অফিসে সব বয়সের সহকর্মীর সঙ্গে মানিয়ে চলবেন যেভাবে

কর্মক্ষেত্রে নানা বয়সী, নানা মানসিকতার ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হয়। সেখানে কেউ অভিজ্ঞতায় জ্যেষ্ঠ, বয়সে ছোট; কেউবা বয়সে জ্যেষ্ঠ, অভিজ্ঞতায় ছোট। কর্মক্ষেত্রে কীভাবে ছোট–বড় সম্পর্ক উন্নয়ন করবেন, জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদ

বয়সে ছোট হলেও অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকতে পারেন কেউ কেউ। মডেল: ফাইয়াজ ও এস বি এ সিদ্দিকী

একটি অফিসে নানা ভূমিকায় আমরা কাজ করি। নানা বয়সের মানুষের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হয়। যাঁর যতই বয়স হোক না কেন, কাজকেই প্রথমে গুরুত্ব দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে বড়–ছোট বিষয়টি কখনোই বয়স দিয়ে ভাগ করা ঠিক নয়। কাজের গুরুত্ব ও অভিজ্ঞতা বুঝেই শিক্ষানবিশ, অভিজ্ঞ, নির্বাহী, ব্যবস্থাপক বা প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা নির্ধারিত হয়। কেউ যেমন ২৯ বছর বয়সে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হতে পারেন, কেউ আবার ৫৫ বছর বয়সেও থাকতে পারেন ছোট কোনো পদে। আপনার দলে বয়স কম কিন্তু অভিজ্ঞ যে কেউ যুক্ত হতে পারেন, তাঁকে ‘কী বুঝবে’ বলে খাটো করবেন না। আবার মধ্যবয়সের নতুন কোন সহকর্মী আপনার দলে কাজ করতে এলে তাঁকেও বয়স্ক বলে আলাদা করবেন না।

পুরোনো সহকর্মীর প্রতি সহমর্মী হোন

এখন কর্মক্ষেত্রে তরুণ কিংবা মধ্যবয়সী নানা বয়সের মানুষের দেখা মেলে। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা কর্মক্ষেত্রে আছেন, তাঁরা হয়তো প্রযুক্তি ব্যবহার কিংবা আধুনিক অনেক নিয়মে অভ্যস্ত নন। তাঁদের পরিহাস না করে সহমর্মী হোন। কোনো সহায়তা লাগলে সহায়তা করুন, এ ক্ষেত্রে নিজের কাজে যেন সমস্যা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। পুরোনো সহকর্মীদের কাছ থেকে আপনি কাজের নানা কৌশল শিখতে পারেন। দেখবেন বয়সে বড় অনেকেই নোটবুক বা ডায়েরির মাধ্যমে লেখালেখির কাজ করেন, তাঁদের অনেক কিছুই আপনার কাছে সেকালের মনে হতে পারে। ডায়েরিতে নোট নেওয়ার বিষয়টি কিন্তু হালের করপোরেট প্রতিষ্ঠানে গুরুত্ব দেওয়া হয়। পুরোনো আমলের অফিসের নিয়মকানুন জানার মাধ্যমে কিন্তু আপনার নিজের অভিজ্ঞতাই বাড়াতে পারবেন।

নতুন সহকর্মীকে বুঝুন

কর্মক্ষেত্রে দলগত কাজের জন্য নতুন কর্মী আসবেন, আবার কর্মের খাতিরে বদলি বা অন্য জায়গায় চলে যাবেন। নতুন সহকর্মীর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার আগ্রহ থাকতে হবে প্রথম থেকেই।

সহকর্মীর অনভিজ্ঞতার সুযোগে তাঁকে অসম্মান করবেন না

সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে যদি কাজের গুণগত মান ভালো হয়, তাহলে উন্নয়ন করবেন না কেন? নতুন সহকর্মী নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সমস্যায় পড়তে পারেন। তাঁকে সহায়তা করুন। তাঁর কোনো প্রয়োজন থাকলে তা বুঝে সহায়তা করুন। নতুন সহকর্মীর ভুল বা অনভিজ্ঞতার সুযোগে তাঁকে অসম্মান করবেন না। অন্যের কাছ থেকে শেখার সুযোগ নিন, কর্মক্ষেত্রে সহমর্মিতার চর্চার করুন।

