অনেক সময় খেয়াল করবেন, নতুন কাপড় ছিদ্র হয়ে গেছে। তখন মনে হয়, কেনার সময়ই কি এমন ছিল? নাকি কিছু লেগে ছিঁড়ে গেছে? ব্যাপারটা অনেক সময় ভুতুড়েও লাগে। তবে এর জন্য দায়ী আদতে পোকামাকড়। কিছু নিয়ম মেনে চললে আপনার প্রিয় পোশাকগুলো থাকবে পোকামাকড় থেকে মুক্ত—
কাপড় খেয়ে ফেলা পতঙ্গগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে মথ। তবে মথই একমাত্র কাপড় কাটা পতঙ্গ নয়। মথ যখন লার্ভা দশায় থাকে, তখনই কাপড়ের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। এ ছাড়া কাপড়ে ছিদ্র সৃষ্টি করা অন্য পতঙ্গগুলোর মধ্যে তেলাপোকা, গুবরেপোকা, ঝিঁঝিপোকা, সিলভারফিশ (ছোট পাখনাবিহীন পতঙ্গ, বইয়ের ভেতর অহরহ দেখা যায়) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব পতঙ্গ প্রধানত সুতি, লিনেন ও পশমি কাপড়ে আক্রমণ করে। খাওয়ার সময় খাবারের তেল-ঝোল ইত্যাদি কখনো কখনো পড়েই যায়। পোকামাকড় কাপড়ে লেগে থাকা এসব তেল-ঝোল, দেহের ঘাম, তেল, মৃত ত্বক ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট হয়। এ ছাড়া আলমারির যেসব পোশাক–আশাক দীর্ঘদিন পরা হয় না, সেসবেও পোকামাকড় বাসা বাঁধে।
সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বায়ুনিরোধী ক্লথ কনটেইনার ব্যবহার করা। ময়লা কাপড় পোকামাকড়ের খুব প্রিয়। শুধু ধোয়া কাপড়ই আলমারিতে রাখুন। পোকামাকড় ধুলাবালু আর নোংরা পরিবেশেই ঘর বাঁধে কিংবা বাস করে।
মথ দূর করতে সিডার ব্লক, শুষ্ক ল্যাভেন্ডার, ল্যাভেন্ডার অয়েল ইত্যাদি কার্যকর। পোকামাকড় দূর করার এসব উপাদান যতক্ষণ সতেজ থাকে, ততক্ষণই কার্যকর। শুধু তা-ই নয়, এসব উপাদানের কার্যকারিতার জন্য অবশ্যই কাপড় সংরক্ষণের স্থানটি বায়ুরোধী বা কনটেইনারের মুখটি বন্ধ রাখতে হবে।
কীটনাশক ছাড়াই তেলাপোকা দূরে রাখতে চাইলে বাড়িঘর সব সময় পরিষ্কার রাখুন। যেসব জানালা-দরজা ব্যবহার করা হয় না, সেসব বন্ধ রাখতে পারেন। ঘরের ভেতর ও বাইরে কোনো ফাটল দেখা দিলে সেটা বন্ধ করে দিন। দেয়ালের যেসব জায়গা দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইন ও পানির পাইপ গেছে, সেসব জায়গা ভালো করে বন্ধ করে দিন। প্লাম্বিং লাইনে কোনো ছিদ্র দেখা দিলে দ্রুত মেরামত করতে হবে। বাড়ির নোংরা-ময়লা, এদিক-সেদিকে পড়ে থাকা খাবারের টুকরা প্রতিদিন পরিষ্কার করুন। ময়লা কাপড়চোপড় দ্রুত ধুয়ে ফেলতে হবে। তেলাপোকা দূরে রাখতে বোর্যাক্স পাউডার বেশ কার্যকর। বোর্যাক্স পাউডারের সঙ্গে ৩: ১ অনুপাতে চিনি মিশিয়ে তেলাপোকা যেসব জায়গায় লুকিয়ে থাকে, সেসব জায়গায় ছিটিয়ে রাখতে হবে। এই মিশ্রণ ধীরে ধীরে কাজ করে। এ পদ্ধতিতে তেলাপোকা দূর করতে এক সপ্তাহ লাগতে পারে।
সতর্কতা: বোর্যাক্স পাউডার শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে। শিশুরা যেসব জায়গায় চলাফেরা বা খেলাধুলা করে, সেসব জায়গায় বোর্যাক্স পাউডার ব্যবহার করা যাবে না। কারণ, বোর্যাক্স পাউডার বিষাক্ত। এটি কেউ খেয়ে ফেললে শরীরে মারাত্মক বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।
ঝিঁঝিপোকার উপদ্রব থেকে বাঁচতে উচ্ছিষ্ট খাবার বাসায় জমিয়ে রাখা যাবে না। ঘরের ভেতর আর্দ্রতা সৃষ্টিকারী সব উপাদান দূর করতে হবে। ময়লা কাপড়চোপড় দ্রুত ধুয়ে ফেলুন। যেসব জানালা বা দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঝিঁঝিপোকা ঢুকতে পারে, সেসব বন্ধ রাখুন।
এসব পোকা দূর করতে ঘরের মেঝে বা আসবাবে লেগে থাকা খাবারের টুকরা এবং ঘরের ভেতর আর্দ্রতা সৃষ্টিকারী উপাদান দূর করতে হবে। অর্থাৎ বাড়িঘর নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করলে তাতে জমে থাকা ময়লা বাড়ির বাইরে ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিন অথবা একটি মুখবন্ধ কনটেইনারে ফেলুন। যেসব স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় এসব পোকা বাসা বাঁধে, সেসব জায়গার আর্দ্রতা শোষণের জন্য সিলিকা পাউডার ব্যবহার করতে হবে।
বাড়ির কোনো আলমারিতে উইপোকা বাসা বাঁধলে খুব দ্রুত পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। আলমারিগুলো উইপোকামুক্ত রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং ময়লা কাপড়চোপড় দ্রুত ধুয়ে ফেলুন। তবে বাসায় যদি একবার উইপোকার উপদ্রব শুরু হয়েই যায়, তাহলে আপনাকে অবশ্যই কোনো পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের (পেস্ট কন্ট্রোল) সাহায্য নিতে হবে।
প্রশ্ন: পোকামাকড় কেন কাপড় খায়?
উত্তর: পোকামাকড়, বিশেষত যখন লার্ভা দশায় থাকে, তখন উলের তৈরি পোশাকের কেরাটিন ও পশমি পোশাকের পশমগুলো থেকে প্রোটিন সংগ্রহ করে। কাপড়ে লেগে থাকা তেল-ঝোল, ঘাম, ত্বকের কোষ থেকে পোকামাকড় খাবার সংগ্রহ করে।
প্রশ্ন: কাপড় ধুয়ে কি পোকামাকড় দূর করা যায়?
উত্তর: জামাকাপড় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে রাখলে কিংবা ড্রাই ক্লিন করলে কাপড়ে বাসা বেঁধে থাকা পোকামাকড় মারা যায়।
সূত্র: দ্য স্প্রুস