হলের রুমগুলোর বাহারি নাম কীভাবে এল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের একটি রুমের নাম কীর্তনখোলা–১
ছবি: সংগৃহীত

‘রাজপ্রাসাদ’, ‘গণভবন’, ‘বঙ্গভবন’—নামগুলো শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে রাষ্ট্রপ্রধানদের বাড়ির ছবি। কিন্তু দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় ঢুকলেও অনেক রুমের দরজার সামনেই এমন বাহারি নাম আপনার চোখে পড়বে। কিন্তু হলের রুমের এমন নাম কেন? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের এমনই এক রুমের বাসিন্দা নিপা মহন্তের সঙ্গে কথা হলো। নিপা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই প্রধানমন্ত্রী হতে চাইতাম। জানি বিষয়টা অনেক কঠিন, কিন্তু আমি এখনো সেই স্বপ্নই দেখি। তাই যে রুমে থাকি, সে রুমের নাম দিয়েছি গণভবন। নামটা যখন নির্বাচন করি, রুমমেটরাও অমত করেনি। ভবিষ্যতে যখন নিজের বাড়ি হবে, তখনো এই নামেই বাড়িটা করব বলে ঠিক করেছি।’

শুধু রাষ্ট্রপ্রধানদের বাসভবনের নামেই নয়, হলরুমের নামকরণেও আছে অনেক বৈচিত্র্য। কোনো কোনো নামে পাবেন সাহিত্যের ছোঁয়া। কখনো কখনো এসব নামই জীবনবোধের প্রতীক। ক্ষণিকালয়, দীপশিখা, শান্তিনিকেতন, বেলাভূমি, স্মৃতিকথা, অপরাহ্ণের নীড়, সোনার তরী, ঘুমস্বর্গ, স্বপ্ননীড়, বেলাশেষে, মায়াকুঞ্জ, দখিন দুয়ার—প্রতিটি নামই ভাবায়। আদতে হলগুলো তো শিক্ষার্থীদের কাছে দ্বিতীয় বাড়ি। এখানেই কাটে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের প্রায় পুরোটা সময়। তাই আবেগ কাজ করাটা স্বাভাবিক।

কিন্তু রুমের এমন নামকরণের চল হলো কী করে?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলো। তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৮০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলে আবাসিকতা পাই। তখন হলের রুমগুলোর নামকরণের প্রবণতা এত বেশি চোখে পড়ত না। হয়তো দুই–একটা রুমের নামকরণ করা হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রবণতা বেড়েছে। ঠিক কী কারণে এটা বেড়েছে, সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে আমার মনে হয়, এখনকার শিক্ষার্থীরা ছবির মাধ্যমে নিজেদের হলজীবনের স্মৃতিটুকু সুন্দরভাবে রেখে দিতে চায়। নিজেদের আবাসকক্ষের নামকরণে আবেগ, সংস্কৃতি, রাজনীতি এমনকি মজারও বহিঃপ্রকাশ থাকে। রুমের সুন্দর একটা নাম থাকলে বিষয়টা আরও সুন্দর হয়ে ওঠে, এই অভিরুচিই মুখ্য বলে আমার মনে হয়।’

একই সুরে কথা বলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের শিক্ষার্থী সিফাতুল ইসলাম, ‘আমরা এক রুমে ৯ জন থাকি। এই রুমে আমাদের বেশিদিন থাকতে হবে না। কিছুদিন পর যেহেতু নতুন রুমে চলে যাব, তাই সবাই মিলে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরুর দিকের সময়গুলোর স্মৃতি ধরে রাখতে আমাদের রুমের নাম দিই ছায়ালোক। রুমের সামনে এলেই নামটা এখন চোখে পড়ে। এই রুমের সামনে তোলা ছবিগুলোই হয়তো স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে।’