মশা বাড়ছে, যে জিনিসটির ব্যবহার শুরু করা উচিত আজ থেকেই

ঘরে-বাইরে মশা থেকে সুরক্ষা পেতে ‘মসকিটো রিপেল্যান্ট’ বেশ কার্যকর। তবে সঠিক কার্যকারিতা পেতে হলে ঠিকঠাক ব্যবহারবিধি জানা থাকাটা জরুরি। সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও এড়ানো যায়। বিশেষত শিশুদের ব্যাপারে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা।

ঘরে-বাইরে মশা থেকে সুরক্ষা পেতে ‘মসকিটো রিপেল্যান্ট’ বেশ কার্যকর
ছবি: কবির হোসেন

মশা দূরে রাখার কিছু উপকরণ আছে, যা ত্বকে প্রয়োগ করতে হয়। আবার কিছু আছে, পোশাকে লাগাতে হয়। এগুলোর কোনোটি কত সময় পর্যন্ত কার্যকর থাকে এবং কোনোটির প্রয়োগবিধি কী, সেই বিষয়ক নির্দেশনা পড়ে নিন। কিছু উপাদান তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের উপযোগী নয়। কেনার সময়ই এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত। ভালো মানের পণ্য বেছে নেওয়াটাও জরুরি। নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োগ করার পর হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলার কথাটিও ভোলা যাবে না।

যখন যেখানে প্রয়োজন

রাজধানীর ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান জানালেন, বর্ষা এবং বর্ষা–পরবর্তী মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এ সময় এ ধরনের অনুষঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার কেউ যদি এমন কোনো এলাকায় যান, যেখানে মশাবাহিত অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বেশি, সে ক্ষেত্রেও দারুণ কাজে আসে এসব উপকরণ। যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকির কারণে ‘মসকিটো রিপেল্যান্ট’ সঙ্গে রাখা উচিত।

ত্বকের যে অংশ অনাবৃত থাকে, সেই অংশে ‘মসকিটো রিপেল্যান্ট’ প্রয়োগ করবেন

প্রয়োগবিধি

মশার কামড় থেকে বাঁচতে এমন পোশাক পরা ভালো, যাতে ত্বকের অধিকাংশ জায়গা ঢাকা থাকে; ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নেওয়া উচিত। আর ত্বকের যে অংশ পোশাকের নিচে ঢাকা থাকে, সেই অংশে ‘মসকিটো রিপেল্যান্ট’ প্রয়োগ করবেন না। যেটুকু উন্মুক্ত থাকে, সেখানে প্রয়োগ করুন।

মুখ বা চোখের কাছাকাছি জায়গায় কিংবা হাতের তালুতে ‘মসকিটো রিপেল্যান্ট’ প্রয়োগ করবেন না।

ত্বকে কোনো ক্ষত থাকলে ওই স্থানে লাগাবেন না।

সানস্ক্রিন সামগ্রী ব্যবহার করতে চাইলে ত্বকে প্রথমে সানস্ক্রিন সামগ্রী প্রয়োগ করুন। এটি ত্বকে মিশে যাওয়ার পর ‘মসকিটো রিপেল্যান্ট’ লাগিয়ে নিন।

ত্বকে প্রয়োগ করতে না চাইলে এমন অনুষঙ্গও বেছে নিতে পারেন, যা পোশাকে ব্যবহার করা যায়।

ত্বকে কিংবা পোশাকে যেখানেই প্রয়োগ করা হোক না কেন, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এগুলো কার্যকর থাকে। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর পুনরায় প্রয়োগ করতে হবে। তবে একবারে অতিরিক্ত পরিমাণে লাগানো উচিত নয়।

শিশুদের বিষয়ে খেয়াল রাখুন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাহেদুর রহমান জানালেন, এ ধরনের অনুষঙ্গ শিশুদের ক্ষেত্রে নিরাপদভাবে ব্যবহারের জন্য আরও কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে—

শিশুর ত্বকের এমন জায়গায় এগুলো লাগানো যাবে না, যেখানটা সে মুখে দিয়ে ফেলতে পারে। ধরা যাক, আপনার শিশুর বয়স ছয় বছর বা তার বেশি। তাহলে তার পায়ে ‘মসকিটো রিপেল্যান্ট’ লাগিয়ে দিতে পারেন। পড়ার টেবিলে বা খেলার সময় তাকে এভাবে সুরক্ষিত রাখা যেতে পারে। কিন্তু একদম ছোট বা অবুঝ শিশু হাত-পা মুখে দিয়ে ফেলতে পারে। তাই শিশুর বয়স এবং তার বোঝার ক্ষমতা খেয়াল রেখে ঠিক করুন, তার ত্বকে নাকি পোশাকে মশা দূর করার অনুষঙ্গ প্রয়োগ করবেন।

বাজারে পাওয়া যাচ্ছে নানা ধরনের ‘মসকিটো রিপেল্যান্ট’।

শিশু নিজে নিজে এ ধরনের অনুষঙ্গ ব্যবহার করলে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়ার কথাটি তাকে মনে করিয়ে দিন।

অবুঝ শিশুর ক্ষেত্রে পিঠের কাপড়ে মশা তাড়ানোর উপযোগী অনুষঙ্গ লাগিয়ে দিতে পারেন, সেখানে সে মুখ দিতে পারবে না।

তবে এসব অনুষঙ্গই মশা থেকে সুরক্ষার একমাত্র উপায় নয়। তাই এগুলো ব্যবহার করলেও পরিবেশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। শোয়ার সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। এমনকি ছোট্ট শিশুকে স্ট্রলারে রাখার সময়ও মশারিজাতীয় কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা জরুরি।