কোনো বাংলাদেশি গবেষক এই পুরস্কার পেলেন প্রথমবার

‘সপ্তম ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি) সম্মাননা পেয়েছেন আবুল বাশার
ছবি: সংগৃহীত

গবেষণার বিষয়টা কী? একটু সহজ করে বুঝিয়ে বলবেন?

শুরুতেই জানতে চেয়েছিলাম আবুল বাশারের কাছে। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ গবেষক ও প্রভাষক।

আবুল বাশার জানালেন, তিনি মূলত চিংড়ির খামার থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাসে অণুজীবের ভূমিকা খুঁজতে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে প্রচুর চিংড়ির খামার আছে। এসব খামার থেকে যে গ্রিনহাউস গ্যাস (কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড) তৈরি হয়, তা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আবুল বাশার গবেষণা করে দেখেছেন, এই গ্যাস নির্গমনের পেছনে ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া অণুজীবের (একধরনের এককোষী অণুজীব) ভূমিকা আছে। এই ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া অণুজীবের কিছু সদস্য আবার গ্রিনহাউস গ্যাস ভাঙতেও পারে। কোন শ্রেণির সদস্যরা গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করে এবং কোন শ্রেণির সদস্যরা গ্রিনহাউস গ্যাস ভাঙতে পারে—সেটিই তিনি অনুসন্ধান করেছেন।

এই গবেষণা ও অনুসন্ধানের পুরস্কার হিসেবেই ‘সপ্তম ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি) সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

৭ নভেম্বর মোনাকোর ঐতিহাসিক মন্টে কার্লো অপেরা হাউসে আয়োজিত হয় ১৭তম ‘প্ল্যানেটারি হেলথ অ্যাওয়ার্ড’। অনুষ্ঠানে মোনাকোর রাজপুত্র দ্বিতীয় আলবার্ট (আলেক্সান্দ্রা লুই পিয়েরে গ্রিমাল্ডি) বাশারের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখা তরুণ গবেষকদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় এই আয়োজনে।

আইপিসিসি ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের অধীনে প্রতিষ্ঠিত। ২০০৭ সালে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক গবেষণার জন্য এ সংস্থাটি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পায়। সেই থেকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে নতুন নতুন গবেষণার জন্য স্বীকৃতি ও উদ্দীপনা দিতে দুই বছর পরপর তরুণ গবেষকদের আইপিসিসি সম্মাননা দেওয়া হয়। মূলত ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনতে যাঁরা অবদান রাখছেন, তাঁরাই গুরুত্ব পান এই মঞ্চে। এ বছর ৪৫২ জন প্রতিযোগীর মধ্য থেকে ২৪ জন গবেষককে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়। কোনো বাংলাদেশি গবেষক পুরস্কার পেলেন এই প্রথমবার।

ইকোপ্রন প্রকল্পের আওতায় আবুল বাশারের গবেষণায় অর্থায়ন করেছে ডেনিশ ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ড্যানিডা)। কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় গ্যাস-ক্রোমাটোগ্রাফি ও নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন, পানির গুণাগুণ কীভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে জড়িত জিনের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে।

আবুল বাশার বলেন, ‘চিংড়িঘের থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া ও আর্কিয়া। তবে আশার কথা হলো, এদের কিছু সদস্যই আবার গ্রিনহাউস গ্যাস ভাঙতে সক্ষম। তাই আমরা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে ও ভক্ষণে শ্রেণিভিত্তিক অবদান শনাক্ত করেছি, যা আমাদের কার্যকরী সমাধান খুঁজতে সাহায্য করবে। আমার এই গবেষণার মূল লক্ষ্যই হলো গ্রিনহাউস গ্যাস ভাঙতে সক্ষম অণুজীব শনাক্ত করা ও চাষপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা। এতে করে চিংড়ি চাষ জলবায়ুবান্ধব হবে। দীর্ঘমেয়াদি এই পরিকল্পনায় আইপিসিসি সম্মাননা অবশ্যই আমাকে অনুপ্রেরণা দেবে।’

আবুল বাশার ২০২২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাবল-ডিগ্রি পিএইচডি প্রোগ্রামের আওতায় গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।