সেই লেখা পড়ে এমসি কলেজের আরও ৩ শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন

তিনজনই এক সময় পড়েছেন এমসি কলেজে। এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়-কমার্সে
তিনজনই এক সময় পড়েছেন এমসি কলেজে। এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়-কমার্সে

লেখার শিরোনাম ছিল, ‘এমসি কলেজ থেকে এখন টেক্সাসে গবেষণা করি’। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি কলেজে স্নাতক করে কীভাবে আমি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করতে এলাম, সে কথাই লিখেছিলাম সেবার।

লেখা প্রকাশের পর এত অভাবনীয় সাড়া আসবে, ভাবতেও পারিনি। ফেসবুকে, ই–মেইলে প্রচুর বার্তা পেয়েছি। কেউ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, কেউ চেয়েছেন পরামর্শ। সাধ্যমতো সাহায্য করতে চেষ্টা করেছি। প্রথম আলোতে লেখা ও ছবি প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রে আমার নেটওয়ার্কিং বেড়েছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বাংলাদেশিই এখন চেনেন। এই লেখার কারণে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সেমিনারে আমি ডাক পাই।

যোগাযোগ অনেকেই করেছেন। তবে তিনজনের কথা আলাদা করে বলতে পারি। এমসি কলেজের ২০১৪-১৫ সেশনের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্র বিভাস রঞ্জন চৌধুরী, ২০১৬-১৭ সেশনের গণিত বিভাগের ছাত্রী রুমানা আক্তার ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের দীপিকা দাশ। কীভাবে ফান্ডিং পেতে হয়, কীভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন সনদ সংগ্রহ করতে হয়, কাগজপত্র সমন্বয়ের উপায়ই–বা কী, এমন নানা প্রশ্ন তাঁরা আমাকে ই–মেইলে পাঠিয়েছিলেন। আমিও উত্তর দিয়েছি। সবকিছুর বন্দোবস্ত করে এই তিন শিক্ষার্থী গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতকোত্তর করতে এসেছেন। তাঁরা এখন বলেন, ‘“স্বপ্ন নিয়ে”র সেই লেখা আমাদের জীবন বদলে দিয়েছে।’

শুধু কি তাঁদের, জীবন তো আমারও বদলেছে। ২০১৯ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজে সম্মান শ্রেণি থেকে পাস করি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমের ধরন কিংবা সেশন জটসহ নানা কারণেই হতাশা পেয়ে বসছিল। কী করব, কী হবে—ভেবে দুশ্চিন্তা হতো খুব। তখন প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটি লেখা পড়েই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও দমে যাননি ইমরান’ শিরোনামের সেই লেখা ছিল আমার কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেনকে নিয়ে। আমার কাছে সেই লেখার কপি এখনো আছে।

কলেজে পড়ার সময় থেকেই ‘স্বপ্ন নিয়ে’ পাতায় জিআরই, টোয়েফলসহ নানা বিষয় নিয়ে ছাপা হওয়া লেখাগুলো পড়তাম। বিভিন্ন বৃত্তির খোঁজখবর পেতাম। অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার পর ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাই। শেষ পর্যন্ত টেক্সাস এ অ্যান্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়-কমার্সে ভর্তি হই। এখন পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স অব সায়েন্স ডিগ্রির জন্য পড়ছি। বিভাগের শিক্ষা সহযোগী হিসেবে কাজ করি। পাশাপাশি সহযোগী অধ্যাপক ড. হিগুয়েমেন পার্কের তত্ত্বাবধানে অর্গানিক সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে গবেষণা করছি। ভবিষ্যতে ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাটেরিয়াল সায়েন্সের ওপর পিএইচডি করার স্বপ্ন দেখি।