ক্যাম্পাসে একটি ব্যাচের বিদায়ী অনুষ্ঠান হবে আর ‘পুরোনো সেই দিনের কথা’ বাজবে না, তা কি হয়? সেই অলিখিত নিয়ম মেনেই গিটারের সঙ্গে গান ধরেছিলেন ইয়াসিন অনি। ‘বাজিয়ে বাঁশি, গান গেয়েছি, বকুলের তলায়’ গাইতে গাইতে কি একটু আনমনা হয়ে গেলেন? এই চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) প্রাঙ্গণেই কত গান গেয়েছেন, আয়োজন করেছেন উৎসব। তবে এবারের উৎসবটা অন্য রকম।
চুয়েটে চলছে ২০১৭ ব্যাচের সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি। এবারের আয়োজনের শিরোনাম—সংবর্ত ১৭।
শিক্ষা সমাপনীর আয়োজনটিই চুয়েট ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় উৎসব। করোনার কারণে গত তিন বছর এ আয়োজন হয়নি। এবার তাই মহা উদ্যমে চলছে প্রস্তুতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরের পাশে কেউ আঁকছেন বাহারি আলপনা, কেউ ব্যস্ত নাচের মহড়ায়, কেউ আবার গাইছেন গান। শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী হুমায়রা মেহজাবীন বললেন, ‘দেয়ালিকা, র্যাগ হাট, আলপনা, সব প্রস্তুত। এখন শুধু অপেক্ষা।’
সব ঠিক থাকলে হুমায়রার অপেক্ষা অবশ্য দীর্ঘ হওয়ার কথা নয়। ২৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে উৎসব। চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
আগের দুই ব্যাচের কোনো শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান যেহেতু হয়নি, তাই নতুনদেরও এ আয়োজন দেখার সুযোগ হয়নি। এত দিন শুধু গল্প শুনেছেন তাঁরা। এবার উৎসবে শামিল হওয়ার সুযোগ হবে বলে প্রথম-দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাও ভীষণ খুশি। সানোয়ার শিমুল নামের এক শিক্ষার্থী বললেন, ‘ক্যাম্পাসে আসার পর থেকেই এই উৎসবের কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু দেখার সুযোগ হয়নি। এবার উৎসব হবে জেনে, অনুষ্ঠানসূচি দেখে এরই মধ্যে মনে মনে আমার রুটিন সাজিয়ে ফেলেছি।’
শুধু নবীনেরা নয়, আসবেন প্রাক্তনেরাও। প্রাক্তনদের মধ্যে অনেকেই দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের কাছে পৌঁছে গেছে নিমন্ত্রণপত্র।
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের আতাহার মাসুম বললেন, ‘শিক্ষা সমাপনী উৎসব চুয়েটিয়ানদের জন্য অনেক আবেগের। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় প্রায় সব প্রস্তুতির পরও শেষ মুহূর্তে এসে আমাদের “পূর্ণয় ১৫” নামের আয়োজনটি করা হয়নি। এবার জুনিয়রদের সঙ্গে আমরাও স্মৃতি রোমন্থন করতে চাই।’
বিকেলে ক্লাস-ল্যাব যখন শেষ, তখনই কয়েকজন নেমে পড়েন ক্যাম্পাসের রাস্তাগুলো আলপনা করার কাজে। কেউবা ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) চলে যান নাচ, গান, মূকাভিনয় কিংবা নাটকের অনুশীলন করতে। সবার মধ্যেই কাজ করছে বিশেষ আগ্রহ, আবেগ। গোলচত্বরে আলপনার কাজে ব্যস্ত, স্থাপত্য বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী খন্দকার মাহাদি জানালেন, আগেও স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন উৎসবে আলপনার কাজ করেছেন। তবে এবার সবকিছুই হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে। আলপনায় থাকছে বিশেষ আকর্ষণ। ২০১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পুরো ক্যাম্পাসজীবন বিভিন্ন আলপনায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন তাঁরা। এ ছাড়া বিদায়ী ব্যাচের ৭১১ জন শিক্ষার্থীর নাম আলপনায় যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বিকেলের সূর্যের লাল কিরণ যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরের ভাস্কর্যটার ওপরে পড়ছে, ঠিক তখন নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর একটি বাঁশের ঘরে আড্ডা দিতে দেখা গেল কয়েকজনকে। ঘরটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘র্যাগ হাট’। প্রতিবারই শিক্ষা সমাপনী উৎসবের সময় বিদায়ী ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এ রকম র্যাগ হাট তৈরি করেন। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফারজিয়া আহমেদ বলেন, ‘দেড় মাস আগে এই উৎসবের সূচনাপর্বেই বুঝেছিলাম, বিরাট একটা কিছু আসছে! চার দিনের উৎসব শেষ হবে কনসার্ট দিয়ে।’
পুরো আয়োজন নিয়ে বেশ আশাবাদী এবারের উৎসবের আহ্বায়ক আশিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘গত ডিসেম্বর মাসেই ফ্ল্যাশমব, মশাল মিছিল, কনসার্ট, আতশবাজির মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছিলাম। চুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বিদায়ী ব্যাচের “গ্র্যাজুয়েশন ডিনার”–এর আয়োজনও থাকছে এবার, যা আগে ছিল না। ওয়ারফেজ, নেমেসিস, আর্কসহ দেশের নামী ব্যান্ডগুলোর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আশা করছি জমজমাট একটা কনসার্ট হবে।’