বিএএফ শাহীন কলেজে সহপাঠীরা ফিরলেও নেই আহনাফ, তাকে স্মরণ করেই রাখা হলো ফুলের তোড়া
বিএএফ শাহীন কলেজে সহপাঠীরা ফিরলেও নেই আহনাফ, তাকে স্মরণ করেই রাখা হলো ফুলের তোড়া

যে আসনে বসে আহনাফের পরীক্ষা দেওয়ার কথা, সেখানে পড়ে থাকল এক তোড়া ফুল

আজ ১৮ আগস্ট রোববার দুপুরের ঘটনা। পরীক্ষার হলে একটা নির্দিষ্ট বেঞ্চের ওপর ফুলের তোড়া আর সাদা কাগজ রাখতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন প্রায় সবাই। সাদা কাগজে ছাপা হরফে লেখা ‘শাফিক উদ্দিন আহম্মেদ আহনাফ’ নামটাই কাঁদিয়ে দিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল আহনাফ। প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে ওঠার চূড়ান্ত পরীক্ষার তিনটিতে অংশ নিয়েছিল সে। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। লম্বা বিরতির পর সহপাঠীরা সবাই আজ আবার পরীক্ষার হলে বসেছে, শুধু আহনাফ নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল সে। ৪ আগস্ট রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে গুলিতে প্রাণ হারায় ১৭ বছর বয়সী আহনাফ।

পরীক্ষার হল থেকে সবাই ফিরে গেছে ঘরে, আহনাফের নামটা রইলো পড়ে একা

২০২৫ সালে আহনাফের এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে শুরু থেকেই আহনাফ ছিল সোচ্চার। আন্দোলনে অংশ নিয়ে টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটে আহত হয়ে সে একবার বাসায় ফিরেওছিল। তবে ৪ আগস্ট আর ফিরে আসতে পারেনি। আহনাফের মা সাফাত সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাইরের পরিস্থিতি ভালো না থাকায় ৪ আগস্ট সকাল থেকেই ছেলেকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করছিলাম। তবে ছেলে কিছুতেই নিষেধ মানতে চাচ্ছিল না। বারবার বলছিল, সে যাবেই। বেলা সাড়ে তিনটার পর বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যায়।’

নেই শুধু আহনাফ

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ফোন করলে আহনাফ তার মাকে বলে, ‘মিরপুর ১০ নম্বরে আছি, ভালো আছি। চিন্তা কোরো না।’

এরপর ছেলেকে আর ফোনে পাননি তার মা-বাবা। একটা সময় পর ছেলের ফোন আর বাজে না। এরপর সম্ভাব্য সব জায়গায় গিয়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। বন্ধুরাও কেউ খোঁজ দিতে পারেনি। এরপর অচেনা একটা নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোন পেয়ে আহনাফের বাবা সাফাত সিদ্দিকীসহ পরিবারের সদস্যরা যান মিরপুরের ইসলামিয়া হাসপাতালে। সেখানে এক ব্যক্তি আন্দোলনে প্রাণ হারানো মানুষদের ছবি দেখান। ছবি দেখে তাঁরা বুঝতে পারেন, এ তো আহনাফ!

নিহত শাফিক উদ্দিন আহম্মেদ আহনাফ

ইসলামিয়া হাসপাতাল থেকে সাফাত সিদ্দিকীদের বলা হয় শেরেবাংলা নগরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে। সেখানে গিয়ে মর্গে আহনাফের লাশ পান পরিবারের সদস্যরা।

আহনাফ সহশিক্ষা কার্যক্রমে খুব ভালো ছিল বলে জানান তাঁর শিক্ষক বোরহান উদ্দিন। ফিন্যান্সের এই প্রভাষকই আজ পরীক্ষার হলে আহনাফের নামে রাখা ফুলের তোড়ার ছবি তুলে কলেজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন। এরপর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ে।

শিক্ষকদের উদ্যোগে রাখা হয় ফুলের তোড়া

বিএএফ শাহীন কলেজ ঢাকার ভাইস প্রিন্সিপাল শাকিলা নার্গিস বলেন, ‘আন্দোলনের পর সরকারি সিদ্ধান্তে কলেজ খুলেছে। আজ থেকে আহনাফদের বাকি পরীক্ষা শুরু হলো। এই পরীক্ষার আগেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে হলে আহনাফের নামে একটা ফুলের তোড়া রাখা হবে। আমাদের কাছে প্রত্যেক শিক্ষার্থীই সন্তানসম। ওদের জন্য আমাদের গভীর ভালোবাসা।’