ভাষা ও ব্যবহারে সংযত থাকুন

এখন কর্মস্থলে নানা শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ভাষায় দক্ষ কর্মীরা কাজ করেন। আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেন অনেকেই। আবার ইংরেজি ভাষা নিয়মিত ব্যবহার করেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে যে ভাষার ধরনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়, তা আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন। সহকর্মীর আঞ্চলিকতা নিয়ে কখনোই অসম্মান করবেন না। আবার আপনি যে ভাষা জানেন, তা জাহির করার জন্য অন্যের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করবেন না। একেক মানুষের ব্যক্তিত্ব ও ভাষার দক্ষতা একেক রকমের। অন্যের দক্ষতার মাত্রা বুঝে দক্ষ পেশাজীবী হিসেবে নিজের অবস্থান তুলে ধরুন।

সম্বোধন করবেন যেভাবে

পশ্চিমা দেশে কর্মক্ষেত্রে সবাইকে নাম ধরে ডাকার চল। আমাদের দেশে সেই নিয়ম কিছুটা ভিন্ন। কেউ নামের প্রথম অংশ ধরে ডাকা পছন্দ করেন, কেউবা শেষাংশ। আবার অনেকেই স্যার, ম্যাডামের চেয়ে ভাই বা আপা সম্বোধন পছন্দ করেন। করপোরেট প্রতিষ্ঠান হোক কিংবা নতুন কোনো স্টার্টআপ, যেখানেই কাজ করুন না কেন, প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা একে অন্যকে কীভাবে সম্বোধন করেন, তা আগেই জেনে নিন। যদি কোনো বিশেষ নিয়ম না থাকে, তাহলে করপোরেট আচরণের অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক পদবি ও স্যার-ম্যাডাম ডাকতে পারেন। অনেকে সহকর্মীকে তাঁর ডাকনামে সম্বোধন করেন। এ ধরনের আচরণ অপেশাদার। কর্মক্ষেত্রে সর্বদাই পেশাদার আচরণ বজায় রাখুন। অফিস সহকারী কিংবা প্রধান নির্বাহী–সবাইকেই পেশাদারভাবে ডাকুন।

কর্মক্ষেত্রে সর্বদাই পেশাদার আচরণ বজায় রাখুন

সামাজিক আচরণে খেয়াল রাখুন

বয়সে বড় সহকর্মী ভয়, কিংবা বয়সে ছোট সহকর্মী হলেই যে দুষ্টামি করবেন, বিষয়টি যেন এমন না হয়। কর্মক্ষেত্রে সব সময় কাজের গুরুত্ব ও প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে সামাজিক আচরণে নিজের পেশাদারত্ব বজায় রাখুন। পিকনিক কিংবা অবকাশ যাপনে সহকর্মীদের সঙ্গে আয়োজন থাকলেও সামাজিক আচরণে নিজের মার্জিত ভাব বজায় রাখুন। দুষ্টুমির ছলে হলেও বয়সে ছোট সহকর্মীকে অসম্মান করা অনুচিত। আবার বয়সে বড় সহকর্মী বলে তাঁকে এড়িয়েও চলা যাবে না।

মানুষ হিসেবে সম্মান দিন

সহকর্মীর বয়সে বড় কিংবা ছোট, যা–ই হোক না কেন, মানুষ হিসেবে তাঁকে সম্মান দিন। মানবিক মূল্যবোধ চর্চা করুন। সহকর্মীর সুস্থতা ও পরিবারে অবস্থার খোঁজখবর নিতে পারেন। কর্মস্থলে প্রতিযোগিতা থাকবেই, প্রতিযোগিতার কারণে যেন সম্পর্ক নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা বিকাশে মনোযোগ দিয়ে আপনি কর্মক্ষেত্রের নেতিবাচকতা দূর করতে পারবেন, সেদিকেই মনোযোগ দিন।

রেষারেষি হলে যা করবেন

কাজের সময় সংঘাত বা রেষারেষি হলে সমাধানের চেষ্টা করুন। তর্কাতর্কি বা মেজাজ দেখানোর বদলে কৌশলী হয়ে নিজের অবস্থান প্রকাশ করুন। সংঘাতমূলক পরিস্থিতি তৈরি হলে তা দ্রুত মানিয়ে নিন। রেষারেষির কারণে নিজের কাজ কিংবা সহকর্মীর কাজে ক্ষতি হয়—এমন আচরণ পরিহার করুন। সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে ইতিবাচক উপায়ে সমাধানে মনোযোগ দিন।