যয় হয় মাথাপিছু জিডিপির ২ থেকে ৪ গুণ।
চীনের বিদ্যমান জনসংখ্যা হ্রাসের হার এবং বয়সী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বিবেচনায় এই পরিসংখ্যান বেশ উদ্বেগজনক। অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে চীনা নাগরিকেরা বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। ইউনিভার্সিটি অব পিকিংয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক লিয়াং জিয়ানঝাংয়ের নেতৃত্বে হওয়া এই গবেষণায় উঠে আসে সেই চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলো।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো চীন জনসংখ্যা হ্রাসের দিকে আছে। গত বছর দেশটিতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে ৯০ লাখ শিশু, যা ২০১৬ সালের তুলনায় অনেক কম। জনসংখ্যা হ্রাসের এই প্রবণতা জনশক্তি হ্রাসেও প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া প্রভাব ফেলে কর্মজীবীদের কর্মক্ষমতার গতি। চীনা নারীরাও এখন মাতৃত্ব এবং অভিভাবকত্বের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন। ২০১৭ সালে চীনের এক সন্তান নীতি বিলুপ্ত হওয়ার ফলে পরিবারগুলো এখন তিনটি সন্তান নিতে পারে। জন্মহার সমন্বয় করতে কিছু কিছু অঞ্চল সন্তানের সংখ্যার ওপর থেকে বিধিনিষেধও তুলে নিয়েছে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, চীনা নাগরিকদের মধ্যে সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা বিশ্বে প্রায় সর্বনিম্ন। এর প্রধান কারণ দুটি। এক, দেশটিতে সন্তান লালনপালনে ব্যয় অনেক বেশি। দুই, চীনের নারীরা পরিবার ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। মাতৃত্বকালীন ছুটি নিতে গেলে নারীদের ‘অন্যায় আচরণের’ সম্মুখীন হওয়ার অভিযোগ আছে। বদলি, বেতন হ্রাস বা পদোন্নতি আটকে যাওয়ার মতো সমস্যাও প্রকট। মনে রাখতে হবে, এখন চীনের নারীরা কিন্তু দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন। তারপরও এত সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন বলেই তাঁরা সন্তান নিতে অনাগ্রহী।
চীনের উচ্চ আবাসন মূল্য, সাশ্রয়ী ডে-কেয়ার সেন্টারের অভাব, স্কুলে শিশুদের সৃজনশীল কাজ এবং বেতন–ভাতাবাবদ অতিরিক্ত খরচ—মোটা দাগে এসবই সন্তান লালনপালনে খরচ এত বেশি হওয়ার কারণ। ছোট শহরগুলোর তুলনায় বেইজিং, সাংহাইয়ের মতো বড় শহরে এসব সমস্যা বেশি থাকায় সেখানে সন্তান লালনপালনে খরচও অন্য শহরগুলোর চেয়ে বেশি। এই দুই শহরে সন্তান লালনপালনে খরচ জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ।
সূত্র: সিএনএন