মিষ্টিজাতীয় খাবার হিসেবে চকলেট পরিচিতি পায় স্প্যানিশদের হাত ধরে
মিষ্টিজাতীয় খাবার হিসেবে চকলেট পরিচিতি পায় স্প্যানিশদের হাত ধরে

বাংলাদেশে চকলেটের বাজার কত বড়

লাভ অ্যাট ফার্স্ট বাইট।

প্রথম দেখায় প্রেমের অনুভূতি যেমন, প্রথম কামড়ে মুখের ভেতর চকলেটের অনুভূতিও অনেকটা তা-ই। কিছুদিন আগেই অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সুখবরটা দিলেন। বাজারে সবকিছুর দাম যখন ছুটছে আকাশপানে, তখন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চকলেটের দাম কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক কমানোর ফলে চকলেটপ্রেমীরা সেই সুফলও পেতে শুরু করেছেন। এর মধ্যেই সাড়ম্বরে বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব চকলেট দিবস।

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মিষ্টান্ন নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়। নিঃসন্দেহে সেটি চকলেট। চকলেট বিশ্বব্যাপী এতটাই জনপ্রিয় যে ঘটা করে এটিকে উদ্‌যাপন করার জন্য বেশ কয়েকটা দিন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আজ ৭ জুলাই বিশ্ব চকলেট দিবস। ১৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক চকলেট দিবস। অন্যদিকে ২৭ জানুয়ারি অনেকেই ঘটা করে খান চকলেট কেক, কেননা সেদিন চকলেট কেকের দিন। এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ থেকে ১৪—প্রতিদিনই ভালোবাসা-সম্পর্কিত কোনো না কোনো দিবস আছে। এর মধ্যে ৯ ফেব্রুয়ারি পালন করা হয় চকলেট ডে। সেদিন চকলেটপ্রেমীরা নিজে খান বা না খান, প্রিয়জনকে চকলেট উপহার দিতে ভোলেন না। এই বিশেষ দিনে জেনে নেওয়া যাক চকলেট নিয়ে ঝটপট কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর।

কখন জনপ্রিয় হয়ে উঠল চকলেট

চকলেটের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও বিংশ শতকে বিশ্বায়নের প্রভাবে চকলেটের উৎপাদন ও জনপ্রিয়তা—দুই-ই বেড়ে যায়। চকলেটের উপকারিতা বা অপকারিতার পাশাপাশি এ সময় চকলেটে অতিরিক্ত আসক্তি নিয়েও গবেষণা শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে যুক্তরাজ্যে সাড়ে তিন শ মানুষের ওপর জরিপ করে দেখা যায়, পিৎজা বা বার্গারকে পেছনে ফেলে ভোক্তাদের কাছে চকলেটই বেশি জনপ্রিয়। সময়ের সঙ্গে সেই জনপ্রিয়তার পারদ বেড়েছে বৈ কমেনি।

ডার্ক চকলেট কী

চকলেটের মূল উপাদান হলো কোকোয়া। কোকোয়া গাছের ফলের বীজ থেকে তৈরি করা হয় কোকোয়া পাউডার। সেটি দুধ, চিনিসহ আরও নানা কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হয় চকলেট। যেসব চকলেটের ৭০ শতাংশ কোকোয়া দিয়ে তৈরি, সেগুলোকেই বলা হয় ডার্ক চকলেট। মূলত তৈরির প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে কোন চকলেটে কী পরিমাণ কোকোয়া থাকবে। চকলেটে কোকোয়া যত বেশি থাকবে, সেটি স্বাস্থ্যের জন্যও বেশি উপকারী হবে।

মনের সঙ্গে চকলেটের কী সম্পর্ক

ডার্ক চকলেট স্ট্রেস বুস্টার। মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে দারুণ কার্যকর ডার্ক চকলেট। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের গুণে সমৃদ্ধ। মনমেজাজ ভালো রাখতে দারুণ কাজে দেয়। এ ছাড়া এই চকলেটের মধ্যে আছে ফ্ল্যাভনয়েডস। এই বিশেষ উপাদান হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ডায়েটে ডার্ক চকলেট?

ডার্ক চকলেট খেলে দীর্ঘক্ষণ খিদে পায় না। কেননা, এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যানোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। এই উপাদান শরীরের জমে থাকা চর্বি পোড়াতে ওস্তাদ। আর ঠিক এ কারণেই ওজন কমানোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে ডার্ক চকলেটের। তাই অনেক ডায়েটেশিয়ানই নিয়মিত ডার্ক চকলেট খেতে পরামর্শ দেন।

ডার্ক চকলেটের কোকোয়া বীজের ফ্ল্যাভানল মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে পারে। ফলে ডার্ক চকলেট খেলে স্মৃতিশক্তি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়ক। ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। ডায়াবেটিসকেও দূরে রাখে। শরীরে ভালো, উপকারী কোলেস্টেরলের জোগান দেয় এটি। ডার্ক চকলেটের ভেতরে থাকা কিছু উপাদান ত্বককে সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এমনকি ত্বক ভালো রাখতে ডার্ক চকলেটের ফেসিয়াল প্যাকও ব্যবহার করেন অনেকে।

বাংলা সংস্কৃতির ঐতিহ্যের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না থাকলেও বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশেও চকলেট দারুণ জনপ্রিয়। কতটা জনপ্রিয়, সেটি জানতে হলে জানতে হবে বাংলাদেশে চকলেটের বাজার কত বড়।

প্রাণ কনফেকশনারির তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে গড়ে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার চকলেট বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই দেশি চকলেট। দেশি চকলেটের বাজারের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ রয়েছে প্রাণ কনফেকশনারির দখলে। তারা ২০০১ সালে প্রথম চকলেট নিয়ে আসে দেশের বাজারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের চুইংগাম, চকলেট বার, চকলেট বিন, স্প্রেড চকলেট, লিকুইড চকলেট, চকলেট টয়, সিরিয়াল বার, ক্যান্ডি, মার্শ-ম্যালো, ললিপপ—এগুলো তো আছেই।

প্রাণ কনফেকশনারির মার্কেটিং বিভাগের প্রধান সাখাওয়াত আহামেদ সাকি জানান, এই প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ৩৫ হাজার টন চকলেট বিক্রি করে। কনফেকশনারি ক্যাটাগরিতে তাঁদের ২৫টির মতো ব্র্যান্ড আছে। এগুলোর মধ্যে ট্রিট, ডিভাইনো, চকোলর্ড, প্রাণ লেয়ার, প্রাণ চকো চকো, প্রাণ ললিপপ, ফ্রুটফিল, এটম গাম, প্রাণ বাবল গাম, প্রাণ চকোবিন—এগুলোর চাহিদা ক্রেতাদের কাছে সবচেয়ে বেশি।

সাখাওয়াত আহামেদ বলেন, ‘প্রাণ কনফেকশনারি মার্কেটে এগিয়ে চলেছে সফলভাবে। এর কারণ, ‘আমরা প্রতিনিয়ত মার্কেট স্টাডি করে নতুন নতুন মানসম্মত পণ্য বাজারে আনি। এগুলো ভোক্তাদের চাহিদা ভালোভাবে মেটাতে সক্ষম। সেগুলো শহর থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতে পণ্যগুলোর যথেষ্ট সরবরাহ থাকে, সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। এ ছাড়া আমাদের সময়োপযোগী ব্র্যান্ড মার্কেটিং কার্যক্রম তো রয়েছেই।’