৩২ বছর বয়সী কফি ব্লগার রুশ–মার্কিন ডিনা কালান্তা
৩২ বছর বয়সী কফি ব্লগার রুশ–মার্কিন ডিনা কালান্তা

যেভাবে এই কফি ব্লগার ৪ মিলিয়ন ডলারের মালিক হলেন

ইংরেজি গ্রামার পড়তে গিয়ে থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার নিয়ে কমবেশি সবাই ভুগেছি। বাক্যে থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বারের (যেমন He, She কিংবা কারও নাম) বেলায় ভার্ব বা ক্রিয়ার সঙ্গে ‘s’ বা ‘es’ যুক্ত হয়। এই ‘s’ অথবা ‘es’ না লেখার কারণে অহরহই ইংরেজি পরীক্ষায় নম্বর কাটা যেত। তাই এই থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার মানেই ছিল বিরক্তি। কিন্তু একজন ইংরেজিভাষীর কাছেও যে ব্যাপারটা আমাদের মতোই গোলমেলে, তা জানা ছিল না! জানলাম গত বছর একটি টিকটক ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর।

টিকটক ভিডিওটি ছিল একজন নারীর। সাদা পোশাক ও সাজগোজে আভিজাত্যের ছাপ। হাতে একটা নীল-সাদা রঙের সুন্দর কফি কাপ। ওই নারী ভিডিওতে বলেছিলেন, ‘আই হেট ভার্ব ইন ইংলিশ। আই ড্রিংক কফি, ইউ ড্রিংক কফি, বাট হি ড্রিংকস কফি। হোয়াই?’

ছোট্ট মজার এই ভিডিও দেখার পর স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহল হলো—কে এই টিকটকার? ইংরেজি শেখান নাকি? না, এই ডিডিওটি যিনি বানিয়েছেন, তাঁর নাম ডিনা কালান্তা, তিনি মোটেও ইংরেজির শিক্ষক নন। ৩২ বছর বয়সী রুশ–মার্কিন ডিনা মূলত কফি ব্লগার, এখন থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। অপ্রচলিত আর অদ্ভুত সব কফি ককটেলের রেসিপি দিয়ে অন্তর্জালে তিনি দারুণ জনপ্রিয়। পৃথিবীর জনপ্রিয় কফি ব্লগারদের একজন বলা হয় তাঁকে। টিকটকে তাঁর অনুসারী ৬১ লাখ এবং ইনস্টাগ্রামে ১২ লাখ (১৭ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত)।

ডিনা কেন এত জনপ্রিয়

ডিনার কফির রেসিপিগুলো সত্যিই অদ্ভুত। তাঁর বাচনভঙ্গি, শরীরী ভাষাসহ পুরো উপস্থাপনাই মজার। কফি তো অনেক খেয়েছেন জীবনে, কিন্তু স্ট্রবেরি–নুটেলা কফি কি কখনো খেয়েছেন? শুনতে অদ্ভুত লাগলে দেখে নিতে পারেন ডিনার স্ট্রবেরি–নুটেলা কফির রেসিপি। একটা ছোট্ট স্ট্রবেরি কেটে তার ভেতর নারকেলের দুধ, চকলেট, কফি আর হুইপড ক্রিম দিয়ে বানানো এই কফি ডিনার ভাষ্যে তাঁর আর সব রেসিপির মতোই ‘পারফেক্ট’। স্ট্রবেরি লাতের রেসিপিটাও কাছাকাছি; ওতে শুধু চকলেট থাকে না।

টিকটকে ডিনা কালান্তারের অনুসারী ৬১ লাখ

ডিনা কখনো কফি বানান ড্রাগন ফ্রুট গর্ত করে ভেতরে মধু, কফি আর নারকেলের দুধ মিশিয়ে। কখনো ঢাউস আকারের মিষ্টিকুমড়ার মধ্যেই কফি বানিয়ে খান। বাদ যায় না তরমুজও। বড়সড় একটা তরমুজ কেটে পুদিনাপাতা, কমলার রস, স্ট্রবেরি আইস ও স্ট্রবেরি সিরাপ দিয়ে ক্যামেরার সামনেই বানিয়ে ফেলেন ওয়াটারমেলন লাতে। তাঁর এমন অদ্ভুত সব রেসিপির মধ্যে আরও আছে কোকোচিনো, সুগারকেইন কফি, সুইট পটেটো কফি, কমলার ভেতর গোলাপজল, কফি আর স্ট্রবেরি আইস দিয়ে তৈরি রোজ কফি...এমন আরও অনেক কিছু। পরিচিত ফলগুলোর মধ্যে এমন কোনো ফল বাকি নেই, যা দিয়ে ডিনা কফি বানিয়ে দেখাননি। তাঁর বানানো কফি খেতে কোনো কাপ বা মগেরও দরকার হয় না। ফলগুলোর মধ্যে স্ট্র ডুবিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে চুমুক দেন ডিনা।

আরও যা করেন

রেসিপি ছাড়াও ডিনা কফিসংক্রান্ত মজার মজার ভিডিও পোস্ট করেন। যেমন হঠাৎ করে কফি শেষ হয়ে গেলে মনটা কেমন লাগে? লোকে বলে, টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় না। কিন্তু ডিনার মতে, তারা মিথ্যা বলে। টাকা দিয়ে কফি কেনা যায়, কফি খেলে মানুষ সুখী হয়—এই ছিল তাঁর ওই ভিডিওর বক্তব্য। এমনই সব মজার ভিডিও বানিয়ে টিকটক অ্যাড রেভিনিউ, ব্র্যান্ড কোলাবরেশন, ইনস্টাগ্রামে স্পনসর্ড কনটেন্ট ইত্যাদি থেকে ডিনা অর্থ উপার্জন করেন। সেই সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকটক এবং ইনস্টাগ্রাম কনটেন্ট–বিষয়ক কয়েকটি কোর্স এবং টিউটোরিয়ালও বিক্রি করেন। বড় বড় কিছু ব্র্যান্ডের সঙ্গেও ডিনা চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করেছেন। ২০২৩ সালে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল আনুমানিক ৪ মিলিয়ন ডলার।

ডিনার সাফল্যের সূত্র

২০২১ সালের ১৮ জুন প্রথমবারের মতো টিকটক ভিডিও আপলোড করেছিলেন ডিনা। কম সময়ের মধ্যে পেয়ে যান জনপ্রিয়তা। শুধু কফি ভালোবেসেই যে ডিনা এত দূর এসেছেন, তা নয়। তাঁর আছে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের ওপর ৯ বছরের অভিজ্ঞতা। দুই শর বেশি প্রকল্পে ব্যক্তিগত পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন।

২০২৩ সালে ডিনার সম্পদের পরিমাণ ছিল আনুমানিক ৪ মিলিয়ন ডলার।

তাঁর মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আপনাকে টাকা এনে দেবেই দেবে। আপনার পেশা বা শখ যা-ই হোক না কেন, আপনি যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় হন, তাহলে আপনার সমসাময়িক অন্যদের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি আয় করতে পারবেন। ডিনার কথা হলো, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় হওয়ার সঙ্গে মেধা, ভাগ্য বা সুযোগের কোনো সম্পর্ক নেই। আপনাকে শুধু জনপ্রিয় হওয়ার সূত্র অর্থাৎ সঠিক মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি জানতে হবে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর অ্যালগরিদম সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে।’

সূত্র: ডিনা কালান্তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট, ফেমাস বার্থডেজ ও জ্যাকজনসন ডটকম