‘আপনি এখানে কেন কাজ করতে চান?’
চাকরির ইন্টারভিউতে এই প্রশ্ন খুব চেনা। সহজ প্রশ্নটার ভেতরেই কিন্তু লুকিয়ে আছে জিলাপির প্যাঁচ। এই এক প্রশ্ন দিয়ে চাকরিদাতা আপনাকে অনেকখানি যাচাই করে ফেলতে পারেন। অতএব কাজটা খণ্ডকালীন হোক, কিংবা স্থায়ী—ভেবেচিন্তে উত্তর দিতে হবে। কী বলবেন এবং কী বলবেন না? হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ থেকে চলুন সেটাই জেনে নেওয়া যাক।
যে প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য গেছেন, সেখানকার তৈরি পণ্য, সেবা, কর্মপরিবেশ কিংবা তার নিজস্ব ব্র্যান্ড—কিসে আপনার আগ্রহ আছে? নিয়োগকর্তারা মূলত সেই বিষয়টিই জানতে চান। আপনার যেদিকেই আগ্রহ থাকুক না কেন, প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধের সঙ্গে তা মিলিয়ে নেওয়া সম্ভব। বিশেষ করে যদি কোনো উন্নয়ন সংস্থার জন্য পরীক্ষা দিয়ে থাকেন, তবে অবশ্যই নিজের অনুপ্রেরণার কথা আগে জানানো দরকার। কারণ, এই সংস্থাগুলোয় ব্যক্তিগত মূল্যবোধই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এই উৎসাহ সঠিকভাবে উপস্থাপন করবেন কীভাবে? সিইও পরামর্শদাতা সাবিনা নেওয়াজ বলেন, ‘আপনি যদি সত্যিকার অর্থে কোনো বিষয়ে প্রগাঢ়ভাবে উৎসাহী হন, তবে আপনার জীবনের নানা অংশে সেটি প্রকাশ পাবে।’ অতএব জীবনের সেই ঘটনাগুলোই বলুন। গল্প করুন। গল্পের মধ্যেই যেন ‘কেন’–র জবাব পাওয়া যায়।
চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেছিলেন, ‘আপনি যা করতে ভালোবাসেন, সেটিকেই যদি পেশা হিসেবে বেছে নেন, তাহলে আর কখনোই কাজকে “কাজ” মনে হবে না।’ এমনটি হলে কিন্তু কর্মকর্তা ও কর্মচারী—উভয়েই খুশি থাকেন। চাকরির ইন্টারভিউতে কাজ এবং আনন্দের মধ্যে সেতুটা আপনাকেই গড়ে তুলতে হবে। সাদামাটাভাবে বলতে পারেন, ‘আমি এ কাজ করতে চাই কারণ এতে আমি আনন্দ পাই।’ কিন্তু কেন আনন্দ পান? সেটাও যদি দুই-এক কথায় বলতে পারেন, উত্তরটা নিয়োগদাতাদের মনে থাকবে।
নিয়োগদাতারা শুধু আপনার বর্তমানের দক্ষতাই যাচাই করেন না, খেয়াল রাখেন আপনার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং আকাঙ্ক্ষার দিকেও। কারণ, আপনি তাঁদের জন্য একটি দীর্ঘকালীন বিনিয়োগ। তাই সব প্রশ্নের উত্তরই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দেওয়া দরকার। উত্তরগুলোর সঙ্গে সব সময় যেন ইতিবাচক ইঙ্গিত থাকে। যেমন ‘আমার দক্ষতাগুলো এ কাজে ব্যবহার করতে আমি খুব উৎসাহী’। কিংবা ‘এর আগে “অমুক” জায়গায় কাজ করে...অভিজ্ঞতা হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস, আমি এই ভূমিকায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারব।’
মনে রাখবেন, অস্পষ্ট ও ফাঁপা উত্তরের পরিবর্তে নির্দিষ্ট উত্তরই নিয়োগদাতারা বেশি পছন্দ করেন। যেমন ‘আমার লেখালেখি করতে ভালো লাগে’—এ কথা না বলে লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা এবং সম্পাদনায় আগ্রহের কথা তুলে ধরতে পারেন।
ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে অবশ্যই এই সাধারণ প্রশ্নটির একটি অসাধারণ উত্তর আয়নার সামনে কয়েকবার অনুশীলন করে নেবেন। মাথায় রাখবেন, উত্তরটি আপনার নিজের জন্য নয়, তৈরি করতে হবে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুযায়ী। আপনার আগ্রহ, দক্ষতা এবং আশাবাদ এমন হোক, যেন সাক্ষাৎকার শেষে নিয়োগকর্তারা ভাবেন, ‘এ কারণেই আমরা চাই আপনি আমাদের সঙ্গে কাজ করুন।’