কানাডার রাজপথে কেন একটা ঘড়ি বসিয়েছিলেন বাংলাদেশি আজিজ

উইন্ডসরে ‘বাংলাদেশ পিস ক্লক’
ছবি: সিবিসি

কিছুদিন আগে সস্ত্রীক কানাডা গিয়েছিলাম। ছেলেমেয়েদের একনজর দেখা এবং দেশ বেড়ানো এই ছিল উদ্দেশ্য। ছেলে সামি সপরিবার টরন্টো থাকে আর কানাডার ইউনিভার্সিটি অব উইন্ডসরে পড়ছে মেয়ে নাওমি। স্বামীসহ ওখানেই থাকে। কানাডার সর্বদক্ষিণে অন্টারিও প্রদেশের ১২০ দশমিক ৬ বর্গকিলোমিটারের শহরটিতে প্রায় ৩০০ বাংলাদেশি পরিবারের বাস।

উইন্ডসরে ডাউন টাউনের পথে হাঁটতে গিয়ে একটা ঘড়িতে একদিন চোখ আটকে গেল। সড়ক দ্বীপ আলো করে আছে ঘড়িটা। দুই পাশের সড়ক দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলেছে দ্রুতযান। ঘড়িটায় ইংরেজিতে লেখা ‘বাংলাদেশ পিস ক্লক’। খোঁজখবর করে তাৎক্ষণিক কিছু জানা গেল না। কিন্তু কৌতূহলী মনে বারবার ফিরে ফিরে আসতে লাগল কয়েকটা প্রশ্ন: কেন এটার নাম বাংলাদেশ শান্তি ঘড়ি? কে এটা স্থাপন করেছেন? তিনি কি বাঙালি নাকি ভিনদেশি?

আজিজ চৌধুরী

দেশে ফিরে এলেও ভাবনাগুলো আমাকে ছাড়ল না। শেষে প্রযুক্তির সহায়তা নিলাম। বহু অন্বেষণে জানা গেল পেছনের মানুষটির নাম। তিনি একজন বাংলাদেশি। নাম আজিজ চৌধুরী। ৩৫ ডলার মাত্র সম্বল আর চোখে বিপুল স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭৯ সালে ভাগ্যান্বেষণে উইন্ডসরে এসেছিলেন তিনি। সেই মানুষটিই পরে তিল তিল করে জমানো সঞ্চয়ের টাকা থেকে ২০১০ সালে নগর কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দেন ৩০ হাজার কানাডীয় ডলার। সেই টাকা দিয়েই স্থাপন করা হয় এই শান্তির ঘড়ি। ঘড়ির কথাই কেন ভেবেছিলেন, কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে (সিবিসি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেটাও স্পষ্ট করেন তিনি। ডাউন টাউনের পথে হাঁটতে হাঁটতে প্রায়ই মানুষ তাঁকে সময় জিজ্ঞেস করত। মানুষের এই জিজ্ঞাসার একটি স্থায়ী সমাধানের কথা তিনি ভাবতে থাকেন। সেই ভাবনারই ফসল ‘বাংলাদেশ পিস ক্লক’। টাকা দেওয়ার সময় দুটি শর্তও দিয়েছিলেন আজিজ, ঘড়িটায় বাংলাদেশের নাম থাকতে হবে আর থাকতে হবে শান্তির বার্তা। তিনি শান্তিপ্রিয় মানুষ, শান্তিই ছিল তাঁর আমরণ আরাধ্য।

উইন্ডসর পাবলিক লাইব্রেরির কর্মী ছিলেন আজিজ চৌধুরী। ২০১৮ সালে ৭৭ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তাঁর স্বপ্নের প্রতীক এই ‘বাংলাদেশ পিস ক্লক’-এ বেঁচে থাকবেন তিনি। ঘড়ির কাঁটাগুলো টিকটিক করে ঘুরবে আর বিশ্ববাসীর জন্য দিয়ে যাবে শান্তির বার্তা।