স্কুল–কলেজে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় ইংরেজিকে শুধু ভাষা নয়, রীতিমতো ‘পরীক্ষা’ ভেবে বসি। অথচ নতুন একটা ভাষা শেখা তো দৈনন্দিন জীবনে চর্চার অংশ হতে পারে। পদ্ধতিটা একটু বদলে নিলেই ইংরেজি শেখার যাত্রা হতে পারে আনন্দদায়ক।
পডকাস্ট একধরনের অডিও অনুষ্ঠান। বিনোদনমূলক আয়োজন থেকে শুরু করে অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তৃতা, রাজনৈতিক আলোচনা কিংবা দক্ষতা উন্নয়নসংক্রান্ত আধেয়—পডকাস্টে সবই থাকে। অনেক তরুণ ইংরেজি শেখার জন্য পডকাস্ট শোনেন। প্রতিদিনের অবসর সময়টা কিন্তু পডকাস্ট শোনার পেছনে ব্যয় করতে পারেন। ব্রিটিশ কাউন্সিল, বিবিসির পডকাস্ট থেকে ইংরেজি শেখা ও বোঝার নানা কলাকৌশল সম্পর্কে জানতে পারবেন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের পডকাস্টের লিংক পাবেন এখানে।
বিবিসির পডকাস্টের লিংক এখানে।
টেড টক বক্তৃতার মঞ্চ। এই মঞ্চে বক্তারা তাঁদের ভাবনা উপস্থাপনের সুযোগ পান। টেড টকের ওয়েবসাইটে গান, নৃত্যকলা, অ্যানিমেশন থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বক্তব্যও আপনি পাবেন। মার্কিন লেখক ও মনোবিদ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক এমি ক্যাডি, পেশাসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক সিমন সিনেক, মার্কিন লেখক ও অধ্যাপক ব্রেনে ব্রাউন, স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের বক্তব্য বেশ কাজে আসবে। এসব বক্তব্য শুনলে শুধু ইংরেজি শোনার দক্ষতাই বাড়ে না, বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে নিজের ধারণা (আইডিয়া) কীভাবে উপস্থাপন করতে হয়, সে সম্পর্কেও জানা যায়। টেড টকের ওয়েবসাইট (www.ted.com/talks) কিংবা ইউটিউবেও ভিডিওগুলো পেয়ে যাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলব্রাইট বিজনেস ফেলো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ মনে করেন, এখনকার সময় ইংরেজি শেখার জন্য অডিও বই বেশ কাজের। তিনি বলেন, ‘ব্যবসাসংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বই আছে। অনুপ্রেরণাদায়ক ঘটনা, আলোচিত ব্যক্তিদের জীবনীও অডিও বই আকারে পাওয়া যায়। ইউটিউবে অডিও বইয়ের বেশ কয়েকটি চ্যানেল আছে। এ ছাড়া অডিবলের মতো অ্যাপ থেকেও অডিও বই শোনা যায়। গল্প, উপন্যাস, নন-ফিকশন—সবই পাবেন। অনলাইন শিক্ষাসহায়ক প্ল্যাটফর্ম শিখোর ইংরেজি প্রশিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর স্নাতক তাশফিকাল সামি বলেন, ‘অডিও বইয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি অন্য কোনো কাজ করার পাশাপাশি শুনতে পারবেন। এতে সময় বাঁচে, আবার দক্ষতাও অর্জিত হয়।’
ধরুন, প্রতিদিন বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ছোট্ট একটা চিরকুটে ১০টি শব্দ লিখে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। লক্ষ্য ঠিক করলেন, নতুন এই ১০টি শব্দ আপনি আয়ত্ত করবেন। পথে যেতে যেতেই মনে মনে শব্দগুলো ব্যবহার করে বাক্য গঠন করুন। সারা দিনের ক্লাস বা কাজ শেষে ফেরার পথে আবার ঝালাই করে দেখুন, শব্দগুলো আপনার মনে আছে কি না। একই ধরনের শব্দও একসঙ্গে শেখার চেষ্টা করতে পারেন। যেমন বড় বা ছোট তুলনা করার সময় আপনি হয়তো সব সময় Big ও Small শব্দ দুটি ব্যবহার করেন। little, tiny, mini, miniature, micro, huge, large, enormous, gigantic… এ ধরনের শব্দগুলোও শিখে নিতে পারেন। এতে আপনার ইংরেজি শব্দভান্ডার (ভোকাবুলারি) সমৃদ্ধ হবে।
একজন সঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন, যিনি আপনার মতোই ইংরেজি শিখতে আগ্রহী। দুজন নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কথা বলুন। এতে জড়তা অনেকখানি কেটে যাবে। তাশফিকাল সামি বলছিলেন, ‘যেকোনো ভাষায় দক্ষতা অর্জনের জন্য অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা অনেকে ভয় পাই যে হয়তো আমার ভোকাবুলারি খুব একটা সমৃদ্ধ নয়। কিন্তু সত্যি বলতে আপনি যে পরিমাণ ইংরেজি শব্দ জানেন, সেগুলো দিয়েই কথা বলা সম্ভব। সমস্যাটা ভোকাবুলারি নয়, মূল সমস্যা হলো অনুশীলনের অভাব।’ যদি মুখোমুখি বসে কারো সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না-ই পান, প্রয়োজনে ইংরেজিতে বার্তা বিনিময় (চ্যাটিং) করতে পারেন। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে এই চর্চা করলেও উপকার পাবেন।
আপনার বাহন যদি বাস, রিকশা বা গাড়ি হয়, তাহলে যানজটে বসে কিন্তু নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করতেই পারেন। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইংলিশ অ্যান্ড মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সাবীহা সালেক বলেন, ‘দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলাটা খুব উপকারী। ব্যাগে সব সময় ২-৩টি ছোটখাটো বই রাখতে পারেন। দেখবেন যানজটের বিরক্তি অনেকটা কমে যাবে।’ কাগজের বই সঙ্গে রাখার পাশাপাশি মুঠোফোনেও পিডিএফ আকারে বই সংরক্ষণ করতে পারেন। এ ছাড়া ইংরেজি পত্রিকা পড়লেও দক্ষতা বাড়ে।
অবসরে অনেক সময়ই আমরা আকাশ-পাতাল চিন্তা করি। ভাবনার অংশটাও কিন্তু ইংরেজিতে করতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইংরেজি বলার বা লেখার সময় আমরা মনে মনে বাংলায় বাক্যটা সাজাই, তারপর ইংরেজিতে লিখি বা বলি। ইংরেজিতে ভাবার চর্চা করলে কাজটা অনেকখানি সহজ হয়ে যায়।