কদিন আগেই ক্রিকেট বিশ্বকাপে অতিদানবীয় এক ইনিংস খেলে ম্যাক্সওয়েল এখন মানুষের মুখে মুখে। ২০১ রানে অপরাজিত অবিশ্বাস্য সেই ইনিংস ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম একটি হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে। অথচ বিশ্বকাপের আগে অনিশ্চিত ছিল দলে তাঁর যুক্ত হওয়া নিয়ে। তারও আগে বিরতি নিয়েছিলেন মানসিক অবসাদের কারণে। তারপর ঠিকই তিনি ফিরে এসেছেন স্বমহিমায়। পড়ুন মাঠের বাইরের ম্যাক্সওয়েলের অনুপ্রেরণাদায়ী কিছু তথ্য...
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে মাংসপেশির টানের কারণে বেশ কয়েকবার মাঠের বাইরে যাওয়ার মুহূর্ত তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল নাছোড়বান্দা। মাঠেই চিকিৎসা নিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। তৈরি হলো ইতিহাস। শচীন টেন্ডুলকার এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেছেন, ‘সামটাইমস, নো ফুটওয়ার্ক বিকামস গ্রেট ফুটওয়ার্ট টু।’ অথচ এই ম্যাক্সওয়েলেরই অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না হওয়ার আশঙ্কা ছিল বেশি। যখন দল ঘোষণা করা হয়, তখনো তিনি ইনজুরির সঙ্গে লড়ছেন। গত সেপ্টেম্বরে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা শুরু হলে যেতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। ভেবেছিলেন, হয়তো বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন না। কিন্তু বিশ্বকাপে তিনি খেলছেন এবং কেমন খেলছেন, তার সাক্ষী তো আমরাই।
২০১৯ সালে তখন অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কার সিরিজ চলছে। মাঝপথে ম্যাক্সওয়েল খেলা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিরতি নেওয়ার ঘোষণা দিলেন। জানা গেল, ম্যাক্সওয়েল মানসিক অবসাদে ভুগছেন।
অনেক ক্রিকেটারকে মানসিক অবসাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। লড়াই করে কেউ ফিরতে পেরেছেন, কেউ হয়তো পারেননি। তবে ম্যাক্সওয়েল পেরেছিলেন এবং তা খুব ভালোভাবেই। সেই সময় অনেকেই তাঁর এই বিরতি নেওয়াকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডও তাঁর পাশে থাকার কথা জানিয়েছিল। দুই মাস পর নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটান বিগ ব্যাশে খেলে। তাঁর ফেরাটা ক্রিকেটের জন্যই দারুণ এক ঘটনা। তা না হলে হয়তো বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক ম্যাক্সওয়েলকে পেতাম না আমরা।
আইপিএল খেলার সুবাদে ভারত ম্যাক্সওয়েলের দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিনের প্রেমিকা বিনি রমণ আবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত। দুজন গাঁটছড়াও বেঁধে ফেলেছেন। ভারতে ম্যাক্সওয়েল বাড়িও কিনেছেন, একটি নয়, দুটি। জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায় আছে চারটি বাড়ি।
ম্যাক্সওয়েলের স্ত্রী বিনি রমণের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দক্ষিণ ভারতের একটি পরিবারে। বিনির পরিবার একসময় অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমায়, ঘর বাঁধে মেলবোর্নে। বিনি ফার্মাসিস্ট। তাঁর বোন মধু রমণ মেলবোর্নের স্বাস্থ্য বিভাগে কাজ করেন।
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট অ্যাওয়ার্ডে ম্যাক্সওয়েল ও বিনিকে প্রথম একসঙ্গে দেখা যায়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাগদান সারেন এই জুটি। ২০২১ সালের মার্চে খ্রিষ্টীয় রীতিতে বিয়ে করেন তাঁরা। এর এক সপ্তাহ পর তাঁদের বিয়ে হয় হিন্দু রীতিতে।
গত সেপ্টেম্বরেই ছেলের বাবা হয়েছেন ম্যাক্সওয়েল। ছেলের নাম রেখেছেন লোভান মাভেরিক ম্যাক্সওয়েল। অবসরে ম্যাক্সওয়েল এখন সংসারেই বেশি সময় দেন। বিশেষ করে ছেলেকে। আর সেটা তিনি ২০১ রানের ইনিংস খেলার পর এক্সে জানিয়েছেন, ‘আপনাদের ভালোবাসা পেয়ে আমি অভিভূত। এখন বাবার দায়িত্ব পালনের সময় এসেছে।’
ম্যাক্সওয়েল রেডক্রস বুশফায়ার নামের দাতব্য সংস্থায় সাহায্য করেন নিয়মিত। ২০২০ সালের বিগ ব্যাশের প্রতিটি ছক্কার জন্য ম্যাক্সওয়েল এই সংস্থাকে দিয়েছেন ২৫০ অস্ট্রেলীয় ডলার করে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের পাশেও দাঁড়ান।
তুলা রাশির জাতক ম্যাক্সওয়েল গান শুনতে ভালোবাসেন। ক্রিকেটবিষয়ক ‘গ্লোরি গার্ডেনস’ সিরিজের বইগুলো তাঁর প্রিয়। ক্রীড়াবিদদের আত্মজীবনী পড়তে ভালোবাসেন। আর প্রিয় খেলাধুলা? অবশ্যই ক্রিকেট। তা ছাড়া আছে অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল। গলফ তো আছেই। আর প্রিয় খেলোয়াড়? সে গল্প তো শুরুতেই করেছি, দ্য গ্রেট শচীন টেন্ডুলকার। আরও আছেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মাইক হাসি, জন্টি রোডস ও মাইকেল বেভান। তাঁর প্রিয় বোলার আরেক গ্রেট শেন ওয়ার্ন।
ম্যাক্সওয়েল চিকেন খুব পছন্দ করেন। সম্প্রতি আইসিসির পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এবার বিশ্বকাপ খেলতে এসে ভারতীয় খাবার বাটার নান আর গার্লিক নানের প্রেমে পড়েছেন ম্যাক্সওয়েল।
প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলারের মালিক ম্যাক্সওয়েল। ইনস্টাগ্রাম, অস্ট্রেলিয়া জাতীয় ক্রিকেট দল এবং বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ তাঁর আয়ের উৎস। এ ছাড়া বিজ্ঞাপন, এনডোর্সমেন্ট থেকেও আয় করেন।
ম্যাক্সওয়েলের আছে ফোর্ড মাসট্যাং, বিএমডব্লিউ জি টি, মার্সিডিজ বেঞ্জ সি গাড়ি। আর বাড়ির কথা তো আগেই বলেছি।
সূত্র: ক্রিকইনফো, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, উই নো ক্রিকেট ডটকম, হেলদি সেলেব ডটকম, উইকিপিডিয়া, ইনস্ট্যান্ট বায়োগ্রাফি ডটকম