আলাপচারিতার সময় আমরা অজান্তেই এমন অনেক ভুল করে ফেলি, যা অন্যের মনঃকষ্ট বা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়
আলাপচারিতার সময় আমরা অজান্তেই এমন অনেক ভুল করে ফেলি, যা অন্যের মনঃকষ্ট বা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়

আলাপচারিতায় যেসব ভুল করলে নিজের ব্যক্তিত্বের ক্ষতি হয়

ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আপনি-আমি যত কথা বলেছি, সবটাই কি ‘ভালো’ কথা ছিল? আপনি হয়তো বলবেন, ‘আমি তো কখনো কারও খারাপ চাইনি।’ কিন্তু আপনার ভালো চাওয়াটাও যে সব সময় ভালো হিসেবেই প্রকাশ পেয়েছে, তা হয়তো নয়। আলাপচারিতার সময় আমরা অজান্তেই এমন অনেক ভুল করে ফেলি, যা অন্যের মনঃকষ্ট বা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু বিষয়—

কথার মাঝে কথা বলা

কথার মাঝে কথা বলা রীতিমতো অভদ্রতা। কারও কথার মাঝে আপনার হয়তো কোনো কথা মাথায় এল। মনে হলো, তাঁর কথা শেষ হতে হতে আপনি আপনার কথা ভুলে যাবেন। কিন্তু তারপরও মাঝপথে কথা বলে ফেলা উচিত নয়; বরং শোনার প্রতি মনোযোগী হোন। মনোযোগ দিয়ে শুনলে সেটির জবাব দেওয়া কিংবা যে কথা আপনার মনে হয়েছে, ওই ব্যক্তির কথা শেষে তা আবার মনে করে বলা—কোনোটাই কিন্তু কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়ায় না। অন্যের কথার মাঝে খুব জরুরি কোনো বিষয় মনে পড়লে কেবল তখনই তাঁকে বাধা দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও বাধা দেওয়ার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নেওয়া উচিত।

শুধু নিজের কথাই বলা, অতিরিক্ত কথা বলা

আপনি ক্রমাগত নিজের কথা বলতে থাকলে অপর পক্ষ বিরক্ত হতে পারে। একসময় তিনি আপনার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহও হারিয়ে ফেলতে পারেন। তাই অপরকেও বলার সুযোগ দিন। নিজের ব্যাপারে বলবেন কেবল ততটাই, যতটা বলা শোভনীয়। নিজেকে জাহির করার প্রয়োজন নেই। সব ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনাও নিষ্প্রয়োজন।

খুব কম কথা বলা, সবকিছুতেই ‘হ্যাঁ’ বলা

অন্যকে বলার সুযোগ তো অবশ্যই দেবেন; তবে নিজে একেবারে মুখ বন্ধ করেও থাকবেন না। অর্থাৎ এমন আচরণ করাও উচিত নয়, যাতে মনে হয় আপনি আর কথা বলতে চাইছেন না বা সব কথা এড়িয়ে যাচ্ছেন। আবার কারও সব কথাতে ‘হ্যাঁ’ বললেও কিন্তু আলাপচারিতা নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। তাই মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে নিজের বিবেচনাবোধ কাজে লাগান।

বারবার মুঠোফোন দেখা

মুখোমুখি আলাপচারিতার মাঝে বারবার মুঠোফোন দেখা খুব খারাপ অভ্যাস। মুখোমুখি আলাপের সময়ে মুঠোফোন সরিয়ে রাখুন। তবে আপনি যদি খুব জরুরি কোনো বার্তার অপেক্ষায় থাকেন, যে কারণে আপনাকে মুঠোফোন দেখতে হতে পারে, তাহলে সামনের মানুষটিকে তা জানিয়ে রাখুন। ফোন এলেও সামনের মানুষটির কাছে একটু সময় চেয়ে নিয়ে এরপর ফোনে কথা বলুন।

পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় না রাখা

সব কথা সব পরিবেশে বলতে নেই। আপনি হয়তো মজা করতে ভালোবাসেন। কিন্তু যেখানে কথা বলছেন, সেখানে মজা করাটা মানানসই না-ও হতে পারে। ধরে নেওয়া যাক, আপনি আর আপনার বন্ধু একই অফিসে কাজ করেন। অন্য সহকর্মীর সামনে বন্ধুকে মজার ছলে এমন কিছু বলবেন না, যা তাঁর খারাপ লাগতে পারে। তেমনিভাবে জীবনসঙ্গীর বদভ্যাসের কথাও অন্য কারও সামনে বলতে নেই।

নির্মম সত্য উচ্চারণ

কাউকে কোনো নির্মম সত্য কথা বলার আগে ভেবে দেখুন, আদৌ আপনার তাঁকে এই কথা বলা জরুরি কি না। ‘আমি যা বলি, সোজাসাপটা বলি’—এমন ভাবনা ঠিক নয়। আপনার কাছের মানুষ কোনো একটি বিষয়ের কারণে ভুক্তভোগী হতে পারেন বলে মনে হলে তাঁকে আপনি বিষয়টি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলতে পারেন। কিন্তু আপনার চেনাজানা সবাই আপনার কাছের মানুষ নন। তাই সবার সঙ্গে সব বিষয় নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। মনে রাখবেন, সবাই আপনার উপদেশ গ্রহণ করতেও প্রস্তুত নন এবং অনেকেই আপনার কথায় আঘাত পেতে পারেন। সব ক্ষেত্রে নিজেকে ঠিক প্রমাণ করতে তর্ক করাটাও উচিত নয়।

ব্যক্তিগত প্রসঙ্গের অবতারণা ও পরনিন্দা

অন্যের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলবেন না। বিয়ে, সন্তানধারণ, বিচ্ছেদ, চাকরিচ্যুতির মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। যাঁর জীবনে যা নেই, তাঁর সামনে বারবার সে বিষয়ে কথা বলবেন না। ধরুন, কারও বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে, তাঁর সামনে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বারবার নিজের সঙ্গীর প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকুন। তৃতীয় কোনো ব্যক্তির সমালোচনা করাও বাজে অভ্যাস। আপনি যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তিনি এমন কিছু বলতে চাইলে আপনি প্রসঙ্গ বদলে ফেলুন।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট