কম্পিউটারবিজ্ঞান–সংক্রান্ত গবেষণায় অভিনব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ফেলোশিপ দেয় গুগল। এ বছর সম্মানজনক এই পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন তাঁর অভিজ্ঞতা
একটা সময় ছিল, ‘গুগল’ বললে শুধু গুগলের সার্চ ইঞ্জিনটির কথাই লোকের মাথায় আসত। তবে এখন মোটামুটি সবাই-ই জানেন, বিশ্বখ্যাত এই টেক জায়ান্টের ব্যাপ্তি কত বড়। ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি–দুনিয়ার গতিপথও অনেকাংশে নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানটির ওপর।
কম্পিউটারবিজ্ঞান নিয়ে যাঁরা অভিনব কোনো কাজ বা গবেষণা করছেন, তাঁদের একটি বিশেষ ফেলোশিপ দেয় গুগল। যাকে বলা হয় ‘পিএইচডি ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড’। ২০০৯ সাল থেকে তারা এই পুরস্কার দিয়ে আসছে। একদিকে ফেলোশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিয়ে আর ভাবতে হয় না, অন্যদিকে স্টাইপেন্ড (উপবৃত্তি) হিসেবে দেওয়া হয় প্রায় ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার, টাকার অঙ্কে সংখ্যাটা ৩৮ লাখের বেশি। ফেলোশিপপ্রাপ্তরা যেন গবেষণা আরও জোরদার করতে পারেন, সে জন্য একজন মেন্টরও (পরামর্শক) নিয়োগ করা হয় গুগলের পক্ষ থেকে।
এ বছর আমি এই ফেলোশিপের জন্য মনোনীত হয়েছি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আজ বলব, কেন ফেলোশিপটি গুরুত্বপূর্ণ। যাঁরা এই ফেলোশিপ পেতে চান, তাঁদেরই–বা কী করণীয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) আমি পড়ালেখা করেছি কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশলে (সিএসই)। ২০১৭ সালে স্নাতক শেষ করে নিজ বিভাগেই শিক্ষক হিসেবে যোগ দিই। আর ২০২০ সালে বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর ২০২১ সালে চলে আসি যুক্তরাষ্ট্রে। এখন কম্পিউটারবিজ্ঞানে পিএইচডি করছি ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টারে। এখানকার ‘রচেস্টার হিউম্যান কম্পিউটার ইন্টারেকশন ল্যাব’-এ চলছে আমার কার্যক্রম।
আমার কাজ মূলত মেশিন লার্নিং ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে। বিশ্বের একটা বড় সংখ্যক মানুষ (বিশেষ করে যাঁরা বয়স্ক) বিভিন্ন ধরনের মুভমেন্ট ডিজঅর্ডার বা চলনশক্তি–সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত। এসব রোগের না আছে সহজ নির্ণয়পদ্ধতি, না আছে সহজ প্রতিকার। বাংলাদেশ, ভারতসহ অনেক দেশেই জনসংখ্যার তুলনায় এই রোগের চিকিৎসক এত কম যে অনেক রোগী জানেনও না যে তাঁরা এই রোগে আক্রান্ত। আর রোগনির্ণয়ে দেরি হয়ে গেলে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায় অনেক গুণ।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে এসব রোগ নির্ণয় করা যায়, তা নিয়েই এখন গবেষণা করছি। ধরুন, আপনি ঘরে বসেই কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করে কয়েকটি ভিডিও রেকর্ড করলেন। এবার এসব ভিডিও আমাদের ওয়েবসাইটে তুলে দিলেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বলে দেওয়া হবে, আপনার মুভমেন্ট ডিজঅর্ডারজনিত কোনো সমস্যা আছে কি না। এ রকম একটি প্রযুক্তি পাল্টে দিতে পারে ভবিষ্যৎ চিকিৎসাপদ্ধতি, প্রভাব ফেলতে পারে কোটি মানুষের জীবনে। কাজের নতুনত্ব, গুরুত্ব এবং সমসাময়িকতা চিন্তা করেই গুগল এই গবেষণাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
গুগল ফেলোশিপ খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও সম্মানজনক এক স্বীকৃতি। ২০২২ সালে যেমন সারা বিশ্ব থেকে ৭৪ জনকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল। ফেলোশিপটি পেতে হলে ভালো শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিনব ও প্রভাবশালী একটি ধারণা (আইডিয়া) ঠিকঠাকভাবে উপস্থাপনের সক্ষমতা, কঠোর পরিশ্রম থেকে শুরু করে খানিকটা ভাগ্যের সহায়তাও দরকার।
পিএইচডি অধ্যয়নরত যে কেউ গুগলের এই ফেলোশিপের জন্য আবেদন করতে পারেন। পুরো প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করতে হয় অনলাইনে। তবে আপনি বাংলাদেশের বাইরে পড়াশোনা করলে আবেদনের প্রক্রিয়া একটু ভিন্নও হতে পারে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে মনোনীত করলেই আপনি আবেদন করতে পারবেন। বিস্তারিত নিয়মকানুন পাবেন গুগলের ওয়েবসাইটে।
গুগল পিএইচডি ফেলোশিপে আবেদনের জন্য আপনার সিভিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, গবেষণা অভিজ্ঞতার পাশাপাশি গবেষণাপত্র প্রকাশের বিস্তারিত উল্লেখ থাকতে হবে। সিভি আকর্ষণীয় হলে শুরুতেই আপনি অন্যদের চেয়ে আলাদা গুরুত্ব পাবেন। পিএইচডির বাকি সময়ে আপনি কী নিয়ে গবেষণা করতে চান, সেই গবেষণা ব্যক্তি ও সমাজকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, গবেষণায় আপনার লক্ষ্য কী—এ ধরনের বিষয়গুলো উল্লেখ করে প্রায় আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রস্তাব (রিসার্চ প্রপোজাল) লিখতে হবে।
গবেষণা প্রস্তাবটি ফেলোশিপ আবেদনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তাই লেখার আগে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী, গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক (সুপারভাইজার) কিংবা আগে যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের পরামর্শ নিতে পারেন। ভালো প্রস্তাবনা লিখতে অনেক ঘষামাজা করতে হয়। তাই ডেডলাইনের অনেক আগেই লেখা শুরু করে দিন। এসবের সঙ্গে দরকার হবে তিনটি সুপারিশপত্র (রিকমেন্ডেশন লেটার)। আপনি যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন, সম্ভব হলে সেই বিষয়সংশ্লিষ্ট সুপরিচিত অধ্যাপকদের কাছ থেকে সুপারিশপত্র সংগ্রহ করতে চেষ্টা করুন।
একজন গুগল ফেলো হতে চাইলে আপনাকে আগের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে প্রস্তাবিত গবেষণাটি সম্পন্ন করার সামর্থ্য আপনার আছে। এ জন্য কম্পিউটারবিজ্ঞানের স্বীকৃত জার্নাল কিংবা সম্মেলনে খুব ভালো কিছু প্রকাশনা, আর সঙ্গে স্বীকৃত অধ্যাপকদের সুপারিশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই বিদেশি অধ্যাপকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে খুবই ভালো। আর সেই সুযোগ না থাকলে দেশেই ভালো শিক্ষকদের সঙ্গে নিত্যনতুন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মৌলিক গবেষণা করে তার ফলাফল নামী কোনো সম্মেলন বা জার্নালে প্রকাশ করতে চেষ্টা করুন। যত আগে থেকে গবেষণার কাজে নিজেকে যুক্ত করবেন, আপনার সিভি তত শক্তিশালী হবে এবং বড় বড় অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস আর লক্ষ্য ঠিক রেখে চেষ্টা চালিয়ে গেলে আপনিও এই ফেলোশিপ পেতেই পারেন।
একজন গুগল ফেলো হতে চাইলে আপনাকে আগের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে প্রস্তাবিত গবেষণাটি সম্পন্ন করার সামর্থ্য আপনার আছে। এ জন্য কম্পিউটারবিজ্ঞানের স্বীকৃত জার্নাল কিংবা সম্মেলনে খুব ভালো কিছু প্রকাশনা, আর সঙ্গে স্বীকৃত অধ্যাপকদের সুপারিশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই বিদেশি অধ্যাপকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে খুবই ভালো। আর সেই সুযোগ না থাকলে দেশেই ভালো শিক্ষকদের সঙ্গে নিত্যনতুন ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মৌলিক গবেষণা করে তার ফলাফল নামী কোনো সম্মেলন বা জার্নালে প্রকাশ করতে চেষ্টা করুন। যত আগে থেকে গবেষণার কাজে নিজেকে যুক্ত করবেন, আপনার সিভি তত শক্তিশালী হবে এবং বড় বড় অধ্যাপকের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস আর লক্ষ্য ঠিক রেখে চেষ্টা চালিয়ে গেলে আপনিও এই ফেলোশিপ পেতেই পারেন।