কেউ কেউ খুব তুচ্ছ বিষয়েই মুগ্ধ হওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা নিয়ে জন্মান। শুক্লপক্ষের পূর্ণিমার চাঁদ, নদীতীরের ঢেউখেলানো কাশফুল, কিংবা পথের ধারে অযত্নে বেড়ে ওঠা নাম–না জানা ফুল দেখে অবাক বিষ্ময়ে ঝলমল করে ওঠেন। আবার কেউ কেউ আছেন, কিছুতেই যাঁদের কিছু যায় আসে না। জগতের সব মূর্ত-বিমূর্ত বিষয়ের প্রতিই তাঁদের অপার উদাসীনতা। তাজমহলের মতো বিপুল সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়িয়েও নির্বিকার গলায় বলে ওঠেন—এ আর এমন কী! আজ রবিবার নাটকের কঙ্কা-তিতলির মুখে পূর্ণিমার ইয়া বড় চাঁদের বিবরণ শুনে আনিস যেমন বলেছিলেন, ‘পূর্ণিমা রাতে চাঁদ তো উঠবেই, এটাই স্বাভাবিক; নতুন কিছু তো নয়!’
জীবনের অসামান্য কোনো সাফল্যেও হয়তো তারা নিস্পৃহ, শীতল। কেউ কেউ তো থাকেন জীবনানন্দ দাশের মতো। খুব ক্যাজুয়ালি বলে দিতে পারেন, ‘জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা/ অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজন বোধ করি না।’
নতুন প্রেম, পরীক্ষায় ভালো ফল, প্রত্যাশিত চাকরিপ্রাপ্তি—এসবের কিছুই তাঁদের স্পর্শ করে না। আবার আসন্ন ভয়ংকর বিপদ, প্রাণঘাতী রোগ, প্রিয় বিচ্ছেদ, এমনকি পরিজনের মৃত্যুতেও দারুণ রকম নির্লিপ্ত থাকেন তাঁরা। চূড়ান্ত ব্যর্থতা, আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মৃত্যু বা সমূহ ধ্বংসের কিনারে দাঁড়িয়েও তুড়ি মেরে তারা বলে উঠতে পারেন, ব্যাপার না! তাঁদের কেউ কেউ হয়তো বৈশিষ্ট্যগতভাবে উদাসীনতা নিয়ে জন্মান। আবার কেউ যাপিত জীবনের চক্করে পড়ে এমন হয়ে ওঠেন।
জীবন-জগতের প্রতি এই চরম ঔদাসীন্য ভালো নাকি ভালো নয়, তা হয়তো তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এই দিককে তো অস্বীকারের উপায় নেই। ভালো-মন্দের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে উদাসীন মানুষটিকে বাতিল করে দেওয়ার উপায়ও নেই।
আজ ২৫ নভেম্বর, উদাস দিবস। টমাস ও রুথ রয় নামের এক মার্কিন দম্পতির হাত ধরে দিবসটির চল হয়। উদাসীনতাকে উদ্যাপনের জন্যই মূলত এমন দিনের প্রবর্তন করেন তাঁরা।
ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে