প্রেমিকের মৃত্যু কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করল তাঁকে

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে মনের বাক্সে জমা হয়েছে পাঠকের ভালোবাসার নানা রকম গল্প। কেউ প্রথম দেখায় প্রেমে মজেছেন, কেউ আবার স্বামীর অকাল প্রয়াণে হলেন শোকে পাথর। তেমনই দুটি ভালোবাসার গল্প পড়ুন এখানে

হ্যাংলার মতো শুধু ওদিকেই চেয়ে রইলাম

পিঠা উৎসবে প্রথম দেখা

বেলা গড়িয়েছে অনেকখানি। হাড়কাঁপানো শীতে ভালো ঘুম হয়নি। তাড়াহুড়া করে এলোমেলো চুলে কলেজের দিকে রওনা হলাম। সরকারি কলেজে পিঠা উৎসব হচ্ছে। কলেজে পৌঁছাতেই উদ্বোধন শেষ। পিঠা উৎসবের স্টলে ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ চোখ আটকে গেল। এমন বুদ্ধিদীপ্ত গভীর টানা টানা চোখ আগে কখনো দেখিনি। চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলাম। মিনিটখানেক পর আবার তাকালাম। একবার নয়, বারবার। হ্যাংলার মতো শুধু ওদিকেই চেয়ে রইলাম। গণিতের ছাত্র না হয়ে সাহিত্যের ছাত্র হলে কালিদাসের মেঘদূত থেকে কোট করে তার বর্ণনা দিতাম।

কেউ বুঝল না, কেউ জানল না এই শীতের সকালে কী ঘটে গেল। আমিও কি ছাই ঠিক বুঝতে পেরেছিলাম? আমি তো আগে কোনো নারীর দিকে অমন করে তাকাইনি। কোনো নারীও তো আমাকে অমন মাতাল করে তোলেনি। প্রথম দেখার পর মনের মধ্যে একটা আশ্চর্য টান অনুভাব করেছিলাম। উপলব্ধি করলাম আমার জীবনযুদ্ধের নতুন সেনাপতি হাজির! এগিয়ে গেলাম, কথাও হলো। জানতে পারলাম মেয়েটিও গণিতের ছাত্রী। অপেক্ষা করছি হয়তো আবার আমাদের দেখা হবে। হয়তো কেন! নিশ্চয়ই দেখা হবে।

ইমরান মাসুদ, গাইবান্ধা

তোমার স্মারক নিয়েই বেঁচে আছি

তোমার সন্তান এখন বড় হয়েছে, মাকে সে ভালোবাসে

পরিবার আর সমাজের বাইরে গিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। তার জন্য সবকিছু ছাড়তে হয়েছিল। তরুণ বয়সে তোমাকে ভালোবাসার দিনগুলো আজ অনেক বেশি মনে পড়ে। তুমি বলতে সময়ের সঙ্গে সব ঠিক হয় যাবে। কই, ঠিক তো হলো না। মা-বাবার সঙ্গে জেদ করে তোমার হাত ধরে পালিয়ে গেলাম। তুমিও আমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখলে প্রতিদিন। আমাদের সেই উন্মাতাল প্রেম আর সংসারের দিনগুলো এখনো আমাকে সুখের দিশা দেয়। অ্যালবাম খুলে বসি, ডায়েরির পাতার ধুলো মুছি। হঠাৎ তোমার ক্যানসার ধরা পড়ল। আমার পেটে তখন ছয় মাসের ধ্রুব। নিজে কী যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে, অথচ আমাকে সান্ত্বনা দিতে। বলতে, ধ্রুব আমাকে তোমার মতোই ভালোবাসবে। সন্তানই হবে তোমার ভালোবাসার স্মারক।

দুই বছর যুদ্ধ করে জীবনের ইতি টানলে তুমি। আমাকে রেখে গেলে কঠিন এক বাস্তবতার মুখে। তবে তোমার সন্তান এখন বড় হয়েছে, মাকে সে ভালোবাসে। কিন্তু ভয় হয়, কত দিন আর সে আমার কাছে থাকবে। ছেলেকে আমি তোমার আদর্শেই বড় করতে চেষ্টা করছি। সবাই যখন ওর কোনো সাফল্যের প্রশংসা করে, আমি জানি তুমি খুশি হচ্ছ। এই একটা সান্ত্বনা নিয়েই তো বেঁচে আছি। এই জীবনে আমাদের তো খুব বেশি সময় কাটানো হলো না, পরকালে আমাকে আরও কাছে রেখো।

আয়না বিশ্বাস, মাগুরা