দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মেহরাজ: ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (সি ইউনিট)—দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন মেহরাজ হোসেন। আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের সাবেক এই শিক্ষার্থী হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। স্কুলে পড়ার সময় বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও খেলেছেন। খেলাধুলা কীভাবে তাঁকে পড়ালেখায়ও প্রেরণা জোগাল, সে গল্পই শুনলেন তানভীর রহমান

স্কুলপর্যায়ে পেশাদার ক্রিকেট খেলতেন মেহরাজ

২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় আমি একদম ছোট। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে দিল। তখন থেকে ক্রিকেটের প্রতি একটা অন্য রকম টান। বাসার নিচে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতাম। স্কোরবোর্ডের হিসাব-নিকাশের দায়িত্ব পড়ত আমার ওপর। এভাবে বর্ণপরিচয়ের আগেই আমার সংখ্যার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। যখন পড়ালেখা শুরু করলাম, অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে গণিতটাই বেশি ভালো লাগত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে এসে ইনটেন্স ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হই। পরে বয়সভিত্তিক অনূর্ধ্ব-১৪ ও অনূর্ধ্ব-১৬-এর টুর্নামেন্ট খেলতে সাভারে গিয়েছি। ঢাকার বাইরে লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা—এসব জায়গায় গিয়েও খেলা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ঢাকা মেট্রো অনূর্ধ্ব-১৬-এর জন্য একটা ট্রায়াল হয়, সেখানে (২০১৭-১৮ সেশনে) প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলাম। মন-প্রাণ দিয়ে খেলেছি। সেখান থেকে বিকেএসপিতেও ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে। ২০১৭ সালে জেএসসি পরীক্ষার সময় খেলাধুলা থেকে ছোট্ট একটা বিরতি নিলাম। প্রায় এক মাসের মতো। তাতে কাজও হয়েছিল। ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ পেয়েছিলাম। পরে ভাবলাম, খেলাধুলায় যেহেতু ফোকাস করতে চাচ্ছি, বিজ্ঞান বিভাগ না নিয়ে ব্যবসায় শিক্ষা নিলে চাপটা কম থাকবে। পড়ালেখা আর খেলাধুলা—দুটোই চালাতে পারব। মূলত, এসব ভেবেই মাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা বেছে নিই।

২০১৬ সাল থেকে স্কুল পর্যায়ে খেলতাম, বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজের হয়ে। প্রথম বছরেই অর্ধশতক করেছি। ফাইনালে সেবার আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল ভাসানটেক স্কুল। সেই বছর রানারআপ হয়েছিলাম। টানা চার বছর আমরা আন্তস্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়েছি। শেষ দুই বছর আমি ছিলাম অধিনায়ক। নবম-দশম শ্রেণিতে থাকাকালে আন্তস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টেও খেলেছি।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একটা বড় ইনজুরি হয়, ডান হাতের কবজির একটা হাড় নড়ে যায়। চিকিৎসকেরা বললেন, ছয়-সাত মাস খেলার বাইরে থাকতে হবে। আমি অবশ্য পেশাদার খেলাধুলা একেবারেই ছেড়ে দিলাম। কারণ, ছয়-সাত মাস পিছে পড়ে গেলে প্রথম থেকে যাত্রাটা শুরু করতে হবে। ভাবলাম, এবার তাহলে পড়ালেখায় মন দেওয়া যাক। পরে দশম শ্রেণিতে আন্তস্কুল ফুটবল, হ্যান্ডবল খেলেছি। সেটা একেবারেই শখে। পেশাদার খেলা আর হয়নি।

মেহরাজ হোসেন

মিরপুর ১৪ থেকে কল্যাণপুর গিয়ে খেলা, খেলা শেষ করে আবার ফেরা—মাঝেমধ্যে অনেক রাত হয়ে যেত। বেশি ক্লান্ত থাকলে হয়তো চট করে ঘুমিয়ে পড়তাম। খেলাধুলার জন্য পড়ালেখায় একটু সমস্যা হতো, তবে সেই ঘাটতিটা পূরণ করে নেওয়া যেত। পরিবারের সমর্থন ছিল বলেই সব দিক সামাল দিতে পেরেছি। জানিয়ে রাখি, এসএসসিতে আমি কিন্তু জিপিএ-৫ পাইনি। পেয়েছি ৪.৮৯। হয়তো তখনো খেলাধুলা আমার প্রথম পছন্দ ছিল বলেই।

অনেকে জানতে চাইছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হওয়ার মতো সফলতা কীভাবে এল? আমি অবশ্য এটাকে সাফল্য মনে করি না। মাত্র তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। আরও কত পথ বাকি! এইচএসসি পাস করার পর হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীরা পরিচয়হীন হয়ে পড়ে। কোথাও ভর্তি হওয়ার আগপর্যন্ত এই পরিচয়হীনতাটা থাকে। এখন একটা ঠিকানা হয়েছে—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এতেই আমি খুশি। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় আমার নাম এসেছে। তবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডেই পড়ব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে।

অ্যাকাউন্টিংও তো আদতে সংখ্যা, গণিতেরই খেলা। সেই ছেলেবেলা থেকে গণিত ভালোবেসেই বড় হয়েছি। ক্রিকেট খেলতে গিয়ে হিসাব-নিকাশের প্রতি ভালোবাসাটা আরও বেড়েছে। ভবিষ্যতে আরও খেলার সুযোগ হবে কি না জানি না। তবে আপাতত ইচ্ছে আছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি (সিএ) পড়া। তারপর হয়তো কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে যোগ দেব।