কিছু না করাটাও কেন জরুরি একটা কাজ

কিছু না করা বা উদ্দেশ্যহীনভাবে সময় কাটানো কতটা জরুরি, সে কথা কি আমরা জানি?
ছবি: সুমন ইউসুফ

সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার উপদেশটা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। ব্যস্ত জীবনের কোনো বিকল্প নেই—এ কথা শুনেও আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু কিছু না করা বা উদ্দেশ্যহীনভাবে সময় কাটানো কতটা জরুরি, সে কথা কি আমরা জানি? ড্যানিশ শব্দ ‘হাইজি’র মানে হলো না ঘুমিয়ে আরাম করা। এরপর এল সুইডিশ ধারণা ‘লাগম’। লাগম অর্থ সংযম। ‘ধীর’, ‘ধারাবাহিক’ জীবন যাপন করার সঙ্গে লাগম শব্দটা যায়। আর এখন চলছে ‘নিকসেন’-এর ট্রেন্ড। ডাচ এই শব্দের মানে কিছুই না করে বা উদ্দেশ্যহীনভাবে সময় কাটানো।

নিকসেন কী?

নেদারল্যান্ডে কর্মীদের মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে সিএসআর সেন্ট্রাম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নিয়ে নানা ধরনের কর্মশালা পরিচালনা করে থাকে তারা; যাতে তাদের পক্ষে চাপমুক্তভাবে জীবন যাপন করা সহজ হয়। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ক্যারোলিন হ্যামিং বলেন, ‘নিকসেন হতে পারে কাজের ফাঁকে এমনিতেই একটু হেঁটে আসা। দূরে কোথাও তাকিয়ে থাকা, জানলার কার্নিশে বৃষ্টি দেখা বা গান শোনা। মূল বিষয়টা হলো, এমন কিছু করা, আদতে যার কোনো উদ্দেশ্য নেই। এটা একটা শিল্প। নিকসেনের অনুশীলন আমাদের খুবই জরুরি।’

নেদারল্যান্ডের ইরাসমাস ইউনিভার্সিটি রটারডাম-এ সুখ বিষয়ে পড়ান অধ্যাপক রুথ ভেনহোভেন। তিনি জানান, নিকসেন হলো মাথা না খাটিয়ে নিরুদ্বেগ ও অব্যাহতিমূলক প্রক্রিয়ার ভেতর থাকা। মনকে ভারমুক্ত করার প্রক্রিয়া। মনের ওপর থেকে চাপ সরানো। যাতে নতুন করে সৃজনশীল কাজে মন দেওয়া সহজ হয়।

সকালবেলা ফুল কুড়ানো, প্রকৃতি বা পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানো, পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে আড্ডাও হতে পারে নিকসেন। শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানো নিকসেনের আরেকটি চমৎকার উদাহরণ। মোদ্দাকথা হলো, উদ্বেগমুক্ত হওয়া বা শিথিলকরণ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়াই নিকসেন। সবাই এটা পারে না। ব্যস্ততা আমাদের ওপর এমনভাবে চেপে বসেছে যে কীভাবে কিছু না করে সময় কাটাব, সেটা আমরা ভুলেই গেছি। অথচ বর্তমান জীবনব্যবস্থায় আলাদা করে ‘নিকসেন’-এর কোনো বিকল্প নেই।

প্রত্যেক মানুষই এখন দম ফেলার ফুরসত চায়। নিকসেনের ফলে মনের ভার হালকা হয়।

নিকসেন কেন জরুরি


১. প্রত্যেক মানুষই এখন দম ফেলার ফুরসত চায়। নিকসেনের ফলে মনের ভার হালকা হয়।


২. নতুন করে কাজে মনঃসংযোগ করা সহজ হয়।


৩. কাজের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।


৪. মনের ভার কমে যাওয়ায় ঘুম ভালো হয়। পরে নানা শারীরিক জটিলতাও এড়ানো সম্ভব হয়।


৫. আমরা যখন কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক ততক্ষণ পর্যন্ত জমা হওয়া তথ্যগুলো ‘প্রসেস’ করতে থাকে। ফলে পরবর্তী সময়ে আরও তথ্য জমা হওয়ার জায়গা তৈরি হয়ে যায়। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছুই না করা আদতে কাজের জন্য আপনাকে আরও ভালোভাবে তৈরি করে দেয়।


৬. ‘নিকসেন’-এর সময়ে আপনার মাথায় নতুন নতুন আইডিয়া জমা হয়। সহজেই আপনি অনেক সমস্যার সমাধান পেয়ে যান।

সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন