মোমবাতি নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে গভীর জীবনদর্শনের কথাটি লিখেছিলেন কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার (১৮৩৪-১৯০৭)। কমবেশি সবাই জানি অনবদ্য সেই নীতি-পঙ্ক্তি, ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি/আশুগৃহে তার দেখিবে না আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি’।
হালে মোমবাতির অত্যাবশ্যকীয় ব্যবহার প্রায় ফুরিয়েছে। তবে কদর একেবারে কমেনি। প্রয়োজনীয়তার ধরন বদলেছে, ব্যবহারে বৈচিত্র্য এসেছে। মোমবাতি যেন আমাদের কাছে ধরা দিয়েছে ভিন্নতর বিবিধ আবেদন নিয়ে। নেহাৎ মনের হরষে কিংবা প্রয়োজনে মোমবাতির ব্যবহার এখনো আছে। মোমের স্নিগ্ধ আলো বা সুগন্ধ কারও কারও কাছে বড় মোহন লাগে। যেমন কবি শামসুর রাহমান তাঁর ‘মোমবাতি’ কবিতায় লিখেছেন, ‘...মোমবাতি মহার্ঘ এখন, /তবু কিনি নিয়মিত; অন্ধকারে মোমবাতি জ্বেলে চুপচাপ/বসে থাকা ঘরে, /শিখাটির দিকে অপলক চেয়ে-থাকা কিছুক্ষণ’।
জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীর মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে–উৎসবে মোমবাতির উজ্জ্বল উপস্থিতি রয়েছে এখনো। কোনো ব্যক্তি বা বিশেষ ঘটনার স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করা হয়। বিদ্রোহে-প্রতিবাদে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন তো অহিংস পন্থা হিসেবে গোটা পৃথিবীতেই জনপ্রিয়। মোমবাতি জ্বালিয়ে বিভিন্ন শৈল্পিক অনুষ্ঠান উদ্বোধনের রেওয়াজ আছে। অন্দরসজ্জায় মোমবাতি ব্যবহার করেন শৌখিন মানুষজন। ঘরের গুমোট ভাব ও ভ্যাপসা গন্ধ দূর করতে সুগন্ধি মোমের ব্যবহার হামেশাই দেখা যায়। মশা-মাছি তাড়াতে সিট্রোনেলা মোমবাতি দারুণ কার্যকর। প্যান্ট বা ব্যাগের জিপার আটকে গেলে বা নষ্ট হলে তাতে মোম ঘষে ঠিক করে নেওয়া যায়। গোপনীয় নথিপত্র সিলগালা করতে মোম তো অনিবার্য উপকরণ। ঘড়ি আবিষ্কারের ইতিহাসেও মোমের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সূর্যঘড়ি, পানিঘড়ি, বালুঘড়ির মতো একসময় ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হতো মোমঘড়ি।
এসব হলো মোমবাতির বস্তুগত ব্যবহারের উদাহরণ। বিমূর্ত উপকারিতার দিকটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মোমের নরম আলো ও সৌরভ আমাদের মনস্তত্ত্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সুগন্ধযুক্ত মোমবাতির সুবাসের ধরন অনুযায়ী রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কার্যকারিতা। কোনোটি মানসিক চাপ কমায়, কোনোটি আবার ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক। মনোসংযোগ বাড়াতেও মোমবাতির প্রয়োজন হয়।
আজ ৭ ডিসেম্বর, মোমবাতি দিবস। ২০১৩ সালে ‘বাথ অ্যান্ড বডি ওয়ার্কস’ নামক একটি মার্কিন কোম্পানির উদ্যোগে দিনটির প্রচলন হয়। পালিত হয় ডিসেম্বর মাসের প্রথম শনিবার।
‘ডেজ অব দ্য ইয়ার’ অবলম্বনে