বালতিতে রেখে দেওয়া পানি যেমন ঠান্ডা থাকে, তেমনি তাতে সহজেই টুকিটাকি উপকরণ যোগ করে নেওয়ার সুযোগও থাকে
বালতিতে রেখে দেওয়া পানি যেমন ঠান্ডা থাকে, তেমনি তাতে সহজেই টুকিটাকি উপকরণ যোগ করে নেওয়ার সুযোগও থাকে

গোসলের জন্য কেন বালতির পানিই ভালো

গরমে স্বস্তি পেতে দিনে নিদেন একটিবার তো গোসল করেই থাকেন। কেউ কেউ হয়তো একাধিকবারও করেন। শহুরে বাড়িতে স্বস্তির খোঁজে শাওয়ারটা খুলে দিলে নেমে আসে জলের ধারা। গ্রীষ্মের তপ্ত দিনগুলোয় কিন্তু তা প্রশান্তির ধারা নাও হয়ে উঠতে পারে। বরং শুরুতেই নেমে আসতে পারে গরম পানি। বেশ খানিকটা বয়ে যেতে দেওয়ার পর সহনীয় তাপমাত্রার পানি পাওয়া যায়।

অথচ সকাল সকাল আপনি যদি এক বালতি পানি জমিয়ে রাখেন, তাহলে কিন্তু বেলা বাড়লে দারুণ ঠান্ডা পানিতে প্রশান্তিদায়ক গোসল করার সুযোগ পাবেন। সন্ধ্যায় গোসল করতে চান? বিকেলে পানি ধরে রাখুন। এভাবে কিন্তু একেবারে বিনা খরচেই শীতলতার পরশ পাচ্ছেন আপনি। আর এমন স্নিগ্ধ-শীতল গোসলের জন্য আপনার পানির প্রয়োজনও হচ্ছে খুব কম।

পানি যে অমূল্য

আধুনিক স্নানঘরে শাওয়ার তো থাকেই। এ ছাড়া থাকতে পারে বাথটাব। এ দুইয়ের মধ্যে বাথটাবে প্রশান্তিদায়ক গোসলের সুযোগ মেলে ঠিকই, কিন্তু বুঝতেই পারছেন, তাতে পানি খরচ হয় বেশি। আর শাওয়ার ব্যবহারের সময় যে কতটা পানি অপচয় হয়, তা হয়তো অনেকের ধারণাতেও নেই। গরম আবহাওয়ায় শাওয়ার ব্যবহার করতে গেলে প্রথম দিকে যে উষ্ণ পানি আসতে থাকে, তা তো বলতে গেলে অকারণেই বইয়ে দেওয়া হয়!

ভাবতে পারেন, পানির বিল তো দিচ্ছিই, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে পানি খরচ করব, অন্যের তাতে কী বলার আছে। বাস্তবতা হলো, পানি এক অমূল্য সম্পদ। আপনি শাওয়ার ব্যবহার করে গোসল করছেন, আপনার ভাবনায় এটা ‘স্বাভাবিকতা’, কিন্তু এই পৃথিবীর জন্য তা ‘বিলাসিতা’। খুব গরমে দুই বেলা গোসল না করলেই নয়? যদি করতেই হয়, বালতির জমানো পানি দিয়েই করুন। এক বেলা হোক কিংবা দুই বেলা, শাওয়ারের পানির বেহিসাবি খরচ থেকে পৃথিবীকে বাঁচান।

শাওয়ার ব্যবহারের সময় যে কতটা পানি অপচয় হয়, তা হয়তো অনেকের ধারণাতেও নেই

স্বস্তিতে, স্বাচ্ছন্দ্যে

বালতিতে রেখে দেওয়া পানি যেমন ঠান্ডা থাকে, তেমনি তাতে সহজেই টুকিটাকি উপকরণ যোগ করে নেওয়ার সুযোগও থাকে। এই যেমন নিমপাতা বা গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দেওয়া যায়। আয়েশ করে বাথটাবে সুগন্ধি এসেনশিয়াল অয়েল মেশানো পানিতে স্নান না করলেই যে আপনি সেই আমেজ থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হবেন, তা-ও কিন্তু নয়। পরিষ্কার, ছোট্ট একটা কাচের বোতলে এক টেবিল চামচ নারকেল তেল নিন। এর সঙ্গে তিন-চার ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করুন। ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন। এবার একটা ভেজা কাপড়ে ঢেলে নিন এই মিশ্রণ। বালতির পানিতে গোসল করার সময় বুকের ওপর জড়িয়ে নিন এই কাপড়টাকে। দারুণ অনুভব আসবে।

কিছু সতর্কতা

  • একটানা দীর্ঘ সময় বালতিতে পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। একদিনের ভেতরেই তাতে ময়লার আস্তর পড়ে যায়। প্রয়োজনে বালতির ওপরটা ঢেকে রাখুন। তবে কোনোক্রমেই যাতে বাহাত্তর ঘণ্টা বা তার বেশি সময় পর্যন্ত পানি জমিয়ে রাখা না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখুন; নইলে সেখানে বংশবিস্তার করতে পারে এডিস মশা।

  • ছোট্ট শিশু বা পোষা প্রাণী কিন্তু জমানো পানির বালতিতে পড়ে যেতে পারে। এমনকি বালতির পানিতে নাক-মুখ ডুবে গেলে শিশুর প্রাণনাশের ঝুঁকি পর্যন্ত থাকে। তাই সতর্ক থাকুন। স্নানঘরের বালতিতে পানি জমিয়ে রাখলে স্নানঘরের দরজা ভালোভাবে আটকে রাখুন।

  • বালতি ও মগ অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।

  • ত্বকে কাটাছেঁড়া থাকলে গোসলে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করবেন না।

  • শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী নারীর ক্ষেত্রে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করাটা ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারের সময়ও যাতে এমন কেউ আশপাশে না থাকে, তা খেয়াল রাখুন। পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।