চড়া দামে কেনার চেয়ে বাসায় অল্প খরচে নিজের ফলানো তরতাজা স্ট্রবেরি খাওয়া ঢের ভালো
চড়া দামে কেনার চেয়ে বাসায় অল্প খরচে নিজের ফলানো তরতাজা স্ট্রবেরি খাওয়া ঢের ভালো

বাসায় সহজে স্ট্রবেরি চাষ করবেন যেভাবে

কদিন আগে এক সহকর্মীর ফেসবুক স্ট্যাটাস ছিল এ রকম, ‘পুত্র কয়েক মাস ধরে স্ট্রবেরি খাবে বলে বায়না ধরেছে। ইউটিউবে ভিডিও দেখে তার এই স্ট্রবেরিপ্রেম! তো এই অসময়ে তাকে স্ট্রবেরি খাওয়াতে ইউনিমার্ট ছাড়া অন্য কোনো অপশন পেলাম না। অগত্যা ৩ পিস স্ট্রবেরি ৩৯৬ টাকায় (জি, ঠিক পড়ছেন) খরিদ করিতে হইল। এরপর তার পছন্দমতো একটা রসগোল্লা খাইয়ে, লোকাল বাসে চড়িয়ে বাসায় নিয়ে এলাম। উবার ভাড়া বাঁচিয়ে ২০ টাকায় বাসায় এসে বিষয়টা পুষিয়ে নিলাম বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি!’ এমন হলে কেমন হবে? এর চেয়ে বাসায় অল্প খরচে নিজের ফলানো তরতাজা স্ট্রবেরি খাওয়া কি ভালো নয়? মাত্র ২০ থেকে ৫০ টাকায় স্ট্রবেরির চারা মেলে এখন নার্সারিগুলোয়। বাসায় স্ট্রবেরি চাষের উপায় দেখুন এখানে।

সংক্ষেপে স্ট্রবেরি

স্ট্রবেরি শীতকালীন সুস্বাদু ফলগুলোর একটি। এটি মূলত ছোট ঝোপালো লতানো গাছ। পাতা সবুজ, ছোট কিনারা খাঁজকাটা, থানকুনি পাতার মতো। পাতার বোঁটা লম্বা, সরু, নরম। ঝোপের মধ্যেই ছোট ছোট ঘণ্টার মতো সাদা রঙের ফুল ফোটে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় এর ফল। সরু সুতার মতো বোঁটার মাথায় একটি করে ফল ধরে। একেকটি গাছে লিচুর মতো থোকা থোকা অনেক ফল ধরে। কাঁচা ফলের রঙ সবুজাভ, পাকলে উজ্বল টকটকে লাল। আকর্ষণীয় রং ও উচ্চ পুষ্টিমানের জন্য স্ট্রবেরি বেশ জনপ্রিয়। এতে ভিটামিন সি ছাড়া অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ থাকে পর্যাপ্ত। ফল হিসেবে খাওয়া ছাড়া বিভিন্ন খাবারের সৌন্দর্য ও সুগন্ধ বাড়াতেও স্ট্রবেরির ব্যাপক চাহিদা।

এখানে আমরা নিজেদের বাগানে স্ট্রবেরি চাষের জন্য ধাপে ধাপে কিছু নির্দেশনা উল্লেখ করছি। শুধু বাগানই নয়, ছাদ কিংবা বারান্দার ছোট্ট টবে স্ট্রবেরির চাষ সম্ভব।

স্ট্রবেরিতে ভিটামিন সি ছাড়া অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ থাকে পর্যাপ্ত

চাষের শুরুটা করবেন যেভাবে

স্ট্রবেরি দুটি উপায়ে চাষ করা যায়—বীজ অথবা সরাসরি চারা দিয়ে। সবচেয়ে ঝামেলাহীন পদ্ধতি হলো নিকটবর্তী নার্সারি থেকে ভালো মানের চারা কিনে আনা।

