যোগচর্চা নিয়ে উৎসব

যোগচর্চা নিয়ে উৎসব

যোগব্যায়ামের নানা আসন তুলে ধরা হয় এই আয়োজনে
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

কখন, কী উপায়ে যোগব্যায়াম করলে প্রকৃত উপকার পাবেন, জানাতে গত শনিবার হয়ে গেল ‘ঢাকা ইয়োগা অ্যান্ড ওয়েলনেস ফেস্ট ২০২৩’। সাধারণ মানুষের কাছে যোগব্যায়াম প্রশিক্ষকদের কার্যক্রম তুলে ধরতে দেশের প্রায় ১৯টি যোগ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এতে অংশগ্রহণ করে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘সেল্ফ হিলিং হাব’। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হারুন, দীপ্ত টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী ফুয়াদ চৌধুরী, একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিনেত্রী জয়শ্রী কর ও সাধক অরূপ রাহী প্রমুখ।

ফুয়াদ চৌধুরী বলেন, বিদেশে ৯০ ঊর্ধ্ব মানুষদের মধ্যে যে এখনো এত প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়, তার কারণ যোগ এবং হিলিং ড্যান্স। তিনি আরও বলেন, মনে শান্তি আনে যোগ। স্কুলের বাচ্চাদের নিয়মিত ১০ থেকে ২০ মিনিট যোগব্যায়াম বাধ্যতামূলক করা উচিত। রাজনীতিবিদদেরও যোগব্যায়াম করার পরামর্শ দেন তিনি।

যোগব্যায়াম আর শরীর গঠনের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরতে গিয়ে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, চিত্ত প্রসন্ন না হলে, বুদ্ধিবৃত্তির জায়গা তীক্ষ্ণ না হলে দৈহিক কসরত করে কিছুই পাওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, সুস্থ থাকার জন্য মস্তিষ্ক ও চিত্তের মধ্যে যোগ থাকা দরকার। এতে নিজের সঙ্গে নিজের যোগাযোগ বাড়ে। যোগব্যায়াম করলে চারদিকের দূষণ থেকে ভালো থাকা যায়। বুড়ো বয়সে নাচানাচি করা গেলে নিঃসন্দেহে ভালো থাকা যায়।

‘হু ফাউন্ডেশন’–এর যোগাচার্য মুহাম্মদ কামরান তাঁর সুফি ঘরানার যোগকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করানো এবং ন্যাচারালপ্যাথির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ভারতীয় যোগী সদগুরুর ইশা ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক রুমা চৌধুরী সূর্যনমস্কার, অঙ্গমর্দন, ভূতশুদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরনের যোগব্যায়ামের তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। ছোট বড় সবার জন্যই যোগ—এই বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে ‘পশ দ্য সিক্রেট অব বিউটি অ্যান্ড হেলথ’–এর প্রতিষ্ঠাতা শারমিন ফারুকী এবং তাঁর ১০ বয়সী মেয়ে রোজ একসঙ্গে বিভিন্ন যোগব্যায়াম করে দেখান।

পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ফুয়াদ চৌধুরীর কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিচ্ছেন ‘ইয়োগমাইন্ড বাই ফারিয়ার স্বত্তাধিকারী এবং যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক ফারিয়া আতহার খান

চল্লিশের পরপরই আমাদের দেশের মেয়েরা নিজেদের গুটিয়ে ফেলেন। যাঁরা নিজের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ‘ইয়োগা উইথ নাইলা’র নাইলা বাশার নিজের উদাহরণ টেনে এনে বলেন, ‘আমি প্রায় পঞ্চাশোর্ধ্ব। আমার ফিটনেস আর সুস্থতার পেছনে আছে যোগ আর সুষম খাদ্যাভ্যাস।’

যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক ফারিয়া আতহার খান তাঁর ‘ইয়োগামাইন্ড বাই ফারিয়া’ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলেন, নিজের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য শুরু করলেও পরে এ বিষয়ে গবেষণা এবং পড়াশোনার ইচ্ছা জাগে। ভারতের বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত স্বামী বিবেকানন্দ ইয়োগা অনুসন্ধান সংস্থান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। সেখান থেকে যোগ থেরাপিতে মাস্টার্স করছেন।

ফারিয়া খান বলেন, কৈশোর থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব অনেকেই বিভিন্ন কারণে হতাশায় ভুগেন। যোগ শুধু শারীরিকই নয়, মানসিক হতাশাটা কাটিয়ে মন–মেজাজ সতেজ করে। ব্যস্ত জীবনে ধীরতা ও সুস্থতা আনতে আজকাল অনেক দম্পতিও বাচ্চাসহ তাঁর প্রতিষ্ঠানে যোগব্যায়াম করতে আসেন।

এ ছাড়া ‘দ্য ফিট অ্যান্ড ফান ইয়োগা অ্যান্ড ওয়েলনেস’–এর প্রতিষ্ঠাতা আয়েশা মুন্নি প্রায় ২২ বছর ধরে যোগ এবং ওয়েলনেস লাইফস্টাইলের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে প্রশিক্ষক হিসেবে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ম্যারাথন দৌড়ে রানার হিসেবেও অংশগ্রহণ করে অন্যদের সুস্থ থাকতে অনুপ্রাণিত করেন।

অনুষ্ঠানে আনন্দ ইয়োগা অ্যান্ড ওয়েলনেস ইনস্টিটিউশন, আর্ট আব লিভিং, জয়া নন্দি ইয়োগা অ্যান্ড ওয়েলনেস, কসমিক ইয়োগা, ফিট অ্যান্ড গ্লো ইয়োগা, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র, ত্রিনয়ন যোগ ইয়োগা, প্রশান্তি ইয়োগা, মাইন্ড বডি মেডিসিন ইয়োগা, মডার্ন ইয়োগা, গার্লস পাওয়ার, দা সিলভার মেথড অর্গানাইজেশনের উদ্যোক্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে সব অংশগ্রহণকারীদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। আয়োজক আহসান রাশিদ সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সেল্ফ হিলিং হাব বাংলাদেশের একমাত্র অনলাইন ইয়োগা লার্নিং প্ল্যাটফর্ম। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতেই আমাদের এই কার্যক্রম।’