এই অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে—একের পর এক প্রতিষ্ঠানে সিভি (কারিকুলাম ভিটা বা জীবনবৃত্তান্ত) পাঠান, কিন্তু ডাক পান না। প্রাথমিক বাছাইতেই বাদ পড়ে যান। কী কী কারণে প্রথম দর্শনেই আপনার সিভি বাদ পড়তে পারে? জানিয়েছেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিনিয়র রিসোর্সিং ম্যানেজার তানজিনা গিয়াস
সিভিতে আপনার সঠিক ই-মেইল, ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না, শুরুতেই নিশ্চিত করা দরকার। সব সময় চেষ্টা করা উচিত, যে টেলিফোন নম্বর বা ই–মেইল আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন, সিভিতে সেটিই ব্যবহার করা। ভুল ফোন নম্বর বা ই–মেইল ঠিকানা দেওয়ার কারণে অনেকের কাছেই চাকরিদাতারা পৌঁছাতে পারেন না বা যোগাযোগ করতে পারেন না। সিভিতে বিশ্ববিদ্যালয় বা অফিসের ই–মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, অনেক সময় এসব ডোমেইন থেকে ই–মেইল ব্লক করে দেওয়া হয়। আপনি ই–মেইলে যাঁর রেফারেন্স ব্যবহার করছেন, তাঁর সঠিক ফোন নম্বর বা ই–মেইলও উল্লেখ করা খুব জরুরি।
সিভিতে বানান ও ব্যাকরণ ভুল হলে শুরুতেই একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। শুনতে খুব সাধারণ মনে হলেও এই ‘ছোটখাটো’ ভুলের কারণে আপনাকে মূল্য দিতে হতে পারে। সিভি লেখার পর অবশ্যই বানান ও ব্যাকরণে কোনো ভুল হলো কি না, তা যাচাই করতে হবে। এমএস ওয়ার্ড বা অনলাইনের অন্য কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করে খুব সহজে এই ভুল শুধরে নেওয়া যায়। সিভি লেখার পর নিজে দু–তিনবার পড়ে নিলে সবচেয়ে ভালো। প্রয়োজনে বন্ধু বা শিক্ষকের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। একটি ছোট উদাহরণ: ‘FROM’ ও ‘FORM’ দুটি বানানই শুদ্ধ, কিন্তু অর্থ আলাদা। মনের অজান্তেই আপনি হয়তো টাইপ করতে গিয়ে ভুল করে ফেলেছেন। এ ক্ষেত্রে বানান যাচাই করার সফটওয়্যার আপনাকে কোনো ভুল দেখাবে না। কিন্তু আপনি যখন পড়ে দেখবেন, তখন ভুল ধরতে পারবেন।
সিভিতে সঠিক ও যথাযথ থাকতে হবে। অপ্রাসঙ্গিক ও অনুপযুক্ত তথ্যের জন্য সিভি বাদ পড়ে যেতে পারে। আবার প্রয়োজনের তুলনায় খুব সামান্য তথ্য দিলে হয়তো নিয়োগদাতার আপনার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবেন না। সুতরাং ভারসাম্য বজায় রেখে সিভিতে শুধু অপরিহার্য তথ্য দিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সব সময় ওপরের দিকে রাখা উচিত। সিভিতে সাম্প্রতিক কাজের অভিজ্ঞতা এবং সর্বশেষ সাফল্যগুলো প্রথম দিকে রাখা উচিত। আপনি যে চাকরির জন্য আবেদন করছেন, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য রাখার চেষ্টা করুন।
সিভিতে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য দেওয়া নিশ্চয়ই অপরাধ। আপনার বর্তমান পদ বা সাফল্য সম্পর্কে মিথ্যা লেখা, চাকরি অথবা পড়ালেখার মধ্যে দীর্ঘ বিরতি নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া, পরীক্ষার ফলাফল পরিবর্তন করা অথবা উল্লেখ না করা—এসব কারণে সিভি বাদ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ব্যক্তিগত অপ্রয়োজনীয় তথ্য, অপ্রাসঙ্গিক আইকন, নিজের অনানুষ্ঠানিক ছবি—এসব দেখে অনেক নিয়োগদাতা আপনার ব্যাপারে অনাগ্রহী হতে পারেন।
সঠিক কাজের ধরনে আবেদন না করলেও সিভি বাদ পড়ে যায়। যেকোনো পদের জন্য সিভি দেওয়ার আগে অবশ্যই ‘জব ডেসক্রিপশন’ বা ‘আবেদনের প্রক্রিয়া’ পড়তে হবে। অপ্রাসঙ্গিক পদে কিংবা নির্ধারিত ধরন অনুসরণ না করে সিভি দিয়ে ইন্টারভিউয়ের অপেক্ষায় বসে থাকলে ভুল হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে বলে বা সিভির ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দিয়ে দেয়। আপনি সেটি অনুসরণ না করলে বা ‘জব ডেসক্রিপশন’–এর সঙ্গে আপনার যোগ্যতা মানানসই কি না, তা যাচাই না করলেও ফলাফল নেতিবাচক হতে পারে।