নিজের বাগানে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জৈব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে কে না চায়? তবে এই সার পয়সা দিয়ে কেনাটা অনেকের জন্যই বেশ ব্যয়সাধ্য। আমি আমার ছাদবাগানের জন্য কোনো টাকা খরচ না করেই রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট থেকে জৈব সার তৈরির উপকরণ সংগ্রহ করি। প্রথমে টবের পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা ঠিক করে সামান্য ইটের টুকরা বিছিয়ে দিই। এরপর সমান করে এক স্তর মাটি দিয়ে সবজি আর ফলের উচ্ছিষ্ট ও খোসা, পচে যাওয়া ফল-সবজি এগুলো দিই। এরপর আবার এক স্তর মাটি দিই যাতে পোকা না ধরে।
এভাবে টব বা ড্রামের সাইজ বুঝে দুই থেকে পাঁচ স্তরে মাটি আর রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট দিই। পরে এটা দুভাবে ব্যবহার করি। গাছ লাগানোর দরকার হলে এর ওপরে বেশি করে মাটি দিয়ে গাছ লাগাই আর সারের দরকার হলে ছায়ায় রেখে দিই দুই থেকে তিন মাস। এরপরে টবের সম্পূর্ণ মাটিটা ভালো করে মিশিয়ে রোদে শুকিয়ে নিলেই সার তৈরি হয়।
গাছে ফুলের পরিমাণ বাড়াতে, বিশেষ করে গোলাপগাছে ম্যাজিকের মতো কাজ করে শুকনা চা–পাতা। দুধ-চিনি ছাড়া চায়ের লিকার বানিয়ে ব্যবহৃত চা–পাতা রান্নাঘরে একটা আলাদা পাত্রে রেখে দিই। কিছুদিন পরে পরে এই শুকনো চা–পাতা গাছের গোড়ায় দিয়ে মাটিটা খুঁচিয়ে ভালো করে মিশিয়ে দিই। চা–পাতা গাছের যত্নে দারুণ কাজ করে।
ফুলকে ফলে রূপান্তরিত করতে পেঁয়াজের খোসা উপকারী। গাছের গোড়ায় সরাসরি অথবা টবের মাটি খানিকটা তুলে পেঁয়াজের খোসা দিয়ে মাটিচাপা দিয়ে এটা ব্যবহার করতে পারেন।
বাইরের দেশগুলোর গার্ডেনিং ভিডিওতে প্রায়ই দেখা যায় কালো মাটিতে গাছ লাগানো হচ্ছে। এই সার মাটি রেডি করাও খুব সহজ। ঢাকনাসহ একটা পাত্র নিন। এতে ২ ইঞ্চি মাটি দিয়ে তার ওপরে কলার খোসা আর ৪ ইঞ্চি পরিমাণ ব্যবহৃত চা–পাতা দিন। ওপরে আবার ২ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি দিন। পাত্র না ভরা পর্যন্ত এভাবে দিন। এবার ওপরের মাটিতে হালকা পানি ছিটিয়ে ঢাকনা আটকে ছায়ায় রেখে দিন। তিন বা চার মাস পরে ঢাকনা খুলে মাটি ভালো করে মিশিয়ে নিলেই পেয়ে যাবেন কাঙ্ক্ষিত সার।
ডিমের খোসা গাছের ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। কিন্তু সরাসরি ডিমের খোসা মাটিতে দিলে পোকা হবে। পাশাপাশি এটা সহজে মাটিতে মিশবেও না। ডিমের খোসা খুব ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে গুঁড়ো করে গাছের গোড়ায় দিন।
চাল-ডাল ধোয়ার সময় পানিটা ফেলে না দিয়ে একটা পাত্রে রেখে দিন। পানির পরিবর্তে এটা গাছের গোড়ায় দিন। এই পানি তরল সারের কাজ করবে।
এই তাপপ্রবাহের সময় ছাদে গাছ বাঁচিয়ে রাখা বেশ কঠিন। এ ক্ষেত্রে শাক কুটে তার ফেলে দেওয়া পাতাগুলোর সঙ্গে বাগানের গাছের পাতা ছেঁটে নিন। সব এবার মাটির ওপরে দিয়ে দিন। এতে যেমন মাটিতে সরাসরি রোদের তাপ লাগবে না, তেমন মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে এই শাক পাতা। এতে যেমন পানি কম খরচ হচ্ছে, আবার গাছও ভালো থাকছে। যখন দেখবেন পাতাগুলো একেবারে শুকিয়ে যাচ্ছে, তখন ভালো করে খুঁচিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেই এই পাতাগুলো সার হয়ে যাবে।