এই মুরগির দাম ৭ লাখ টাকা, একেকটি ডিমের দাম ২ হাজার টাকা

কৃষ্ণবর্ণের আয়াম সেমানি বিরল প্রজাতির মুরগি। এর পালক, চামড়া, মাংস, এমনকি হাড়ও কালো। ইন্দোনেশিয়ার এই মুরগিকে স্থানীয় বাসিন্দারা মূল্যবান পোষা প্রাণী হিসেবেই বিবেচনা করেন। আয়াম সেমানিকে বলা হয় ‘মুরগির দুনিয়ার ল্যাম্বরগিনি’।

আয়াম সেমানিকে বলা হয় ‘মুরগির দুনিয়ার ল্যাম্বরগিনি

কেন এত বিখ্যাত

জাভানি ভাষায় সেমানি অর্থ পুরোপুরি কালো। আয়াম মানে মুরগি। আয়াম সেমানি মুরগি অন্য এক প্রজাতি কেদু মুরগি থেকে এসেছে। কেদু মুরগি জাভার কেদু অঞ্চলের একটি স্থানীয় জাত। এই জাতের মুরগিটি কেবল তার কালো পালকের কারণেই নয়, কালো ত্বক, হাড়, পেশি ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গের কৃষ্ণবর্ণের কারণে আলোচিত।

ফাইব্রোমেলানোসিস নামের জেনেটিক মিউটেশনের কারণে এদের শরীরে মেলানিনের অত্যধিক উৎপাদন হয়। ফাইব্রোমেলানোসিসের কারণে এসব মুরগির মেলানিন থাকে সাধারণ মুরগির তুলনায় ১০ গুণ। সবচেয়ে গভীর রঞ্জকওয়ালা প্রাণী হিসেবে এই মুরগির পালক থেকে শুরু করে ঠোঁট, জিব, চোখ, নখ, মাংস ও শরীর কালো হয়। ডিমও কালো হয়।

একটি উচ্চমানের আয়াম সেমানির দাম ৬ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। একেকটি ডিম বিক্রি হয় ১৬ ডলার বা প্রায় ২ হাজার টাকায়।

যাঁরা ইউরোপের কালো রঙের সংস্কৃতি, যেমন মেকআপ, পোশাক ধারণ করেন, তাঁদেরকে বলে ‘গথিক’। গথিক সংস্কৃতিধারীদের বলে ‘গথ’। কালো রঙের বলে এই মুরগিকে গথ মুরগিও বলা হয়। আর স্টার ওয়ার্স কাল্পনিক দুনিয়ার এক সম্প্রদায়ের নাম সিথ। তাদের স্মরণে এই মুরগিকে সিথ লর্ড পাখিও বলা হয়।

ফাইব্রোমেলানোসিসের কারণে এসব মুরগির মেলানিন থাকে সাধারণ মুরগির তুলনায় ১০ গুণ

সত্যিই সৌভাগ্য আনে এই মুরগি?

এই মুরগির জাত ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপ থেকে উদ্ভূত। ধারণা করা হয়, ১২ শতক থেকে এই মুরগি ভিন্ন রঙের কারণে ধর্মীয় ও রহস্যময় উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। ডাচ ঔপনিবেশিক বসতি স্থাপনকারীরা পরে এটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। জ্যান স্টিভেরিং নামের একজন ডাচ খামারি ১৯৯৮ সালে এই মুরগি প্রথম ইউরোপে আমদানি করেন। এর ফলে চেক প্রজাতন্ত্রের মানুষদের আয়াম সেমানি চোখে দেখা ও চেখে দেখার সুযোগ হয়।

জাভানিজ সংস্কৃতিতে আয়াম সেমানিকে ‘পবিত্র পাখি’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই মুরগি রহস্যময় ক্ষমতার অধিকারী বলে তাঁদের বিশ্বাস। প্রায়ই আচার ও ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে এই মুরগির ব্যবহার দেখা যায়। বলা হয়, এই মুরগি সৌভাগ্য আনে, খারাপ আত্মা থেকে রক্ষা করে ও আধ্যাত্মিক জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। জাভা অঞ্চলে এখনো অনেকে আয়াম সেমানি মুরগিকে সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বাড়িতে রাখে মানুষ। সত্যিই কতটা সৌভাগ্য আনে, তা অবশ্য নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।

আলোচিত রেসিপি

আয়াম সেমানি দিয়ে রান্না করা পদেরও বেশ খ্যাতি আছে। এই মুরগির মাংস অন্যান্য জাতের তুলনায় চর্বিহীন ও স্বাদে বেশ মজাদার। কালো রঙের বলে অনেকে অবশ্য এই মুরগির মাংস খেতে চান না। আয়াম সেমানির মাংসে তৈরি বিখ্যাত খাবারের মধ্যে একটি আয়াম সেমানি স্যুপ। একটি ঐতিহ্যবাহী ইন্দোনেশীয় খাবার হিসেবে জনপ্রিয়। এই স্যুপ সাধারণত হলুদ, আদা, রসুন ও লেমন গ্রাসের মতো বিভিন্ন ভেষজ এবং মসলা দিয়ে রান্না করা হয়। আরেকটি জনপ্রিয় খাবার হলো আয়াম সেমানি রেনদাং। এই রেসিপিতে মুরগিকে নারকেল দুধ ও মসলার মিশ্রণে ধীরে ধীরে রান্না করা হয়।