বীজ বুনে স্ট্রবেরি চাষ

স্ট্রবেরি থেকেও বীজ নিয়ে চারা করতে পারেন

বীজ বুনে চাষের জন্য স্ট্রবেরির খুব ছোট একটা বীজের প্যাকেট কিনে নিলেই চলবে। চাইলে বাজার থেকে সতেজ স্ট্রবেরি কিনে তা থেকেও বীজ নিয়ে চারা করতে পারেন। আমরা জানি, প্রায় সব ফলের বীজই থাকে ফলের ভেতরে। কিন্তু স্ট্রবেরির বেলায় ভিন্ন, এর বাইরের লালচে ফলের আবরণেই গেঁথে থাকে বিন্দুসম বীজগুলো। প্যাকেট বা ফলের ত্বক থেকে নেওয়া বীজগুলো একটা টিস্যুতে রাখুন। টিস্যুতে হালকা পানি ছিটিয়ে এমন একটা বন্ধ পাত্রে রাখুন, যাতে বাইরে থেকে বাতাস চলাচল করতে না পারে। টিস্যু শুকিয়ে এলে হালকা পানি ছিটিয়ে দিতে পারেন। অল্প কদিনেই বীজ অঙ্কুরিত হতে শুরু করবে।

অঙ্কুরিত বীজ টবে স্থানান্তর

প্যাকেট বা ফলের ত্বক থেকে নেওয়া বীজগুলো একটা টিস্যুতে রাখুন

টিস্যুতে ১০ থেকে ১৫টি বীজের মধ্যে ৬ থেকে ৮টি অঙ্কুরিত হলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ভালো বলে ধরে নেওয়া যায়। টিস্যু থেকে অতি সাবধানে অঙ্কুরিত বীজগুলো নিন এবং সেসব টবের মাটিতে হালকাভাবে ছড়িয়ে দিন। এবার ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে বীজগুলো হালকাভাবে ঢেকে দিন। এ ছাড়া চাইলে মাটিতে ২ থেকে ৪ সেন্টিমিটার গভীর ছোট গর্ত করেও বীজ বপন করতে পারেন।

মাটির মিশ্রণ

বেলে দোঁআশ মাটিতে জৈব সার দিয়ে স্ট্রবেরি ফলাতে পারেন

বেলে দোঁআশ মাটিতে জৈব সার দিয়ে স্ট্রবেরি ফলাতে পারেন। তবে পানি জমে, এমন জায়গা স্ট্রবেরি চাষের উপযোগী নয়।

গাছের অবস্থান

স্ট্রবেরিগাছের প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা সূর্যালোক প্রয়োজন। রোদ চড়া হলে শেড দিয়ে হালকা ছায়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

নার্সারি থেকে চারা কিনে আনলে প্রথমেই সরাসরি সূর্যের আলোতে দিতে নেই

নার্সারি থেকে চারা আনার ক্ষেত্রে

নার্সারি থেকে চারা কিনে আনলে প্রথমেই সরাসরি সূর্যের আলোতে দিতে নেই। প্রথমে ১ থেকে ২ ঘণ্টা সূর্যের আলোয় রেখে ধীরে ধীরে সূর্যের আলোপ্রাপ্তির পরিমাণ বাড়াতে পারেন।

পাকা ফল তোলার বেলায় ফলের বোঁটাসহ সংগ্রহ করুন

ফল সংগ্রহ

সাদাটে ফুল থেকে সাদাটে সবুজ ফল, একসময় তা থেকে মেলে টুকটুকে লাল ফল। সেই পাকা ফল তোলার বেলায় ফলের বোঁটাসহ সংগ্রহ করুন। তাতে ফল বেশি দিন সতেজ থাকবে।

অন্যান্য যত্ন

চারা রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন পর স্ট্রবেরির বেড বা টবের মাটি খড় বা কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন
  • ফল সরাসরি মাটির সংস্পর্শে এলে পচে নষ্ট হয়ে যায়। তাই চারা রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন পর স্ট্রবেরির বেড বা টবের মাটি খড় বা কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন।

  • টব বা বেড সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

  • গাছ লাগানোর পর গাছের গোড়া থেকে প্রচুর রানার বা কচুর লতির মতো লতা বের হতে থাকে। এসব জমি ঢেকে ফেলে এবং এই লতা থেকে যে চারা হয়, তাতে ফলন ভালো হয় না। এ জন্য রানার বা লতাগুলো ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর কেটে ফেলে দিন।

  • আর হ্যাঁ, পাখি থেকে সাবধান। বুলবুলি পাখি স্ট্রবেরির বড় শত্রু। ফল আসার পর সম্পূর্ণ পরিপক্ব হওয়ার আগেই পাখির উপদ্রব শুরু হয়। এ জন্য ফল আসার পর জাল দিয়ে সম্পূর্ণ বেড ঢেকে দিতে পারেন, যাতে পাখির কারণে ফল নষ্ট না হয়।