বছরের শুরু থেকেই স্কুলের পাঠ্যবই নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কদিন আগেই যাঁরা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, তাঁদের কী অভিমত? কেমন হওয়া উচিত স্কুলের পাঠ্যবইগুলো? নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তাঁদের অভিমত। এখানে পড়ুন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের লায়লা আরাফাত–এর লেখা।
পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার সময় ‘সৃজনশীল’ বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যবইগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উপযোগী ছিল না। নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়ভিত্তিক বইগুলোয় নমুনা প্রশ্নের এতটাই অভাব ছিল যে শিক্ষার্থীরা অনুশীলনের জন্য বাজারের সহায়ক বই বা কোচিংয়ের দ্বারস্থ হতো।
আমরা পাঠদান-পাঠ্যবই নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি ও সামাজিক চাহিদার উপযোগী কোনো পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে পারছি কি? বরং আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা জ্ঞানমুখী না হয়ে ক্রমেই সনদমুখী হয়ে পড়ছে। বাইরের বিশ্ব কিন্তু অনেকটাই বদলে গেছে। কিন্তু আমাদের চিন্তাভাবনা একটি নির্দিষ্ট মাত্রাতেই আটকে আছে।
মাধ্যমিকপড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই কিছু বিষয় একঘেয়ে ও ক্লান্তিকর মনে হতে পারে। যেমন বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, বাংলা ২য় পত্রের কারক ও সমাস, পাটিগণিতের শতকরা, লাভ-ক্ষতির হিসাব ইত্যাদি। কিন্তু পরে যখন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কিংবা চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়, তখন এসব বিষয় জানা জরুরি হয়ে পড়ে। দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা চাকরির পরীক্ষার জন্য স্কুলের পাঠ্যবইয়ের কাছেই আবার ফিরে যেতে হয়। তাই আমার মতে, এসব বিষয় আরও আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা উচিত। ‘কী পড়ছি’র সঙ্গে ‘কেন পড়ছি’টাও থাকা দরকার।
সপ্তম শ্রেণিতে এক ছাত্রীকে পড়াতাম, সেই সুবাদে ওর পাঠ্যবইগুলো দেখার সুযোগ হয়েছিল। সত্যি বলতে কী, বেশ হতাশ হয়েছি। ব্যাপারটা খানিকটা ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়া’র মতো। সপ্তম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকে তো কাগজে লিখে যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ শেখানোর প্রয়োজন নেই। শেখানোর প্রচেষ্টাটি ভালো হলেও পদ্ধতিটি সময়োপযোগী নয় বলে আমার মনে হয়েছে। ভগ্নাংশ, সূচকের গুণ-ভাগ শেখানোর জন্য একগাদা পৃষ্ঠা নষ্ট না করে সেখানে অনুশীলনের পর্যাপ্ত সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া যেত। আর সৃজনশীল পদ্ধতি আদৌ কতটা সৃজনশীল, সেই প্রশ্ন শুরুতেও ছিল, এখনো আছে। নতুন অনেক পরিবর্তন আসছে বলে শুনেছি। এবার কি আশাবাদী হতে পারি?