পাগল নাকি নিজেকে পাগল বলে মানে না। আবার অনেকের মধ্যেই নাকি কমবেশি পাগলামি থাকে। তাহলে যাঁরা কাউকে কাউকে পাগল আখ্যা দিচ্ছেন, তাঁরাই কি আসল পাগল? এই রে! তিন লাইন পড়তেই আবার এই লেখাকে পাগলের প্রলাপ ভেবে নেবেন না যেন! আমি কিন্তু পাগল নই। নাহ। এই লাইনটা লিখে তো আরেক বিপদ হলো। সবাই জানে, পাগল নিজেকে পাগল বলে মানে না। তাহলে কথার ইঙ্গিত কি বলে দিচ্ছে, আমিই আসল পাগল?
সে যাক। আমার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হয় একটু পরেই নেবেন। আগে দেখা যাক, আপনিও পাগল কি না। বিশ্বজুড়ে নানান পাগলের পাগলামির তালিকা কিন্তু বেশ লম্বা। এমন দু-একটা গুণ (পড়ুন পাগলামি) আপনার মধ্যেও বিরাজমান কি না, জেনে নেওয়া যাক। তবে সাবধান, পাগলামির এসব নামধাম কিন্তু একটু খটমটে। পড়তে গিয়ে দাঁত ভেঙে গেলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।
ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মাঠে এবং মাঠের বাইরে পাগলামির চূড়ান্ত রূপ হয়তো আপনারা অনেকেই দেখেছেন। অনেকে নিজেরাও খেলা নিয়ে পাগলামি করেন। ক্রিকেট ম্যানিয়া বা ফুটবল ম্যানিয়া নাম দিয়ে অনায়াসেই এগুলোকে নামধারী পাগলামির তালিকায় রাখা যায়।
ওনিওম্যানিয়ার কথা কি শুনেছেন? এ এমন এক পাগলামি, যে পাগলামিতে মানুষ কেবল কেনাকাটা করতেই থাকে। প্রয়োজন থাক আর না থাক, কিনে ফেলাটাই এখানে মুখ্য। কেউ কেউ আবার নিজের কেনাকাটায় তৃপ্ত হন না। তাঁরা চান, অন্যকে উপহার দিতে। উপহার দেওয়ার এই পাগলামির আভিধানিক নাম ডোরোম্যানিয়া। যাঁরা ডোরোম্যানিয়ায় আক্রান্ত, তাঁরা কিন্তু এই লেখককে ধন্যবাদ দিতেই পারেন। চাইলে দু-একটা উপহারও পাঠাতে পারেন, আই ডোন্ট মাইন্ড!
স্মার্টফোনও কিন্তু এক পাগলামির যন্ত্র। কেউ ব্যস্ত গেমিং নিয়ে। কেউ আবার সারাক্ষণ পড়ে থাকছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। হয়তো পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে বহুদিন পর। সময় কাটবে নানান ভঙ্গিতে ছবি তুলতে তুলতে। ফেসবুকে ‘আপ’ করতে হবে না! কী করছেন, কী খাচ্ছেন, কোথায় যাচ্ছেন—সব রকম তথ্য ‘আপ’ করে কি আপনিও এক ধরনের শান্তি পান? তাহলে জেনে রাখুন, সব সময় ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডুবে থাকার নাম হলো ইনফোম্যানিয়া বা ফিয়ার অব মিসিং আউট।
কেউ কেউ বলেন, স্মার্টফোনের পাল্লায় পড়ে পড়ালেখা, কাজকর্ম সব উচ্ছন্নে যাচ্ছে। তা অবশ্য ঠিক। তবে কাজপাগল একদল মানুষ কিন্তু এই পৃথিবীতে আজও বেঁচে আছেন। তাঁদের এই পাগলামির নাম আর্গোম্যানিয়া। এমন মানুষকে অবশ্য সাধারণভাবে ওয়ারক্যাহোলিক বলা হয়। আবার উল্টোটাও হয়। কাজের জন্য বেরোনো তো পরের কথা; বরং বিছানায় অতিরিক্ত সময় কাটিয়ে দেন কিছু মানুষ। এটা ক্লিনোম্যানিয়ার বৈশিষ্ট্য। কেউ আবার নির্দিষ্ট কোনো খাবার খাওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকেন। এর নাম অপসোম্যানিয়া। কেউ আবার খাবারের ধরনের চাইতে খাবারের পরিমাণের দিকে বেশি টান অনুভব করেন। এই পাগলামির নাম ফ্যাগোম্যানিয়া। কেউ গানবাজনার জগতে একেবারে ডুবে থাকতে ভালোবাসেন। এ হলো মেলোম্যানিয়া। কেউ বই ভালোবাসেন পাগলের মতো। বিবলিওম্যানিয়া বলা হয় একে। কেউ আবার লেখার পাগলামিও করেন। মনে চাইল, তো রাত তিনটায় বসে পড়েন লিখতে। এর নাম টাইপোম্যানিয়া। নাক খুঁটানোর পাগলামির নাম রাইনোটিলেক্সোম্যানিয়া। কেউ নখ কামড়ান। এই পাগলামির নাম ফ্যানেরোম্যানিয়া।
আর অতিরিক্ত কথা বলার পাগলামির নাম হলো লোগোরিয়া। আমি পাগল হতে পারি, তবে আমার কথা কিন্তু সীমিত। তাই লোগোরিয়া আমার নেই, এটুকু বিশ্বাস করুন, প্লিজ!
আচ্ছা, আরেকটু বলে রাখি। ইউলোগোম্যানিয়া, অর্থাৎ প্রশংসা করার বিষয়টাকে পাগলামির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার তালিকাতেও আছেন কিছু মানুষ। কী বললেন? আপনিও ইউলোগোম্যানিয়ায় ভুগছেন? অনেক অনেক প্রশংসা করছেন আমার এই লেখাটার? যাক, আনন্দ নিয়ে শেষ করতে পারছি তাহলে। শেষে একটা বিষয় অবশ্য বলে রাখা প্রয়োজন। নিজেকে নিয়ে অতি উৎসাহও এক ধরনের পাগলামি, যার নাম ইগোম্যানিয়া। কী বললেন? আমি ইগোম্যানিয়ায় ভুগছি? হ্যালো…হ্যালো…শুনতে পাচ্ছি না…